৩ এপ্রিল ২০২১, শনিবার, ১১:৩২

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা

সামাজিক দূরত্বের একি হাল!

করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই গতকাল মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুখে মাস্ক ছিল। তবে ছিল না সামাজিক দূরত্ব। কেন্দ্রের বাইরে ছিল প্রচণ্ড ভিড়, আর স্বাস্থ্যবিধি ছিল একেবারে উপেক্ষিত। যেদিন এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো সেদিনও সংক্রমণে রেকর্ড তৈরি হয় দেশে। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি উধাও সেখানে খোদ এই পরীক্ষা নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, পরীক্ষার হলের ভিতরের স্বাস্থবিধি দেখার দায়িত্ব ছিল তাদের। তা সঠিকভাবে করা হয়েছে।

কিন্তু বাইরের স্বাস্থ্যবিধি দেখার দায়িত্ব তাদের নয়।

রাজধানীসহ দেশের ১৯টি পরীক্ষাকেন্দ্রের ৫৫টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর ভর্তি পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন। যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগে ও পরে পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের মধ্যে শুক্রবার অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে ছিল এ চিত্র। কেন্দ্রের ভেতরে পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের ও কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে সামাজিক-শারীরিক দূরত্ব না মেনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে হাজারো অভিভাবককে। কোনো কোনো কেন্দ্রের বাইরে সমাবেশের মতোই লোক ছিল। একজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে দুই থেকে তিনজন অভিভাবকও এসেছিলেন। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না। রাজধানীর উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষারত এক অভিভাবক বলেন, এখানে নিরাপত্তাকর্মী আছেন মাত্র ৫ থেকে ৬ জন। তাদের পক্ষে এত ভিড় সামলানো সম্ভব না। তা ছাড়া, অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতার অভাব আছে। ঢোকার সময় গেটের সামনে অভিভাবকরা জটলা বেঁধে দাঁড়িয়েছিলেন। বের হওয়ার সময়ও তাই। শিক্ষার্থীদের যে লাইন তার পাশেই ধাক্কাধাক্কি করছেন অভিভাবকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের গেটের বাইরে আরেক অভিভাবক জানান, একজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে একজনের বেশি কেউ আসতে পারবেন না, এ রকম একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া দরকার ছিল। দেখা যাচ্ছে, মা-বাবা দু’জনই এসেছেন। দুইজনই গেট পর্যন্ত সন্তানকে এগিয়ে দিচ্ছেন। ফলে ভিড় এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হচ্ছে না। সকাল ৭টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আসতে শুরু করেন। রাস্তায় যানবাহন সংকটের কারণে তারা ঝুঁকি নিতে চাননি বলে সকাল সকাল বেরিয়েছেন বলে জানান। উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এক পরীক্ষার্থী বলেন, ঢোকার সময় সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি। তবে, সবার মুখে মাস্ক ছিল। কেন্দ্রের ভেতরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হয়েছে। উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে এক সিটে একজন পরীক্ষার্থী বসেছেন বলে জানান তিনি। আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, আমার কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকার সময় গেটে ভিড়, ঠেলাঠেলি হলেও ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মানা হয়েছে। বের হওয়ার সময়ও শৃঙ্খলা ছিল। পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চাইলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে বলে জানান।

বকশীবাজারে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রের বাইরেও প্রচণ্ড ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন অভিভাবকরা। পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশের সময় পরীক্ষার্থীদের হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করতে দেখা যায়নি। শুধু তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে স্যানিটাইজার দেওয়া ছিল। লম্বা বেঞ্চের দুই প্রান্তে দু’জন করে পরীক্ষার্থীকে বসানো হয়েছিল।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের জন্য পরিদর্শন টিম গঠন করা হয়। উল্লেখ্য, দেশের ৪৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫০টি। এ ছাড়া ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসনসংখ্যা ৬ হাজার ৩৪০টি।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=268662&cat=2