১৮ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ১১:০৫

বিমানের বিশেষ ফ্লাইট

প্রথম দিনেই শিডিউল বিপর্যয়

বিশেষ ফ্লাইট চালুর প্রথম দিন (শনিবার) ১২টি এয়ারলাইন্সের ১৪টি ফ্লাইটের মধ্যে সাতটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। সৌদি আরবের অনুমতি না পাওয়া ও যাত্রী কম থাকায় এসব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরানোর উদ্যোগ। লকডাউনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিমানবন্দরে এসে অনেকে শোনেন ফ্লাইট বাতিলের খবর। এতে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষের পথে তারা পড়েছেন বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে। এই পরিস্থিতিতে বিমানবন্দর ও কাওরান বাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা।

বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সের রিয়াদগামী ফ্লাইট (বিজি-৫০৩৯) সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে এয়ারলাইন্সের নির্দেশনা অনুসারে ছয় ঘণ্টা আগে রাত ১টার মধ্যেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রাতেই প্রবাসীকর্মীরা বিক্ষোভ করেন। পরবর্তীতে এসব যাত্রীকে হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করে বিমান। এদিন বিমানের পাঁচটি ফ্লাইট ছিল। এর মধ্যে চারটি বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের দাম্মামে একটি, রিয়াদে একটি, দুবাইয়ে দুটি ফ্লাইট। তবে রাতে সৌদি আরবে জেদ্দাগামী ফ্লাইট বাতিল করেনি বিমান। তারা সৌদি আরবে অনুমতির আশায় রয়েছে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিমান জানিয়েছে জেদ্দা ফ্লাইটের যাত্রীদের চেকইন শেষ। সৌদি আরব থেকে এখনো খারাপ কোনো সংবাদ আসেনি।

এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবগামী যাত্রীদের তোপের মুখে পড়তে হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দিনভর চলে এ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। তাদের অভিযোগ-বিমান সঠিক সময়ে ফ্লাইট চালানোর অনুমতি নিতে পারেনি। অন্যদিকে বিমান বলছে ঢাকায় বসে করার কিছু নেই।

চেকইন করার সময় হঠাৎ শেষ মুুহূর্তে সৌদি আরব থেকে খবর আসে বিমানের ফ্লাইটের শ্লট (বিমান পরিচালনার অনুমতি) বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে ফ্লাইটের সব প্রস্তুতি থাকার পরও শেষ মুহূর্তে বাতিল করতে হয়। প্রথম দিন (শনিবার) অন্তত সাতটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। বিমানের রিয়াদ, দাম্মাম, দুবাই ও সিঙ্গাপুর ফ্লাইট বাতিল করায় শত শত যাত্রী আটকা পড়ে বিমানবন্দরে। তবে সন্ধ্যা ৬টায় বিমানের জেদ্দা ফ্লাইটের প্রস্তুতি চলছিল। এর আগে সকালে শুধু সালাম এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে দুবাই গেছে। রাতে ফ্লাই দুবাই, ইউএস বাংলা ও রিয়াদ ফ্লাইটেরও শিডিউল ছিল।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে গিয়ে হাজির হন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ও পররাষ্ট্র সচিব ড. মাসুদ বিন মোমেনসহ অন্য কর্মকর্তারা। তারা বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বসে দীর্ঘ বৈঠক করেন। পরবর্তী ফ্লাইটের শ্লট যাতে ঠিক থাকে সেজন্য তৎপর থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

বৈঠক শেষে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ও পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএস তৌহিদ উল আহসান বিমানবন্দরের দোতলায় ৬নং গেটের সামনে জড়ো হওয়া ক্ষুব্ধ যাত্রীদের সামনে পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বিমান কিংবা ঢাকার কোনো গাফিলতি নয়, সৌদি আরবের হঠাৎ শ্লট বাতিলের কারণে সব কিছু ভণ্ডুল হয়ে গেছে।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘বিমানের একটি ফ্লাইট সৌদি আরবে ল্যান্ডিং পারমিশন না পাওয়ায় বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও যাত্রী সংকটের কারণে দুবাইয়ের দুটি এবং সৌদির দাম্মামের একটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এসব ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা মাত্র ২০-২২ জন। আমরা বলেছিলাম ফ্লাইট চলাচল বন্ধের নির্দেশনার কারণে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীরা টিকিট পরিবর্তন করে এসব ফ্লাইটে যেতে পারবেন। তবে আমরা যাত্রী পাইনি।’

