১ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:১৪

সামাল দিতে হিমশিম স্বাস্থ্য খাত

নানা সংকটে শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ড

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বরিশালের স্বাস্থ্য সেক্টর। গত বছরের মার্চে দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর যে দুর্বল অবস্থায় ছিল এখানকার স্বাস্থ্য সেক্টর, বর্তমানে পরিস্থিতি তার চেয়েও করুণ। অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছেন না চিকিৎসকরা।

চলতি মাসের ৮-১০ তারিখেও শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪। বর্তমানে তা ৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। এখানে থাকা ১২টি আইসিইউ বেডের সবই পূর্ণ। করোনা ওয়ার্ড সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, অন্তত ২০ জন রোগী রয়েছেন আইসিইউর জন্য অপেক্ষমাণ।

কিন্তু খালি না থাকায় তাদের দেওয়া যাচ্ছে না আইসিইউ। বরিশালের স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার জানান, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বরিশাল। বর্তমানে এখানে শনাক্তের হার প্রায় ২৪ ভাগ। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।

বরিশালে করোনা রোগীর চিকিৎসায় একমাত্র ডেডিকেটেড করোনা ওয়ার্ড রয়েছে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে। এখানে করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে ১২টি আইসিইউ বেডসহ ২শ শয্যা। গত বছরের মার্চে দেশে করোনা ধরা পড়ার পর এ ওয়ার্ডটি চালু করা হয়। ভালো উদ্যোগ নিয়ে ওয়ার্ডটি চালু হলেও চিকিৎসক আর চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটে এটি নানা সমস্যার মুখে। শেবাচিমের পক্ষ থেকে বারবার ঢাকায় চিঠি দেওয়া হলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

শেবাচিম হাসপাতালের ইনডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ হালদার বলেন, ‘গেল বছর আমরা যখন করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করি তখন অবাক হয়ে দেখলাম রোগীদের জীবন বাঁচাতে সবচেয়ে জরুরি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার একটিও নেই বরিশালে। তাৎক্ষণিক সমাজের বিত্তবানদের কাছে হাত পেতে সংগ্রহ করা হয় ৫-৬টি ন্যাজাল ক্যানুলা। পরে সরকারিভাবে আসা মিলিয়ে ক্যানুলা মিলিয়ে ২২টি হলেও মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে তার অধিকাংশই বিকল। কারণ এগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার মতো দক্ষ কোনো জনবল নেই। শুধু ক্যানুলা পরিচালনাই বা বলছি কেন, এখানে করোনা ওয়ার্ড ও হাসপাতাল মিলিয়ে যে দুটি আইসিইউ ওয়ার্ড রয়েছে সেগুলো পরিচালনার জন্যও নেই কোনো আইসিইউ স্পেশালিস্ট। করোনা ওয়ার্ডের ২০০ মিলিয়ে ১২শ বেডের হাসপাতাল চলছে ৫০০ বেডের জনবল দিয়ে। তাও আবার রয়েছে চিকিৎসকের তীব্র সংকট। এতবড় একটি হাসপাতালে নেই অধ্যাপক পদমর্যাদার কোনো চিকিৎসক।

ডা. সুদীপের এ বক্তব্যের সত্যতা জানতে খোঁজ নিয়ে মেলে আরও ভয়াবহ তথ্য। শুরু থেকেই এ হাসপাতালে নেই আইসিইউর কোনো স্পেশালিস্ট। ডা. নাজমুল নামে একজন অ্যানেস্থেশিয়ার চিকিৎসক সামলাচ্ছেন আইসিইউ। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন প্রশ্নে তার অভিজ্ঞতা শুধুই ৭ দিনের একটি প্রশিক্ষণ। তিনি আবার কয়েকজন নার্সকে নিয়েছেন শিখিয়ে পড়িয়ে। তারাই দেখভাল করেন আইসিইউতে থাকা রোগীদের। গেল বার করোনা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করার পর এখানে প্রেষণে ৪০ জন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৩২ জন মেডিকেল কলেজের এবং ৮ জন বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই তারা যে যার মতো লবিং-তদবির করে ফিরে গেছেন পূর্বের কর্মস্থলে। ফলে চলমান দ্বিতীয় ওয়েভে হাসপাতালে আসতে থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া প্রশ্নে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অধিকাংশ নয়, ২২টি ন্যাজাল ক্যানুলার মধ্যে ১০টি বিকল। এগুলো মেরামত করার জন্য ঢাকায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্য সমস্যাগুলো সমাধানে ঢাকার সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়েও চেষ্টা চলছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে কোনো পূর্ণাঙ্গ পরিচালক নেই। ভারপ্রাপ্ত হিসাবে আমার ক্ষমতা সীমিত। তবু সব সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/407308/