১০ এপ্রিল ২০২১, শনিবার, ১:১৯

আতঙ্কে হাত গুটিয়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা

মিটফোর্ড হাসপাতালে রোগীদুর্ভোগ চরমে

রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে রোগী ভর্তি, চিকিৎসা ও সব ধরনের অস্ত্রোপচার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি সন্তান প্রসব করাতে আসা মায়েদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম বিপাকে পড়ছেন। হাসপাতালটিতে আইসিইউ বেড পেতে দুবার করোনা নেগেটিভ সনদ দেখানোর বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তাদের অসংখ্য কর্মী আক্রান্ত হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তবে যেসব রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ তাদের ভর্তি করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ৯শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটির ১১টি বিভাগে প্রতিদিন তিন শতাধিক নতুন রোগী ভর্তির সুযোগ পায়। আর ভর্তি হওয়া রোগীদের জটিল অস্ত্রোপচার হয় অন্তত ৫০টি।

কিন্তু গত ১ সপ্তাহ ধরে হাসপাতালটিতে কোনো নতুন রোগী ভর্তি ও অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে না। এ কারণে দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা এসে চরম বিপাকে পড়ছেন এবং ফিরে যাচ্ছেন।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে সাহিনুর নামে একজন মা সন্তান প্রসব করাতে বৃহস্পতিবার সকালে জরুরি বিভাগে আসেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি না করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

স্বজনরা তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু পথেই প্রসব বেদনা ওঠে। উপায় না পেয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ওই নারীকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানে সন্তান প্রসব করেন ওই নারী।

বুকের ব্যথা নিয়ে আসেন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা রুবেল। তিনি বলেন, তাকে এক্স-রে করতে পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পরে পুরান ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক্স-রে রুমের সামনে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, এক্স-রে মেশিন নষ্ট।

নূর জাহান বেগম নামে নোয়াখালী থেকে আসেন এক রোগী। আগে থেকে অস্ত্রোপচারের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যান। তিনি বলেন, ভর্তিতো দূরের কথা, ডাক্তাররা কথাও বলতে নারাজ। এখন এ লকডাউনের ভেতর দেশে কিভাবে ফিরব বুঝতে পারছি না।

হাসপাতালটির আউটডোরের চিকিৎসায়ও ঢিলেঢালা ভাব। নতুন ভবনের নিচ তলায় মেডিসিন, গাইনি, ও নাক কান গলা বিভাগসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেবা প্রদান করার কথা থাকলেও চিকিৎসকদের অনেকেই অনুপস্থিত।

যারা আছেন তারাও রোগীদের কাছে ভিড়তে দিচ্ছে না। দূর থেকে রোগীর কথা শুনে ব্যবস্থাপত্র লিখছেন কেউ কেউ। আউটডোর অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসকের চিকিৎসকদের খোশগল্প করতে দেখা যায়। তারা রোগীদের ভেকরে ঢুকতে দিচ্ছে না। বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ব্যাবস্থাপত্র দিচ্ছেন।

চিকিৎসা নিতে আসা অনেকের অভিযোগ-চিকিৎসকরা কাউকে পাত্তাই দেন না। সেবা বঞ্চিতরা প্রতিবাদ করলে শিক্ষানবিশদের দিয়ে মারধরের হুমকি দেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ১৯ জন ডাক্তারসহ ৪০ জন কর্মী করোনা আক্রান্ত। এরমধ্যে এক জন টেকনেশিয়ান বুধবার রাতে কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা গেছেন।

এ কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। রোগী ভর্তি ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা এড়িয়ে চলছেন।

জানতে চাইলে মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অসীম চক্রবর্তী বলেন, করোনার প্রকোপ ও লকডাউনের কারণে রোগীর উপস্থিতি খুবই কম। আবার হাসপাতালে কর্মরত অসংখ্য চিকিৎসক ও স্টাফ করোনায় আক্রান্ত। তার ওপর আইসিউ বেড কম।

অন্যান্য রোগীর নিরাপত্তার স্বার্থে দুবার নেগেটিভ সনদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রোগীর সেবা দিতে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। তবে কোভিড আতঙ্কের কারণে সেবা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। সবাইকে ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি অনুধাবনের আহ্বান জানাচ্ছি।

জানতে চাইলে মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশীদ উন নবী বলেন, একান্তই জরুরি না হলে কোনো রোগী ভর্তি বা অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।

তবে জরুরি হলে কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বুধবার আমাদের এখানে অন্তত ১০টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সংকট রয়েছে। তবে কোনো রোগীর প্রতি অবহেলা দেখানোর সুযোগ নেই।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/410358