এছাড়া ফ্লাই দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইটও বাতিল হয়েছে। ইউএস বাংলা দুবাইগামী একটি ফ্লাইট বাতিল করেছে। তবে সালাম এয়ার ঢাকায় এসে যাত্রী নিয়ে গেছে। ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সপ্তাহে ৯টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দুবাই, সাতটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে মাসকাট, চারটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দোহা ও একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরে পরিচালনা করা হবে। তবে প্রথম দিনে দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। মাত্র ২০ জনের মতো যাত্রী পাওয়া গেছে। এখানে শুধু যাত্রী থাকলেই হচ্ছে না, করোনা টেস্টের রিপোর্টও লাগবে। লকডাউনে অনেকে আসতেও পারছেন না। সব মিলিয়ে যাত্রী সংকট আছে।’ বিমান সূত্র জানায়, শনিবার সৌদি আরবে বিমানের আরও কিছু ফ্লাইট যাওয়ার কথা ছিল এবং সেগুলোও বাতিল করা হয়। অবতরণের অনুমতি না পাওয়া ও যাত্রী সংকটের কারণে ৭টি বিশেষ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। রিয়াদের উদ্দেশে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে বিমানের ফ্লাইটটি (বিজি-৫০৩৯) উড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসে সেটি বাতিল করা হয়। কারণ হিসাবে বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, যে সময়ে তারা বিশেষ ফ্লাইটের জন্য নতুন সময়সূচি ঘোষণা করেছে সে সময়ে রিয়াদের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি। ফ্লাইটটি বাতিল হওয়ায় ৩১৪ জন যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন।

তারা জানান, সব নিয়ম মেনে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদসহ বিমানবন্দরে এসেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার রাত ২টার দিকে তাদের বলা হয় যে, ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল-আহসান জানান, ল্যান্ডিং পারমিশন পেতে বিলম্ব ও যাত্রী স্বল্পতায় ফ্লাইটগুলো বাতিল করা হয়েছে। আশা করি রোববারের (আজ) মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। ফ্লাইটও বাড়বে।

এদিকে টিকিটের জন্য শনিবার সকাল থেকেই কাওরান বাজারের সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয় ও বিমানের মতিঝিল কার্যালয়ে ভিড় করতে থাকেন প্রবাসীরা। মতিঝিলে প্রবাসীদের চাপের কারণে একপর্যায়ে টিকিট বিক্রি সাময়িক স্থগিত রাখে বিমান। মতিঝিলে অপেক্ষায় থাকা শরীয়তপুরের নাজির মোহাম্মদ নামে এক যাত্রী জানান, বিমানের ১৫ এপ্রিলের ফ্লাইট ছিল তার। তবে ফ্লাইট বন্ধের কারণে যেতে পারেননি। ফ্লাইট চলাচল শুরুর সংবাদ শুনে মতিঝিলে এসেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।

এছাড়া সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের টিকিটের দাবিতে কাওরান বাজার সড়ক অবরোধ করেন যাত্রীরা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবরোধ চলে।

সৌদি প্রবাসীদের অভিযোগ, লকডাউনের কারণে নির্ধারিত সময়ে তারা ফিরতে পারছেন না। এর মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকার কথা জানানো হয়। পরে ১৫ এপ্রিল এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে শনিবার থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে প্রায় ১০০টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সৌদি এয়ারের ফ্লাইট শুরু আজ : সৌদি আরবগামী যেসব যাত্রীরা ১৪ এপ্রিল থেকে ফ্লাইট মিস করেছেন তাদের জন্য আজ থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু করা হবে। শনিবার বেলা ২টার দিকে সৌদি এয়ারলাইন্সের প্রধান শাখার ম্যানেজার জাহিদুল আমিন প্রবাসীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৪ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত যারা যারা ফ্লাইট মিস করেছেন বা যেতে পারেননি তাদের প্রত্যেককে সৌদি আরবে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। আজ থেকে ১৪ তারিখের যাত্রীদের ফ্লাইট শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৫ এপ্রিলের টিকিট সোমবার (১৯ এপ্রিল), ১৬ এপ্রিলের টিকিট মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল), ১৭ এপ্রিলের টিকিট বুধবার (২১ এপ্রিল) এবং ১৮ এপ্রিলের টিকিট বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) দেওয়া হবে। ১৯ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ফ্লাইটের সৌদি যাত্রীদের পরবর্তীতে তারিখ জানানো হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/412644