৪ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ৬:১৮

টানা তিন সপ্তাহে শেয়ারবাজার থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছে বিনিয়োগকারীরা

টানা দরপতনের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। টানা তিনি সপ্তাহে শেয়ারবাজার থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে গত সপ্তাহেই হারিয়েছেন সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ওপরে। তার আগের সপ্তাহে হারিয়েছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে হারিয়েছিল প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে এই অর্থ হারিয়েছেন তারা। এদিকে বিএসইসি শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা বাজারের পতন ঠেকাতে পারছে না।

গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এর মধ্যে এক কার্যদিবসে রীতিমত ধস নামে শেয়ারবাজারে। এতেই বড় অঙ্কের এই অর্থ হারান বিনিয়োগকারীরা। সেই সঙ্গে মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয়েছে। কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা।

আগের দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১৯ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এ হিসাবে টানা তিন সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমল ২৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১০৭ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ১৩৪ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ তিন সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২৯৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট। প্রধান মূল্যসূচকরে পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকেরও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৩৭ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫২ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৮০ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপরদিকে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ১৫ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২৯ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪০ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ১৮ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

সবকটি মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯১টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৩টির। আর ১৫৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬০১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৯৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বা ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা বা ৩২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে কমার কারণ গত সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়। গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘এ’ গ্রুপ বা ভালো কোম্পানির অবদান ছিল ৬৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। এছাড়া ‘বি’ গ্রুপের ২০ দশমিক ৪২ শতাংশ, ‘জেড’ গ্রুপের দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রুপের ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ অবদান ছিল। গত সপ্তাহে ডিএসইর মূল বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, রবি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জাহোলসিম, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রভাতী ইনস্যুরেন্স, রহিমা ফুড এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো।

এদিকে গতমাস থেকে শেয়ারবাজারে পতন শুরু হয়েছে। গত মাসে অর্থাৎ পতনের প্রথম সপ্তাহে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে- এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ায় টালমাটাল হয়ে পড়ে দেশের শেয়ারবাজার। আতঙ্কে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। এতে দেখতে দেখতে ধসে রূপ নেয় শেয়ারবাজার। বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে দরপতন হয় একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। ফলে দিনের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দাম কমিয়ে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। ফলে দেখতে দেখতে বড় ধস নামে শেয়ারবাজারে। এদিকে শেয়ারবাজারে ধস নামায় তাৎক্ষণিক খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিএসইসি জানতে পারে- করোনার প্রকোপ বাড়ায় শেয়ারবাজার বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ায় বাজারে বড় দরপতন হয়েছে।

তবে বিদেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে ভার্চুয়ালি গণশুনানিও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কীভাবে সংযুক্তি করা যায়, তা নিয়ে কমিশন কাজ করছে। এজন্য কমিশন প্রবাসীদের বিনিয়োগকে সহজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে প্রবাসীদের জন্য নিটার মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এতে আগের ২ হাজার ৩০০ টাকার ব্যয় ৫৭৫ টাকায় নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বিও হিসাব খোলা সহজীকরণ করার লক্ষ্যে ডিজিটাল বিও চালু করা হয়েছে। এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে বিও হিসাব খোলা যাবে। এছাড়া বিদেশে লেনদেন করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল বুথ চালু করা হয়েছে। গত মাসে দুবাইয়ে একটি ডিজিটাল বুথ খোলার মাধ্যমে এ যাত্রা শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে অনেক দেশেই এ বুথ চালু করা হবে। বিএসইসি কমিশনার বলেন, শেয়ারবাজার এখন অনেক উন্নত। এটাকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কমিশন কাজ করছে।

https://dailysangram.com/post/448501