৫ এপ্রিল ২০২১, সোমবার, ১:২৩

দোকান খোলা রাখার দাবি ব্যবসায়ীদের

স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খোলা রাখার দাবিতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পুলিশ বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। বসুন্ধরা শপিংমলের দোকান মালিক ও শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। এদিকে রাজধানীর বাইরেও অনেক স্থানে দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, দোকান খোলা রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হোক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা দোকান খোলা রাখতে চায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার বিকাল তিনটার পর নিউমার্কেট এলাকায় প্রধান সড়কের দুপাশে অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্থানীয় মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নূর ম্যানশনসহ বেশ কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেয়। এ সময় তারা রাস্তার অবস্থান নিয়ে যান চলাচল আটকে মিছিল করে। মিছিল থেকে লকডাউনের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। ‘লকডাউন মানি না, মার্কেট খোলা চাই’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের মধ্যে বইমেলা খোলা রাখলেও মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই অবিলম্বে মার্কেট খুলে দেওয়া হোক। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষুব্ধরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুটতে থাকে। এ সময় পুলিশ পিছু হটে ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা কমপক্ষে পাঁচটি প্রাইভেট কার ও একটি বাস ভাঙচুর করেন।

নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসিন আলী বলেন, আমরা যখন ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলছিলাম ঠিক সে সময় কয়েকজন আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। নিউমার্কেটের দুই পাশের রাস্তা বন্ধ থাকায় আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে শপিংমল এবং বিভিন্ন মার্কেট বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছে। মূলত এর প্রতিবাদ জানাতেই তারা রাস্তায় বিক্ষোভে নামেন। তারা বলেন, লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, লকডাউনের মধ্যে ৪ ঘণ্টা মার্কেট খোলা রাখার সুযোগ দিতে হবে। এ সময় ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি বইমেলা চলতে পারে তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা কেন ব্যবসা চালাতে পারব না। নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন দিলে শতভাগ লকডাউন দিতে হবে। কোনো কোনো খাত ছাড় দিয়ে কোনো কোনোটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ অন্যায়। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলা রাখতে পারলে নিজেদের খাবারদাবারের সংস্থান হবে, কর্মচারীরা বেতন পাবেন। সারা বছর ব্যবসায়ীরা এই সময়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ঈদের সময় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেন। তিন ধাপে ব্যবসাভেদে এ সময় কেনাবেচা হয়। রোজার আগের ১৫ দিন, রোজার প্রথম ১৫ দিন ও শেষ ১৫ দিন। এ সময়ে এসে দোকানপাট বন্ধ হওয়া মানে পথে বসে যাওয়া।

হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের ৬ দাবি : লকডাউনে হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে ছয় দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হোটেল-রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি। পরে তারা মিছিল করে এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেয়।

হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো- পূর্ণাঙ্গ মজুরিসহ সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, লে-অফ, অব্যাহতি বা ছাঁটাই করা যাবে না। এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট পরিপত্র জারি করতে হবে। যেসব শ্রমিক ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের আইসোলেশন ও যথাযথ চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার ও মালিকপক্ষকে বহন করতে হবে। সব হোটেল শ্রমিকের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ ঝুঁকিভাতা এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এক জীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ, সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা হিসেবে মাসে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা সরাসরি শ্রমিকদের দিতে হবে।

চট্টগ্রামে মার্কেট খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ : যুগান্তরের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে পাইকারি কাপড়ের বাজার খোলা রাখার দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমানের কাছে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন চট্টগ্রাম টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতি। টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান সমিতির পক্ষে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এর আগে বাজারের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা লকডাউনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টেরিবাজারসহ চট্টগ্রামের অন্যান্য পাইকারি কাপড়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দাবি জানান তারা। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান যুগান্তরকে বলেন, টেরিবাজার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাপড়ের পাইকারি ও খুচরা মার্কেট। টেকনাফ থেকে ফেনী পর্যন্ত পাইকারি ব্যবসায়ীরা মালামাল কিনে নিয়ে যান। ২০২০ সালের লকডাউনে ব্যবসায়ীরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রমজানের ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। আমরা আশ্বস্ত করছি শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করা হবে। আমরা টেরিবাজারের পাশাপাশি রিয়াজুদ্দিন বাজারসহ চট্টগ্রামের অন্যান্য পাইকারি কাপড়ের বাজার সকাল ৯টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখার দাবি জানিয়েছি।

রাজশাহী আরডিএ মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত : যুগান্তরের রাজশাহী ব্যুরো জানায়, লকডাউনে রাজশাহীর আরডিএ মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ। রোববার বেলা ১১টায় আরডিএ মার্কেটে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা জানান, লকডাউনে দেশের বড় বড় কলকারখানা ও গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা যেভাবে নিয়মনীতির মধ্যে থেকে কলকারখানা খোলা রাখবে, আরডিএ মার্কেটও তেমনভাবেই চলবে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি রফিকুজ্জামান বেন্টু, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মামুদ হাসান, যুগ্ম সম্পাদক এবিএম মনোয়ার মুনতাজ প্রমুখ।

ব্যবসার সুযোগ চান ভাঙ্গুড়ার ব্যবসায়ীরা : যুগান্তরের ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি জানান, দোকানপাট খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ব্যাবসায়ীরা। লকডাউনে তারা ব্যবসার সুযোগ চান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। পাবনার ভাঙ্গুড়া বাজারের বস্ত্রহাট গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী ও সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল মতিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন প্রতিটি ব্যবসায়ী সংগঠনকে অনুরোধ করছি, আপনার যার যার অবস্থান থেকে লকডাউনের প্রতিবাদ করুন। প্রয়োজনে আমরা সবাই মিলে মাঠে নামব। আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারও মুখাপেক্ষী হয়ে বাঁচতে চাই না।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/408644/