৩ এপ্রিল ২০২১, শনিবার, ১১:৩৭

অসহায়দের জন্য ভাতা

বাংলাদেশে অসহায়দের জন্য ভাতা প্রবর্তন করা প্রয়োজন। অসহায় হচ্ছে তারা যারা দরিদ্র, নিজেরা চলতে পারে না এবং তাদের দেখাশোনারও কেউ নেই। এসব লোক খুব কষ্টে জীবনযাপন করে। বলতে গেলে, না খেয়েই থাকে।

ইসলামে অসহায়দের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। রাসূল সা: বলেছেন, যারা সম্পত্তি রেখে যায় সে সম্পত্তি পাবে তাদের উত্তরাধিকারীরা। কিন্তু যারা অসহায় ছেলেমেয়ে রেখে যায় তাদের দায়িত্ব রাসূলের নিজের অর্থাৎ রাষ্ট্রের। এজন্য ইসলাম কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে সব অসহায়ের দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে। এ জন্য রাষ্ট্র জাকাত আদায় করবে এবং জাকাতের মাধ্যমে অসহায়দের ব্যবস্থা করবে। জাকাতের সম্পদে না কুলালে বায়তুলমালের অন্য সম্পদ ব্যবহার করা হবে। এ জন্য ইসলামের স্বর্ণযুগে অসহায়রা অসহায় ছিল না। রাষ্ট্র তাদের দেখাশুনা করত। এ অবস্থা কেবল খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ছিল, তা নয়। উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলেও একই ব্যবস্থা ছিল। সেসব আমলেও রাষ্ট্র জাকাত আদায় এবং অসহায়দের দেখভাল করত। মোগল আমলেও পরিস্থিতি অনেকটা এরকমই ছিল। কারণ মোগল শাসনের মূল ভিত্তি ছিল ইসলামী শরিয়ত। একমাত্র রাজতন্ত্র ছাড়া বাকি সব কিছু ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক পরিচালিত হতো।

বাংলাদেশে অসহায়দের সংখ্যা কত? তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে মনে হয়, তাদের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এসব অসহায়ের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শহরের রাস্তাঘাটে থাকা পুরুষ, নারী, শিশু। এদের সংখ্যা ১০ লাখের অধিক হতে পারে। সব শহরের প্রত্যেক ওয়ার্ডে অসহায় লোক রয়েছে। তাদের মধ্যে আছে অতি বৃদ্ধ, বিধবা, সহায়সম্বলহীন অন্য লোকেরা। এদের জন্য ব্যবস্থা করা দরকার। এদের জন্য অসহায়ভাতা প্রবর্তন করা যেতে পারে। সেই অসহায়ভাতা বণ্টিত হবে মেয়র, ওয়ার্ড কমিশনার এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তেমনিভাবে প্রত্যেক গ্রামে এবং প্রত্যেক গ্রামের প্রত্যেক পাড়ায় কিছু অসহায় লোক আছে যারা বৃদ্ধ, অভিভাবকহীন এতিম, বিধবা এবং অন্যান্য সহায়সম্বলহীন মানুষ। এদের জন্য অসহায়ভাতা প্রবর্তন করতে হবে এবং তা বণ্টিত হবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড মেম্বার এবং সরকারি কর্মচারীদের মাধ্যমে।

এখানে উল্লেখ করা দরকার, সামগ্রিকভাবে গ্রামের দারিদ্র্য কমে আসছে। একসময় গ্রামেও দরিদ্রের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু অনেক এলাকাতেই গ্রামের দারিদ্র্য কমে আসছে। তবে বিষয়টি এলাকা ভেদে ভিন্ন। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় গ্রামের অবস্থা ভালো এবং প্রায় দারিদ্র্যমুক্ত। অন্য দিকে কিছু এলাকায় দারিদ্র্য বেশি এবং সেখানে সহায়সম্বলহীন লোকের সংখ্যা বেশি।

সার্বিক বিবেচনায় যদি আমরা এ ধরনের লোকের সংখ্যা পঁচিশ লাখ ধরি, তাহলে তাদের জন্য অসহায়ভাতা প্রবর্তন করা দরকার। অবশ্য বর্তমান অবস্থায় এ ভাতার পরিমাণ বেশি করা সম্ভব হবে না। ক্ষেত্র ভেদে মাসিক দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে করতে হবে। এ জন্য সরকারের রাজস্ব থেকে আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। আমাদের দেশে বাজেটের আকার কয়েক লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি নয়।

সম্পর্কিত একটি বিষয় উল্লেখ করছি। সেটি হচ্ছে, শিক্ষিত বেকারের কথা। করোনা পরিস্থিতি বাদ দিলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ১০ লাখ হবে। এদের কাজ না পাওয়া পর্যন্ত ভাতা দেয়া দরকার। এই ভাতাকে আমরা ‘অসহায়ভাতা’ না বলে ‘বেকারভাতা’ বলতে পারি। আমরা যদি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দিই, তাহলে বার্ষিক ব্যয় হয় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের বিশাল বাজেটের তুলনায় এ টাকা বেশি কিছু নয়।

শেষে বলতে চাই যে, অসহায় ও বেকারদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব উপলব্ধি এবং অসহায় ও বেকারভাতা চালু করতে হবে।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/573136