১৮ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ১১:০২

চড়া সুদে বিশ্বব্যাংক থেকে আরো ২৫ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হচ্ছে

অনেকটা চড়া সুদে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ২৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। সুদ, সার্ভিস চার্জ ও কমিটম্যান্ট চার্জসহ এই ঋণের সুদের হার হবে আড়াই শতাংশ। এর আগে একই ধরনের সুদে আরো ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই ঋণ প্রাপ্তির জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত বাংলাদেশকে পরিপালন করতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ নতুন ব্যবসা শুরু এবং পরিচালন করার জন্য ৩৫টি মূল নিয়ন্ত্রক সেবাপ্রক্রিয়া সুবিন্যস্ত করে একত্র করা। নতুন শুল্ক আইন কার্যকর করার মাধ্যমে বাংলাদেশে সিঙ্গেল উইন্ডোর কার্যক্রম শুরু করতে আইনি বিধান গ্রহণ এবং পরিবেশগত এবং সামাজিক মান এর সঙ্গে সঙ্গতি নিশ্চিত করার জন্য ‘কি অ্যাসেসমেন্ট গাইডলাইন’ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন- অন্যতম।

এই ঋণের বিষয়ে বলা হয়েছে, দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ‘থার্ড প্রোগ্রামেটিক জবস ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের (ডিপিসি) আওতায় বিশ্বব্যাংক ২৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে। তবে এ ঋণ পেতে বেশ কিছু বিষয় নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হবে।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবিত ঋণের ক্ষেত্রে আইডিএ (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সি) রেগুলার টার্মস প্রযোজ্য হবে। ঋণটি ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে এবং সুদের হার হবে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ, সার্ভিস চার্জ শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং অনুত্তোলিত অর্থের ওপর কমিটমেন্ট চার্জ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, এই ঋণের একটি কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ ও পরিবেশ তৈরিসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টসহায়ক কিছু নীতি কৌশল/ বিধিবিধান সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগ ও সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ২০১৮-১৯ থেকে তিনটি অর্থবছরে মোট ৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের ডিপিসি ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়।

এই ডিপিসি ঋণের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৫ কোটি মার্কিন ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের ডিপিসি-২ এর আওতায় আরো ২৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রস্তাবিত ডিপিসি-৩ এর আওতায় বাকি ২৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ বিশ্বব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ডিপিসি-৩ এর আওতায় কোভিড-১৯ জনিত ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কয়েকটি সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে, যা শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার ক্ষয়ক্ষতি রোধসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।
জবস ডিপিসি-৩ এর আওতায় ৩টি স্তম্ভের মাধ্যমে বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি, শ্রমবাজার উন্নয়ন এবং মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হবে।

স্তম্ভ ‘ক’তে বলা হয়েছে, ‘বিনিয়োগ ও ব্যবসাবাণিজ্যের পরিবেশ আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রচলিত তৈরী পোশাক খাতের বাইরে বেসরকারি বিনিয়োগের সামগ্রিক পরিবেশের উন্নতির মাধ্যমে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করা হবে। তৈরী পোশাক খাতের গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে বাংলাদেশের সুসংহত অবস্থানের কারণে গত দুই দশকে প্রায় ৪০ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে যার একটি বড় অংশ মহিলা শ্রমিক। তৈরী পোশাক খাতের বাইরে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ তৈরি করতে পণ্য ও বাজার উভয় ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এসব খাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক বিধিনিষেধের কারণে কাক্সিক্ষত ফল লাভ করা যাচ্ছে না।
স্তম্ভ ‘খ’: শ্রমিকদের সুরক্ষা ও অভিঘাত মোকাবেলায় সক্ষমতা জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। এতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের সার্বিক সুরক্ষা বাড়াতে এবং কোভিড-১৯ ও এর ধরনের ভবিষ্যৎ সঙ্কট সরকারের সুরক্ষা বেষ্টনী শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ শ্রমিক এখনও যথাযথ পেশাগত সুরক্ষামান এবং সামাজিক বীমা ছাড়াই অলিখিত চুক্তিতে কাজ করে। বিশেষত যারা সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতাবহির্ভূত, সেসব আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ একটি বড় বিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ জন্য শ্রম নিবিড় রফতানি খাতের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের উপার্জন রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্ত অনানুষ্ঠানিক শ্রমিকদের আর্থিক সেবা দেয়ার ব্যবস্থা (যেমন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ) গ্রহণ; কোভিড-১৯ এবং ভবিষ্যৎ সঙ্কট প্রশমনে সরকারের সুরক্ষা বেষ্টনীর সক্ষমতা বাড়াতে নীতি এবং কর্মসূচির নির্দেশিকা প্রণয়ন এবং শ্রমিকদের সুরক্ষায় শ্রমবিধি এবং মানসমূহ কার্যকর করার জন্য সরকারি খাতের সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরো বলা হয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের সক্ষমতা বাড়িয়ে বর্তমান কোভিড-১৯ এর অভিঘাত মোকাবেলা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয়সহ ভবিষ্যৎ সঙ্কট প্রশমনে স্তম্ভ ‘খ’ সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।
স্তম্ভ ‘গ’: পিছিয়ে পড়া/দুস্থ জনগোষ্ঠীর অধিক হারে প্রবেশ নিশ্চিত করতে নীতি ও কর্মসূচি উন্নয়ন : এতে ডিপিসি-১ এবং ডিপিসি-২ এর অধীন গৃহীত মূলনীতিগুলোর কার্যকর প্রয়োগ কর্মসূচিগুলো এবং সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করবে যা যুবক, যুবমহিলা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণের প্রবেশাধিকার সহজ করা অপরিহার্য। স্তম্ভ ‘গ’ এর মাধ্যমে কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশ ত্যাগের আগে এবং ফিরে আসার পর সরকারি সেবাগুলো গ্রহণ সহজীকরণ; যুব, যুবমহিলা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের প্রাসঙ্গিক ও সমন্বিত দক্ষতা বাড়ানো; মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো এবং দিবা যতœ কেন্দ্রের লাইসেন্সিংসহ অন্য সেবাগুলোকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ কর্মসূচির অর্থায়নচুক্তি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দলিলাদির ওপর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নেগোসিয়েশন হয়েছে। নেগোসিয়েশনের পর ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের আগে নেগোসিয়েটেড দলিলগুলোর ওপর লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং নেয়া হয়। ঋণটি বিশ্বব্যাংকের গত ২৬ মার্চ তারিখে জবস ডিপিসি-৩ এর অনুকূলে ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থায়ন অনুমোদন করেছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/576367