৭ এপ্রিল ২০২১, বুধবার, ২:৫৯

এ অবস্থায় বইমেলা আত্মঘাতী

আগত দর্শনার্থীদের ভাষ্য

বইমেলায় ক্রেতা নেই। নেই আগের মতো দর্শনার্থী। হাতেগোনা আগতরা বলছেন, লকডাউন এবং বইমেলা দু’টি একসাথে চলতে পারে না। করোনা মোকাবেলায় লকডাউনে সব বন্ধ রেখে বইমেলা চালিয়ে যাওয়া ‘অযৌক্তিক ও আত্মঘাতী’। তাদের মতে যোগাযোগ বন্ধ রেখে বইমেলা চালিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের প্রশ্ন এমন অবস্থায় পাঠকরা বইমেলায় আসবেন কিভাবে?

প্রকাশকরা বলছেন, বাংলা একাডেমির খামখেয়ালির কারণেই ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দিয়েছে মেলা চলবে, আমরা কনটিনিউ করছি। ব্যাপারটি এমন হয়ে গেছে যে, মেলা চলবে তাতে প্রকাশক থাকলে থাকুক, না থাকলেও সমস্যা নেই। কারণ প্রকাশকদের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই বইমেলা চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে যে উদ্দেশ্যে বইমেলা আয়োজন করা হয়েছে, তা পূরণ হচ্ছে না। প্রকাশকদের ভাষ্য, তারা ভেবেছিলেন বইমেলা হলে করোনা পরিস্থিতিতে বই বিক্রির ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল, সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সেই সুবিধা প্রকাশকেরা এখন পর্যন্ত পাননি।

এ বিষয়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, আমাদের সুযোগ-সুবিধা বা অসুবিধা কিছু আছে কি না, সে ব্যাপারেও কিছু জানতে চায়নি মেলা কর্তৃপক্ষ। আমাদের সাথে কোনো মিটিং করেনি এবং আমাদের কোনো পরামর্শও তারা নেয়নি। তারপরও মহামারী পরিস্থিতিতে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই মানতে হবে। এখানে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই। তবে এ অবস্থায় মেলা চালিয়ে নেয়া হলে, যে আর্থিক সঙ্কটে পড়বেন প্রকাশকরা তা কাটিয়ে উঠতে সরকারি প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা জানান, প্রকাশকরা মেলা চালু রাখতে চেয়েছিলেন বলেই মেলা চলছে। এখন তারা যদি তা কনটিনিউ করতে না চান তবে লিখিত আবেদন করলে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাব। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তাই কার্যকর হবে।

গতকাল মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী ছিল না বললেই চলে। হাতেগোনা দুয়েকজন ক্রেতা-দর্শনার্থীকে মেলাপ্রাঙ্গণে ঘুরতে দেখা গেছে অধিকাংশ স্টল-প্যাভিলিয়নই ছিল ক্রেতাশূন্য। বেশ কিছু স্টল এদিন বন্ধ রাখতেও দেখা যায়। অধিকাংশ স্টল-প্যাভিলিয়নে বিক্রয় কর্মী ছিল সীমিত, স্টলের একপাশে বই প্রদর্শন করা হলেও অন্যপাশ বন্ধ রাখা হয়।

বিক্রেতারা বলছেন, বইমেলাটা এই রকম পরিস্থিতিতে হোক এটা তারা চান না। চলমান পরিস্থিতিতে বইমেলা খোলা রাখার কোনো যুক্তি তারা দেখছেন না। গণপরিবহন বন্ধ, মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। এমন অবস্থায় বইমেলা চালু রাখার কোনো মানে হয় না। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটা কাজ। মানুষ না এলে স্টল খোলা রাখা কী দরকার? এ অবস্থায় সারা দিনেও একজন ক্রেতা পাওয়া যায় না। এক দর্শনার্থীর মতে, লকডাউন দিয়ে জনসাধারণকে বলা হচ্ছে, আপনারা ঘরে থাকুন, অপর দিকে বইমেলা চালু রাখা হয়েছে। বিষয়টা অস্বস্তিকর ও সাংঘর্ষিক। আরেকজন জানান, একুশের বইমেলার সাথে লকডাউনের আমেজ উপভোগ করতেই তারা মেলায় এসেছেন। কারণ ঘোরার জন্য এটা এখন নিরিবিলি উপযুক্ত জায়গা। গতকাল মেলায় কথা প্রকাশ নিয়ে এসেছে ঝরনা রহমানের জলপরী ও নূহের নৌকা, ডা: কামরুল আহসান বার্ধক্যের রোগ ও যতœ, মাসুদ খোন্দকার ও মো: আতাউর রহমানের ইসলাম ও কূটনীতি এবং উৎস প্রকাশন নিয়ে এসেছে প্রবাসী লেখিকা শামসাদ হুসামের পানরাজ বংশের উত্তরাধিকার।

গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ২৮টি। এর মধ্যে উপন্যাস চার, প্রবন্ধ এক, কবিতা পাঁচ, গবেষণা দুই, জীবনী দুই, রচনাবলি এক, মুক্তিযুদ্ধ এক, বিজ্ঞান তিন, ভ্রমণ দুই, রম্য ও ধাঁধা এক, ধর্মীয় এক, অনুবাদ এক ও অন্যান্য চারটি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/574218/