স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল ও মার্কেট খুলে দেওয়ার দাবিতে বুধবার রাজধানীতে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের মানববন্ধন -যুগান্তর
৮ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৯

শপিংমল-মার্কেট খোলার দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত

যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন - গুলিস্তানে ব্যবসায়ী-পুলিশ সংঘর্ষ - সিলেটে রোববার থেকে দোকানপাট খোলার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের - রাজশাহীতে দোকানপাট খুললেও ক্রেতা কম

শপিংমল-মার্কেট খোলার দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। বুধবার রাজধানীতে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, বসন্ধুরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাজা, নিউমার্কেটের সামনে ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেছেন। গুলিস্তানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী, সিলেট, জামালপুর, গাজীপুর, সাভার, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। রাজশাহীতে সকালে কয়েকজন ব্যবসায়ী দোকান খুললে ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে যান। জরিমানা করার উদ্যোগ নিলে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা দোকান খোলেন। তবে ক্রেতার সংখ্যা ছিল কম। এদিকে, রোববার থেকে সিলেটে দোকান খোলার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা এবং নারায়ণগঞ্জেও দোকানপাট খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীরা শপিং মলের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, ক্ষুধার কাছে আমরা অসহায়। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে ক্ষুধা নিবারণ হবে কিভাবে? করোনা মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে একমত পোষণ করে তারা শপিং মল, মার্কেট ও রেস্টুরেন্ট খোলার দাবি জানান। এক ব্যবসায়ী বলেন, গত বছর লকডাউনে শপিং মল বন্ধ থাকায় হাজারো কর্মচারী বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ বছরও শপিং মল বন্ধ থাকলে আবারও তারা বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত হবেন। তারা কোথায় যাবেন? তাই কর্মচারীদের দিকে তাকিয়ে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি শপিং মল খুলে দেওয়ার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করবেন দোকান মালিকরা। আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, লকডাউনে বইমেলা, খেলা, গণপরিবহণ চলছে। সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। তাহলে শপিং মল খুলতে সমস্যা কোথায়? আর যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি যথেষ্ট মেনে চলেন। আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, যমুনা ফিউচার পার্ক দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ মার্কেট। গত লকডাউনের পর এখানে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিং মল খোলা হয়েছে, মনে হয় না বাংলাদেশের আর কোথাও মানা হয়েছে। তিনি বলেন, যমুনা ফিউচার পার্কের একেকটা করিডোর ঢাকার সড়কের সমান। এখানকার একেকটা দোকানে ১০-২০ জন কর্মচারী কাজ করেন। কিন্তু একটি শিল্পকারখানায় ৫-১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাহলে কোন যুক্তিতে মার্কেট বন্ধ রেখে শিল্পকারখানা চালু রাখা হলো? সরকার করোনা সংক্রমণ রোধ করতে চাইলে তো আগে শিল্পকারখানা বন্ধ রাখা দরকার ছিল। তিনি বলেন, গত লকডাউনে যে ধাক্কা খেয়েছি সেটা এখনো পুষিয়ে উঠতে পারিনি। দোকানভাড়া, ব্যাংক ঋণ, কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। সব জায়গায় সবকিছু স্বাভাবিক চলছে, শুধু মার্কেট বন্ধ। এটা হতে পারে না। স্বাস্থ্যবিধি বাধ্যতামূলক করে মার্কেট খুলে দিয়ে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের বাঁচান।

শেফ ইউনিটি অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আহসান হাবিব বলেন, সব হোটেল-রেস্টুরেন্ট খুলে দেওয়া উচিত। কারণ প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নত করার জন্য যতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে বিদেশে তাকে রোল মডেল মানা হয়। করোনায় মরে গেলে তার সুনাম নষ্ট হবে না, কিন্তু না খেয়ে মরে গেলে সুনাম ক্ষুণ্ন হবে।

