৬ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:২৬

শ্রমিকদের দুর্ভোগের শেষ ছিল না

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের বিশেষ বিধি-নিষেধের কারণে গতকাল সোমবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। বিশেষ বিধি-নিষেধ জারির সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব শিল্প-কারখানা খোলা রাখা হবে, তারা যেন নিজস্ব যানবাহনে কর্মীদের কারখানায় নেয়। কিন্তু অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ সে ব্যবস্থা না করায় গতকাল ফের অনেক শ্রমিককে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে। গতকাল বিশেষ বিধি-নিষেধের প্রথম দিনে এমন অভিজ্ঞতার কথাই জানিয়েছেন পোশাকশ্রমিক এবং এ খাতের শ্রমিক নেতারা। তাঁরা বলছেন, আগে থেকে যারা শ্রমিকদের নিজস্ব পরিবহনে আনা-নেওয়া করত, তারা ছাড়া অন্য কেউ শ্রমিকদের জন্য যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে—এমন তথ্য তাঁদের জানা নেই। সরকারের নজরদারিতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার নজরদারি করলেও একটি সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে এটি বাস্তবায়ন কঠিন।

গতকাল নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে গাজীপুর চান্দুরার পোশাকশ্রমিক আসলাম বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রায় ছয় কিলোমিটার হেঁটে কারখানায় পৌঁছেছি। আমি যে কারখানায় কাজ করি, ওই কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।’

আরেকজন শ্রমিক রেহানা জানান, কারখানায় কাজ করতে তাঁকে বড়বাড়ী থেকে গাজীপুর পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (জিটিইউসি) আন্তর্জাতিক সম্পাদক মঞ্জুর মঈন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই বিশেষ বিধি-নিষেধের আওতায় গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং যাতায়াতের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি। বিধি-নিষেধের প্রথম দিন গতকাল কোনো কারখানার মালিক শ্রমিকদের পরিবহনের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করেনি। আগে থেকে যাদের ব্যবস্থা ছিল তারা সেগুলো বহাল রেখেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি বলতে যা বোঝায়; এটি মোটেও মানা সম্ভব নয়। তাই মানাও হয় না। স্বাস্থ্যবিধি বলতে কারখানায় প্রবেশ পথে ডিজ-ইনফেক্ট ট্যানেল আর হাত ধোয়ার ব্যবস্থা এই হলো কারখানাগুলোর স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থা।’

কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনা ও তদারকি জোরদার করতে আঞ্চলিক শ্রম পরিদর্শকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তবে বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।

তৈরি পোশাক কারখানা এজে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনার প্রথম ধাপের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও সামলে ওঠা যাবে বলে আশা করছি। আর সরকারের নির্দেশনা অনুসারে কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারখানায় যাতায়াতের সময় শ্রমিকরা যেন সংক্রমিত না হয়, এ জন্য নিয়মিত তাদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। আমার কারখানার শ্রমিকরা নিজস্ব পরিবহনে যাতায়াত করে এবং বেশির ভাগ শ্রমিক কারখানার আশপাশের এলাকায় থাকে।’

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনার ঝুঁকি এড়াতে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আধাঘণ্টা বিরতি দিয়ে পালাক্রমে কারখানায় প্রবেশ করবে এবং বের হবে। প্রতিটি কারখানা চলবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে। শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কারখানা খোলা রাখবেন। এ নিয়ে আমাদের দিকনির্দেশনা কারখানাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গতবার শ্রমিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ০.০৩ শতাংশ। এবার সেটা মাথায় রেখে কারখানা চালু থাকবে। কারণ কোনো উদ্যোক্তা চায় না, কোনো শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হোক।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2021/04/06/1021148