লকডাউনের কারণে চার দিন পর শুক্রবার রাজধানীর গুলিস্তানে ফুটপাতে দোকান খুলে বসেন হকাররা - প্রতিবেদক
১০ এপ্রিল ২০২১, শনিবার, ১:২২

'আগে পেটের চিন্তা'

সরেজমিন রাজধানীর ফুটপাত

লকডাউনের কারণে টানা চার দিন পর রাজধানীর গুলিস্তানের ফুটপাতে দোকান খুলে বসেছিলেন হকার মো. জনি। এতে তিনি খুশি হলেও শঙ্কায় আছেন কবে আবার কঠোর বিধিনিষেধ আসে। বললেন, 'আমরা দিনের কামাই দিনে খাই। ফুটপাতের ওপরই নিজের পেট, সংসারের খরচ চালাতে হয়। ঘরে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, অসুস্থ মা-বাবা। সবই চলে ছোট্ট দোকানের ওপর। মরণের আগে আমাদের পেটের কথা চিন্তা করতে হয়।'

জনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ক্রেতা একেবারেই কম, বিক্রি টুকটাক। তারা ফুটপাতে জামা, কাপড়সহ যেসব পণ্য বিক্রি করেন সেগুলো নিত্যপণ্য নয়। মানুষ চাল, ডাল, লবণ, সবজি কেনার পর এখানে আসে। আর মানুষ এখানে এলে তাদের জীবন চলে। স্বল্প আয়ের মানুষের কথা ভেবে সরকার যেন আর লকডাউনের ঘোষণা না দেয়- তিনি সেই দাবি জানান।

চলমান লকডাউনে ফুটপাতের লাখ লাখ হকার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, সব জায়গার ফুটপাতের হকাররা দোকান খুলেছেন। চার দিন পর দোকান খুলতে পেরে তারা খুশি। সবাই কিছু না কিছু বিক্রি করেছেন। তবে বিক্রি আগের মতো নয়। তারা জানালেন, লকডাউনের আগে বহু মানুষ বাড়ি চলে গেছেন। তারা ফিরে এলে ও দোকান খুলে রাখার সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকলে ক্রেতার ভিড় বাড়বে।

হকারদের কেউ কেউ জানালেন, আগামী মঙ্গলবার থেকে কড়া লকডাউন দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এ কারণে তাদের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এ কারণে সব ধরনের ব্যবসাতেই মন্দাভাব। হকাররা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান।

ঢাকা কলেজের বিপরীতে গ্লোব শপিং সেন্টারের সামনের ফুটপাতের হকার মো. টিপু বলেন, 'চার দিন পর দোকান খুলেই আবার লকডাউনের আতঙ্কের মুখে পড়েছি। লকডাউন চলতে থাকলে আমরা বেঁচে থাকতে পারব না। আমরা লকডাউন চাই না। আমরা কাজ করে আমাদের জীবন বাঁচাতে চাই।'

গাউছিয়াসংলগ্ন নূর ম্যানশনের সামনের ফুটপাতের হকার মো. সেন্টু বলেন, 'আজকে প্রথম দিন, ক্রেতা কম, কয়েক পিস জামা বিক্রি করেছি। ক্রেতা আসতে কিছুটা সময় লাগবে।' গাউছিয়া শপিং কমপ্লেক্সের সামনের ফুটপাতের হকার আবদুল কুদ্দুস জানান, 'আমরা গরিব মানুষ, আমরা নিত্তি আনি নিত্তি খাই। সরকার দোকান খুলে দিয়েছে, তাতে আমরা খুশি। সামনে রোজা, ঈদ- এখনই ব্যবসার মূল সময়। আবার লকডাউন ডাকা হলে চলার কোনো উপায় থাকবে না।

আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান চালাব। সরকার যেন আমাদের এই সুযোগ দেয়।'

গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, মৌচাক, নয়াপল্টন, গুলিস্তান, ফার্মগেট, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, মতিঝিল, গুলশান, বনানী, বারিধারা, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটিসহ সব জায়গার ফুটপাতের দোকান খোলা ছিল। চারদিন পর দোকান খুলতে পেরে তারা বেশ সন্তুষ্ট। কোথাও কোথাও ক্রেতার বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

সরকার সকাল ৯ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান খুলে রাখার অনুমতি দিলেও নির্ধারিত সময় শেষেও হকারদের বিক্রির জন্য ক্রেতা ডাকতে দেখা গেছে। গুলিস্তানের হকার মো. জনি জানালেন, তারা রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান খুলে রাখার সুযোগ চান। গুলিস্তানের হকার মো. মোরশেদ বললেন, লকডাউনের আগে যারা নিজেদের গ্রামে চলে গেছেন তারা ফিরে এলে বিক্রি বাড়বে। জানালেন, গতকাল টুকটাক বিক্রি হয়েছে। আবারও লকডাউন দেওয়া হলে জীবন শেষ হয়ে যাবে।

https://samakal.com/capital/article/210458398/