কাওরানবাজারে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের সামনে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, বছরের অন্য সময় যে বেচাবিক্রি হয় তাতে দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার পর মুনাফা থাকে না। এজন্য ঈদের বিক্রির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে মালামাল উঠানো হয়েছে। এখন বেচতে না পারলে পুরোটাই লোকসান হবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিং মল খুলে দেওয়া উচিত। অফিস-আদালত খোলাসহ সবকিছুই স্বাভাবিক। তাহলে কেন দোকান মালিকদের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। বেলা ১১টার দিকে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর সামনে মানববন্ধন করেন ব্যবসায়ীরা। আর বিআরটিসি কাউন্টারের সামনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার দাবিতে গুলিস্তান এলাকায় ঢাকা রেডিমেড গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ব্যানারে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। বিআরটিসি কাউন্টারের সামনের সড়ক তারা অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর ব্যবসায়ীরা রাস্তা ছেড়ে চলে যান। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সাভারের ব্যবসায়ীরা। এ সময় মহাসড়কটিতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের নিউমার্কেটের সামনে রাস্তার দুই পাশে অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন বিভিন্ন মার্কেটের দোকান মালিক ও কর্মচারীরা।

রাজশাহী : দোকানপাট খোলার দাবিতে রাজশাহীর সাহেববাজারে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেন। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কিছু ব্যবসায়ী সকালে দোকান খোলেন। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের জরিমানা করতে গেলে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ঘোষণা দেন, কাউকে জরিমানা করা হলে আন্দোলন জোরদার করা হবে। ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলেন। তবে ক্রেতার সংখ্যা ছিল কম।

সিলেট : রোববার থেকে দোকানপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। বুধবার নগরীর বন্দরবাজারের হাসান মার্কেটে বৈঠক শেষে ব্যবসায়ী নেতারা এ ঘোষণা দেন। মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হলে তা কোনোভাবেই মানা সম্ভব হবে না। রোববার সন্ধ্যা থেকে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলবেন। কারণ ব্যবসায়ীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খোলা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গাজীপুর : স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খোলার দাবিতে গাজীপুর মহানগরের বাসন চৌরাস্তায় পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেছেন। বাসন চৌরাস্তা দোকান ও মার্কেট ব্যবসায়ী নেতা শরীফ হোসেন বলেন, মুদি ও কাঁচাবাজারের মতো রমজান ও ঈদ সামনে রেখে আমাদের পরিবারের রুটি-রুজির কথা চিন্তা করে দোকানপাট খোলা রাখার দাবি জানাচ্ছি।

বগুড়া : মার্কেট খোলার দাবিতে শহরের সাতমাথায় নিউমার্কেটসহ সাতটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকান খোলার দাবি জানান তারা।

ময়মনসিংহ : দোকানপাট খোলার দাবিতে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মধ্যবাজারে ব্যবসায়ীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সাইদুর রহমান লিটু জানান, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি হাতে নেব।

চান্দিনা (কুমিল্লা) : নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে দোকান খোলার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন চান্দিনা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখার দাবি জানান তারা।

জামালপুর : দোকানপাট খোলার দাবি জানিয়েছেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের মাছ বাজারসংলগ্ন এলাকায় আসলে ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে তার কাছে এ দাবি জানান।

হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলার দাবি : স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক ভোক্তাকে বসিয়ে খাওয়ানোর দাবি জানিয়েছে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। বুধবার সংগঠনের পক্ষে থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে পার্সেল বা অনলাইনে বিক্রির পরিবর্তে ধারণক্ষমতার অর্ধেক ভোক্তাকে বসিয়ে খাওয়ানোর সুযোগ দেওয়া হোক। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইফতার ও সেহেরি বিক্রয় করার অনুমতি দেওয়া হোক। এতে আরও বলা হয়, গত লকডাউনে ৩০ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক দেউলিয়া হয়ে গেছেন। অনেক মালিক সর্বস্বান্ত হয়ে প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিয়েছেন। চলমান লকডাউনে এ খাতের ৩০ লাখ শ্রমিক মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এমন অবস্থায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হোক।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/409685