১০ এপ্রিল ২০২১, শনিবার, ১:২০

যাওয়া-আসায় পজিটিভ

করোনা আক্রান্ত যাত্রী যাওয়ায় কোরিয়াতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা

করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও বিদেশ থেকে করোনা পজিটিভ রোগী আসছে দেশে। আবার নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশ গিয়েও অনেকের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছে। করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে গত দুই মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করা অনেক বাংলাদেশিকে পরে সেখানে পরীক্ষা করার পর তারা ‹করোনা পজিটিভ› হিসেবে ধরা পড়েছে। এতে করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশের জন্য বাংলাদেশিরা ভিসা সংক্রান্ত নতুন নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে। স¤প্রতি ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের এক নোটিশের প্রেক্ষিতে এ উদ্বেগ আরো জোরালো হয়েছে। অন্যদিকে, বিদেশ থেকে আগতরা বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টিন মানতে চাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে লেবানন থেকে আসা যাত্রীরা কোয়ারেন্টিনের প্রতিবাদে বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই বিপাকে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের পূর্বশর্ত হচ্ছে ‘কোভিড-১৯ নেগেটিভ’ সনদ নিয়ে আসা। প্রতিদিন বিমানবন্দর দিয়ে হাজার হাজার প্রবাসী এভাবেই দেশে ফিরছেন। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, গত ৬ এপ্রিল সকালে ওমানের মাস্কাট থেকে আসা একজন যাত্রী কোভিড-১৯ পজিটিভ সনদ নিয়েই বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। তিনি সালাম এয়ারের ওভি-৩৯৭ ফ্লাইটে করে দেশে আসেন। ওই ফ্লাইটে তার সঙ্গে আরও প্রায় ১৫০ যাত্রী ছিলেন। ওই যাত্রী কোভিড-১৯ পজিটিভ সনদ নিয়ে ঘুরেছেন মাস্কাটের বিমানবন্দর, চেক-ইন, ইমিগ্রেশনসহ সংবেদনশীল সব জায়গায়। বাংলাদেশে এসে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ডেস্কের দীর্ঘ লাইনে। ৩০ মিনিট লাইনে দাঁড়ানোর পর হেলথ ডেস্কের কর্মকর্তা দেখেন তিনি করোনায় আক্রান্ত। রিপোর্টও তাই বলছে। ডেস্কে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সরল স্বীকারোক্তিও দেন ওই যাত্রী। অতঃপর তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ৫ এপ্রিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাশিয়া থেকে আসা ২৬০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। এছাড়াও সেদিন সউদী আরবের জেদ্দা থেকে ঢাকায় আসা এক যাত্রীর শরীরে করোনা ধরা পড়ে। পরে ওই যাত্রীকে ব্যক্তিকে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৪ এপ্রিল যুক্তরাজ্য থেকে আসা ২৭৫ যাত্রীকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে এবং ২ এপ্রিল ১৩ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ৩ এপ্রিল আগত সবাইকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন দেওয়া হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, আগতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও করোনা টেস্টের কাগজগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যারা আসছেন তাদের নিজ খরচে সরকার নির্ধারিত হোটেলে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়াও যারা একটু কম স্বচ্ছল তাদের হজক্যাম্পে সরকারি খরচে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেখানে যাত্রীকে নিজের খাবারের খরচটা বহন করতে হবে।

এদিকে, করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশ গিয়ে পজিটিভ হচ্ছেন অনেক যাত্রী। করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে গত দুই মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করা অনেক বাংলাদেশিকে পরে সেখানে পরীক্ষা করার পর তারা ‹করোনা পজিটিভ› হিসেবে ধরা পড়েছে। এ নিয়ে কোরিয়া দূতাবাস একটি নোটিশ জারি করেছে। ওই নোটিশে লেখা হয়েছে, সা¤প্রতিক সপ্তাহগুলিতে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার কারণে, বাংলাদেশে প্রজাতন্ত্রের কোরিয়া দূতাবাস সংক্রমণ এড়াতে কোরিয়া সফরের পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশিদের কাছে জানতে চাইবে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কিনা। এই বিষয়ে, দূতাবাস দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে যে, ২০২১ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে কোরিয়ায় প্রবেশের প্রক্রিয়া চলাকালীন ‹কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট› থাকা স্বত্তে¡ও বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসের শেষে সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে যা কোরিয়ান কর্তৃপক্ষের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।› নোটিশে কোরিয়ায় প্রবেশের দুই সপ্তাহ আগে থেকে অন্য যে কারো সাথে যোগাযোগ এড়াতে বলা হয় এবং করোনার লক্ষণ থাকলে ভ্রমণ পরিকল্পনা পরিবর্তন করতেও বলা হয়।

গত বছরের জুন মাসে বাংলাদেশিদের জন্য অনির্দিষ্টকাল কোরিয়ান ভিসায় স্থগিতাদেশ এবং ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ আট মাস পর গেলো ফেব্রæয়ারি মাসে যা তুলে নেয়া হয়।

এদিকে, গতবারের মতো এবারও বিদেশফেরত যাত্রীদের সঠিকভাবে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে না। এতে করে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। জানা গেছে, গত ২০ মার্চ সিলেটের হোটেল ব্রিটানিয়া থেকে এক পরিবারের নয় সদস্য কোয়ারেন্টিন অবস্থায় পালিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান। ১৮ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসেন মা ও ছেলে। কোয়ারেন্টিনে থাকতে তারা লা ভিস্তা হোটেলে ওঠেন। দুদিন পরেই সেই হোটেলে অর্ধশতাধিক অতিথিকে দাওয়াত করে এনে বিয়ে করেন সেই ছেলে। বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীরা দেশে এসে ঠিকভাবে কোয়ারেন্টিন পালন করলে ফ্লাইট বাতিলের প্রয়োজন হতো না। কেউই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে যেতে চান না। তারা বলেন হোম কোয়ারেন্টিনে যাবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি হোম কোয়ারেন্টিনও কোনও প্রবাসী মানেননি। এখন ফ্লাইট বাতিল ছাড়া বিকল্প নেই।

যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হলে ১ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের সঙ্গে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলেও ১৪ দিনের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন। পরে ১৫ জানুয়ারি ৪ দিন ও পরে ৭ দিনের কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে ২৯ মার্চ দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা দেয় সরকার। সেখানে বলা হয়, বিদেশ ফেরত যাত্রীদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। পরের দিন ৩০ মার্চ শুধু যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের যেকোনও দেশ থেকে এলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা জারি করা হয়। তবে ৩১ মার্চ আসে নতুন নির্দেশনা। তাতে বলা হয়, যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ এবং আরও ১২টি দেশ থেকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ। ওই ১২টি দেশ হচ্ছে, আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, ব্রাজিল, চিলি, জর্দান, কুয়েত, লেবানন, পেরু, কাতার, সাউথ আফ্রিকা, তুরস্ক ও উরুগুয়ে। ৩ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা অনুসরণ করেই যাত্রী পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি ভালো হলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। পরিস্থিতি বুঝে ফ্লাইট কমানো কিংবা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে।

https://www.dailyinqilab.com/article/372563/