৯ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ৩:১০

করোনায় একদিনে ৭৪ মৃত্যু আরও ভয়ঙ্কর অবস্থার আশাঙ্কা

আরও ৮০০ শয্যা বৃদ্ধির চেষ্টায় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়

স্টাফ রিপোর্টার : দেশে একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ৭৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একইসঙ্গে শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৬৮৫৪ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এখবর দেয় সংস্থাটি। এদিকে বিশ্বে ২৪ ঘন্টায় ১৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর দুঃসংবাদ পাওয়া গেছে। চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনায় মৃত্যু এবং আক্রান্ত অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর ওপর যে হারে চাপ বাড়ছে, তাতে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা সেবাই ভেঙে পড়বে। ক্রমেই আরও ভয়ঙ্কর অবস্থার তৈরি হবে। এদিকে করোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার আরও ৮শ’ শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন এতথ্য জানান।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে দেশে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৭৪ জন। এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে দেশে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ৬৬ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৮৫৪ জন। এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ এবং মৃত্যু ৯ হাজার ৫২১ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৯১ জন, এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৩০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ মার্চ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে করোনা শনাক্ত হন ৫ হাজার ১৮১ জন, সেই রেকর্ড ভেঙে ৩১ মার্চ শনাক্ত হন ৫ হাজার ৩৮৫ জন। ১ এপ্রিল ফের শনাক্ত দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪৬৯ জন। ২ এপ্রিল দাঁড়ায় ৬ হাজার ৮৩০ জন। এরপর ৪ এপ্রিল সব রেকর্ড ভেঙে সাত হাজার ছাড়িয়ে একদিনে শনাক্ত হন ৭ হাজার ৮৭ জন। মঙ্গলবার শনাক্ত হন ৭ হাজার ২১৩ জন। এর পরদিন বুধবার শনাক্ত হন ৭ হাজার ৬২৬ জন; এখন পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ শনাক্ত।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩২৮টি, অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৩ হাজার ১৯৩টি। এখন পর্যন্ত ৪৯ লাখ ১৫ হাজার ৭৫৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং মৃত্যু হার এক দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৪৮ জন পুরুষ এবং নারী ২৬ জন। এখন পর্যন্ত পুরুষ ৭ হাজার ১৩০ জন এবং নারী মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৩৯১ জন।

বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৬০ ঊর্ধ্ব ৪৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৫ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।

বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই মারা গেছেন ৪৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৪ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ জন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭০ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন ৪ জন।

এদিকে ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস। বিশ্বের বিভিন্ন জনপদে চরম আতঙ্ক ও মৃত্যুর বিভীষিকা ছড়িয়েছে ভাইরাসটি। বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৯ লাখ এবং আক্রান্ত হয়েছে ১৩ কোটি ৩৬ লাখের বেশি মানুষ।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার ৫৬৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৯ লাখ ৯০৯ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার ৮৩ জন। করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৪৯ জনের।

আক্রান্তে ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৩১ লাখ ৯৭ হাজার ৩১ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ৪১ হাজার ৯৭ জন। আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৬১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৮৯২ জনের।

আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে ফ্রান্স রয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ লাখ ৪১ হাজার ৩০৮ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯৭ হাজার ৭২২ জন। আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৬ লাখ ৬ হাজার ১৬২ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ এক হাজার ৪৮০ জন।

এদিকে আক্রান্তের তালিকায় যুক্তরাজ্য ষষ্ঠ, ইতালি সপ্তম, তুরস্ক অষ্টম, স্পেন নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে আরও ৭০০ থেকে ৮০০ শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সচিব এ কথা জানান। গত ৪ এপ্রিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নতুন সচিব নিয়োগ পান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।

লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমার আজকে মাত্র তৃতীয় দিন। গতকাল সারাদিন আমাদের মিটিং ছিল। সেদিন উত্তর সিটি করপোরেশনে এক হাজার ২৫০ বেডের হাসপাতাল হচ্ছে, সেখানে প্রায় আড়াইশ’ আইসিইউ থাকবে। এটা অচিরেই উদ্বোধন হবে।

তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমি হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গিয়েছিলাম। সেখানে আরও ২০০ বেডের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা পর্যায়ক্রমে বক্ষব্যধি হাসপাতালসহ অন্যান্য স্থানে ৭০০ থেকে ৮০০ বেড বৃদ্ধি করার চেষ্টা করব। ‘ সচিব বলেন, ‘আপনারা সীমাবদ্ধতার কথা জানেন, সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সম্পৃক্তরা সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করছে। টিকা কার্যক্রম চলমান আছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করবেন মন্ত্রী মহোদয় ও ডিজি হেলথ।

টিকার বিকল্প উৎস খুঁজে পেয়েছেন কি-না প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘সব চলছে, সব প্রচেষ্টা চলতেছে, ইনশাআল্লাহ। এসময় তিনি সবাইকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।

https://dailysangram.com/post/449007