৪ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ৬:২১

নতুন করে লকডাউনে বছরের শেষার্ধে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অনিশ্চিত

উন্নয়নে স্থবিরতা, অবাস্তবায়িত বাজেটের বড় অংশ

নতুন করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং লকডাউন দেয়ার কারণে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর আশা পূরণের কোনো সম্ভাবনাই আর দেখা যাচ্ছে না। অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৪৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৪ শতাংশ রাজস্ব বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়। এর ফলে বাজেটের বড় একটি অংশ অবাস্তবায়িত থেকে যাচ্ছে। অর্থবছরের শেষে বিপুল রাজস্ব ঘাটতির কারণে এক-চতুর্থাংশের বেশি বাজেট অবাস্তবায়িত থেকে যেতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, অর্থবছরের প্রথমার্ধে সার্বিক রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ৪.০২ শতাংশ। এর মধ্যে এনবিআর খাতে ৪.৮ শতাংশ ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি এবং এনবিআর-বহির্ভূত খাতে ১৮.০৮ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। করোনায় আক্রান্ত বিগত অর্থবছরে ২.৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির দুরবস্থা এই অর্থবছরে কেটে যাবে আশায় অর্থবছরে বাজেটে উচ্চ হারের রাজস্ব বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয় বাজেটে। কিন্তু আগের বছরের সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার কারণে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৪৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর মাসেও রাজস্ব আদায়ের অবস্থা খুব একটা সুখকর নয়। জানুয়ারি ’২১ মাসে এনবিআর খাতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ৬.৩ শতাংশ। ফেব্রুয়ারির অবস্থাও এর কাছাকাছি বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, রাজস্ব আদায়ের এই দুরবস্থার কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে বাজেটের খরচ আগের বছরের তুলনায় ১০.৫৮ শতাংশ কমে গেছে। এ সময়ে অনুন্নয়ন ব্যয় ৩.৭৬ শতাংশ এবং উন্নয়ন ব্যয় ২৪.৫৩ শতাংশ কমে যায়। এতে দেখা যায় আগের বছর এই সময়ে বাজেট ব্যয় যেখানে জিডিপির ১১.৩২ শতাংশ ছিল সেখানে এবার তা ৮.৯৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

জানা গেছে, বাজেটের উন্নয়ন ব্যয় ২৪.৫৩ শতাংশ কমে যাওয়ার পেছনে রাজস্ব ঘাটতি ছাড়াও কোভিড-১৯ মহামারীজনিত কারণে উন্নয়ন প্রকল্পগুলির ধীর বাস্তবায়নও দায়ী ছিল। অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে বাজেট বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া বিশেষত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের কারণে সেটি বাস্তবায়ন করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সামগ্রিক বাজেট বাস্তবায়ন ব্যর্থতার কারণে বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন কিছুটা কমে গেছে। ডিসেম্বর ’২০ শেষে অনুদানসহ আট হাজার ৩৮২ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি সৃষ্টি হয় যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি কমার কারণে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণও এ সময়ে কমে গেছে। ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ অর্ধেক কমে ২৪ হাজার কোটি টাকায় আর ব্যাংকবহির্ভূত খাতেও নিট ঋণ ৫০ শতাংশের মতো কমে যায়। ফলে এই দুই খাত থেকে বাজেটে অর্থায়ন আগের বছরের প্রথমার্ধের ৩৬ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে সোয়া ৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

রাজস্ব খাতের স্থবিরতার বিপরীতে আর্থিক খাতে বেশ সম্প্রসারণমূলক চিত্র দেখা যায়। ডিসেম্বর ’২০ শেষে ব্রড মানি (এম-২) ১৪.২৩ শতাংশ বেড়েছে, যার মধ্যে ৩০.২২ শতাংশ ছিল নেট বিদেশী সম্পদ (এনএফএ) প্রবৃদ্ধি এবং ৯.৯৪ শতাংশ ছিল নেট ডমেস্টিক অ্যাসেটে (এনডিএ) প্রবৃদ্ধি। একই সময়ে রিজার্ভ অর্থ বেড়েছে ২১.১৮ শতাংশ। বিবেচ্য সময়ে বৈদেশিক খাতের মন্দা কেটে যাওয়ার আশা অর্থবছরের প্রথমার্ধে পূরণ হয়নি। অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রফতানি ০.৩৬ শতাংশ কমে গেছে আর আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় আমদানি কমেছে ৬.৭৭ শতাংশ। জানুয়ারি ২১ মাসে অবশ্য হঠাৎ করে আমদানি সাড়ে ৩৫ শতাংশ বেড়ে গেছে, যদিও রফতানি আয় এই সাসে ৪ শতাংশের কাছাকাছি কমে গেছে। খাদ্য আমদানি এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে এটি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ দিকে অর্থবছরের ৮ মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে ৩৩.৫১ শতাংশ যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবের ভারসাম্যে। ডিসেম্বর ’২০ শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৪৩.১৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়, যা সাড়ে ৯ মাসের আমদানি ব্যয়ের অর্থ প্রদানের সমতুল্য।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/573529/