৮ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৪

দূরশিক্ষণে নির্ভরতা বাড়ছে ক্লাস ও পরীক্ষা অনলাইনেই

শ্রেণী ও পাবলিক পরীক্ষার বিকল্প চিন্তা

করোনায় লণ্ডভণ্ড শিক্ষাখাত। ২০২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিকের দুই মাস বাদে বাকি পুরো সময়টাই ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। চলতি বছরের শুরুর দিকে করোনার প্রকোপ কিছু কম থাকায় ধারণা করা হয়েছিল হয়তো খুলতে পারে স্কুল কলেজ। কিন্তু হঠাৎ করেই করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় স্কুল কলেজ না খুলে বরং পুনরায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এখন বিকল্প পন্থায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে অনলাইনেই ক্লাস পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের প্রথম থেকে করোনা অতিমারী শুরুর পর থেকে দেশে অদ্যাবধি কোনো পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২০ সালের এইচএসসি, জেএসসি ও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসা তো বন্ধ রয়েছেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ পরিস্থিতেতে অনলাইনে শ্রেণী পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার সম্ভব কি না তা খতিয়ে দেখছে সরকার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও শিক্ষা ও শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিয়ে শুরু থেকেই তৎপর ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে টিভি রেডিওতে ও অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস কখনোই বন্ধ ছিল না। তিনটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নিয়মিতভাবেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বছরের শেষ দিকে স্কুল কলেজ খুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও করোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। ফলে বার্ষিক পরীক্ষাও বাতিল করে সব শিক্ষার্থীকে শ্রেণী মূল্যায়নের মাধ্যমে অটোপাস দেয়া হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই সরকার শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে কার্যক্রম চালু রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করে। পাশাপাশি পড়ালেখাও চালু রাখতে সপ্তাহভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্ট ও রুটিন প্রকাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। কিন্তু চলমান দ্বিতীয় দফার লকডাউনে শিক্ষার্থীদের সেই অ্যাসাইনমেন্টও দেয়া নেয়া এখন বন্ধ। ফলে বিকল্প হিসেবে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা এ দুটিকেই প্রধান্য দিয়ে বিকল্প পন্থা খোঁজা হচ্ছে।

অন্য একটি সূত্র জানায়, গত বছর আগস্টে অনুষ্ঠিত জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০১৮ এর আওতায় গৃহীত কর্মপরিকল্পনাসমূহের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কমিটির এক সভায় অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ও এটুআইকে যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর গত বছরের নভেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয় ও বুয়েটসহ পাঁচটি সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটির একাধিক বৈঠক করে অনলাইনে পরীক্ষার সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ প্রতিবেদন পেশ করে। সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৪ মার্চ সভা করে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অনলাইনে পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। বর্তমান করোনার এই পরিস্থিেিত শুধু পাবলিক পরীক্ষাই নয়, অনলাইনে বিভিন্ন শ্রেণীর সাময়িক পরীক্ষা নেয়ার বিষয়েও সরকারের চিন্তায় রয়েছে। ইতোমধ্যে অনলাইনে পাবলিক পরীক্ষা ও বিভিন্ন শ্রেণীভিত্তিক পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রেণী পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ করতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে। কমিটিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, যশোর বোর্ডের প্রতিনিধিসহ দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে সদস্য করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এ কমিটি দেশে ও বিদেশে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বর্তমান প্র্যাকটিসগুলো পর্যালোচনা করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করবে। চলতি মাসেই কমিটিকে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/574397