৩১ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ৭:৩২

‘জাল ভোট দিতে অনেক চাপ ছিল’

কুমিল্লার গর্ভনমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল কেন্দ্রে বেলা আড়াইটায় গিয়ে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। দু-একজন করে পুরুষ ভোটার ভোট দিতে আসছেন। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো: ইউনুস মিয়া জানান, সকালে ভোটারদের উপস্থিতি অনেক বেশি ছিল। কিন্তু গত এক ঘণ্টায় কম ভোট পড়েছে। কেন্দ্রের মোট ২৩৬৫ ভোটের মধ্যে আড়াইটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১১৭০টি। ভোট সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাইরে থেকে অনেক ব্যক্তি ফোন করে জাল ভোট দেয়ার জন্য আমাকে বারবার চাপ দিচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু আমি তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছি। তাদের ঢুকতে দেইনি। কেন্দ্রে মোট আটটি বুথ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দু’টি বুথে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কোনো পোলিং এজেন্ট আসেনি।
বেলা ৩টায় পাশের শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় গোলযোগ হচ্ছে। সেখানে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এমডি আরিফ বখশীকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সরকার সমর্থকেরা তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জাকির হোসেন বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে কোনো গোলযোগ হয়নি। বাইরে হয়ে থাকলে সেটি তার জানা নেই। এ সময় ওই কেন্দ্রে মোট ১৯০৪টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়ে ১১১২টি এবং পাশের ৯৫ নম্বর কেন্দ্রে ১৯৩৭টি ভোটের মধ্যে ১১০০ ভোট পড়ে বলে জানান, প্রিজাইডিং অফিসার লোকমান হোসেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে গতকাল সকাল থেকেই ভোটারেরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে কেন্দ্রে আসতে থাকেন। বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো। তবে অনেক কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষের পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। সকাল সাড়ে ৯টায় পুলিশ লাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১ থেকে ৪ নম্বর বুথে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিএনপির প্রার্থীর কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। এ সময় ওই কেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে ৩৩টি, ২ নম্বর বুথে ২০টি, ৩ নম্বর বুথে ৬৩টি ও ৪ নম্বর বুথে ৬০টি ভোট পড়ে।
একই এলাকার ওয়াইডব্লিউসিএ নার্সারি স্কুলকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টায় দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। ৬ ও ৭ নম্বর বুথে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্ট থাকলেও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। তবে ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা হাইস্কুল, কুমিল্লা আলিয়া মাদরাসা, তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায় বিএনপি-আওয়ামী লীগ দু’দলেরই পোলিং এজেন্ট আছেন। বেলা ১১ টায় কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ কেন্দ্রে ঢুকে ১৫ থেকে ২০ জন ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারা শুরু করে। এ সময় কেন্দ্রের বাইরে তিনটি ককটেলও বিস্ফোরিত হয়। জাল ভোটে বাধা দিলে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী মাহবুবুর রহমান ও তার এজেন্ট মো: ফরহাদকে মারধর করে সরকারি দলের প্রার্থীরা-সমর্থকরা। এ সময় ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ভোটগ্রহণ শুরু করা হয়। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মেদ জানান, পরিস্থিতির কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল। পরে আবার তা চালু হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/208218