১৮ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ১১:০৫

দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি

দুজনের মৃত্যু - স্যালাইনের তীব্র সংকট - রোগীর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বারান্দায়

করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। হাসপাতালের বেডে জায়গা নেই। রোগীরা ঠাঁই নিয়েছেন হাসপাতালের মেঝেসহ আশপাশের বারান্দায়। অনেকে করোনায় সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালে আসছেন না। এদিকে বাইরের ফার্মেসিগুলোতে চড়া দামে কলেরা স্যালাইন বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বেতাগী (বরগুনা) : বেতাগীতে শনিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মোকামিয়ার কাইয়াল ঘাটা গ্রামের নুরুল ইসলাম (৭০) ও বেতাগী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের চন্দ ভানু (৬০) নামে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ১২৫ জন ডায়রিয়া রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০১ জন। ভর্তি আছেন ২৪ জন। প্রতিদিনই ২০-২৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই মুহূর্তে হাসপাতালে কলেরা ও খাবার স্যালাইনের সংকট না থাকলেও দু-এক দিনের মধ্যে মজুত শেষ হয়ে যাবে বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নে ২৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি বাড়িতে অবস্থান করছেন। বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. তেন মং বলেন, ঋতু পরিবর্তন ও দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে কয়েক দিন ধরে লোকজন ডায়রিয়া ও পেটের পীড়াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, মানুষকে সচেতন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বরিশাল : বরিশালে হু হু করে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জনবল ও স্থান সংকট, আইভি স্যালাইনের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন দ্রুত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতাল কম্পাউন্ড, মেঝে ও সিঁড়িতেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই বাইরে প্যান্ডেল করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ এভাবে বাড়তে থাকলে অস্থায়ী প্যান্ডেলেও স্থান সংকুলান হবে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক-সেবীকাসহ কর্মরতরা। জানা গেছে, চলতি মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭০৯ জন। প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতাল কম্পাউন্ড ও অস্থায়ী প্যান্ডেলে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৫০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই প্যান্ডেলেও স্থান সংকট দেখা দেবে।

বাউফল (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর বাউফলে কলেরা স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাইরের ফার্মেসি থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর জন্য কলেরা স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। এই সুযোগে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চড়া দামে কলেরা স্যালাইন বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন রোগী বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোরে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। আর আউটডোরে গড়ে দুই হাজার রোগী ডায়রিয়ার চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। প্রতিদিন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বেড না পেয়ে বাউফল হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন অনেকে। সাধারণ রোগীরা হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

চরফ্যাশন (ভোলা) : চরফ্যাশনে ২৪ ঘণ্টায় শতাধিক ডায়রিয়ার রোগী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভন কুমার বসাক ৮৫ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তির তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়াও চরফ্যাশন বে-সরকারি হাসপাতালে প্রায় ২০ জন ভর্তি রয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/412657/