১ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:১০

সরকারি নির্দেশনার প্রথম দিনে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা

যানবাহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা; বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার সরকারি নির্দেশনার প্রথম দিনে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। কোনো কোনো পরিবহন সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে একজনের স্থানে দুইজন বসিয়ে যাত্রী নিয়েছে। আবার কোনো পরিবহনের বাসে শুধু বসা নয়, দাঁড়িয়েও যাত্রী নিতে দেখা গেছে। কিছু পরিবহন নিয়ম মেনে দুইজনের সিটে একজন করে যাত্রী নিয়েছে। তবে প্রতিটি পরিবহনই সরকার নির্ধারিত ৬০ ভাগের বেশি ভাড়া আদায় করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ দিকে গতকাল বুধবার রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। এই সুযোগে সিএনজি অটো রিকশা ও রাইড শেয়ারিংয়ের পরিবহনগুলোও বাড়তি ভাড়া আদায় করে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন সব চিত্র দেখা যায়।

দুপুর একটা। আগারগাঁও মোড়। মোহাম্মদপুর থেকে ছেড়ে আসে আলিফ পরিবহনের একটি বাস ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭২০৫। বাসের গন্তব্য আশুলিয়া সাভার। আগারগাঁও মোড়ে যাত্রী তোলার সময় দেখা যায় বাসে ৩-৪ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বিষয়টি দেখে ওই বাসের চেকার হেলপারের সাথে বাগি¦তণ্ডা শুরু করেন। ওই বাসের হেলপার ও চালক কোনোভাবে চেকারকে বুঝিয়ে গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করে। দুপুর একটা ২০ মিনিটে রাজধানীর ব্যস্ততম ফার্মগেটে গিয়ে দেখা যায় আরো এক চিত্র। গাজীপুর টু মতিঝিলগামী বিআরটিসি দোতলা বাসেও ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৫৪৯৯ যাত্রী দাঁড় করিয়ে নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে দ্বিতীয়তলায় ছয়-সাতজনের বেশি যাত্রী দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দোতলা বাসও ঢাকা মেট্রো-ব-১-(এক পরের সংখ্যাটি ছিল অস্পষ্ট) ৫৮২১ প্রতি সিটে দুইজন করে যাত্রী তুলছে। এমনকি বাসটিতে সাত-আটজন যাত্রী দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন।

এ ছাড়াও দুয়ারীপাড়া সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহণ ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭২০৫, মিরপুর-১২ থেকে যাত্রাবাড়ীগামী খাজাবাবা পরিবহন ঢাকা মেট্রো-ব-১৩-০৪৫৯, টঙ্গী যাত্রাবাড়ীগামী বিআরটিসি দোতলা বাস ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৬২৪১সহ আরো অনেক বাসেই বাড়তি যাত্রী বহন করা হয়েছে। আবার বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে রাজধানীতে। ট্রাস্ট, আয়াত, বিকল্প, আল-মক্কা, নীলাচল, মনজিল, হিমাচল, ঢাকার চাকাসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাসে দুইজনের সিটে একজন করে যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।

করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্তে গণপরিবহনে ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী গতকাল থেকে পরিবহন খাতে ৬০ ভাগ বেশি ভাড়া নিয়ে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা রয়েছে। এ দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, চানখারপুল, গুলিস্তান, পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
অধিকাংশ পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ালেও পরিবহনগুলো ভাড়া দ্বিগুণ করেছে।

একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মিরাজ ফকির বলেন, কাজলা থেকে কলাবাগান বাস ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। কিন্তু গতকাল তার কাছ থেকে ভাড়া নিলো ৫০ টাকা। তিনি বলেন, আধা ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে গাড়িতে উঠতে পেরেছেন। তারপরও ভাড়া বেশি। অসিত রঞ্জন নামে এক যাত্রী বলেন, ধানমন্ডি ১৫ নম্বর থেকে রজনীগন্ধা পরিবহনে করে প্রেস ক্লাব নামেন। অন্য সময় ভাড়া নেয়া হতো ১০ টাকা। কিন্তু গতকাল তার কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছে ২০ টাকা।

এ দিকে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনার পর প্রথম কর্মদিবসে যানবাহন সঙ্কট দেখা গেছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছু কিছু জায়গায় সড়কে কম সংখ্যক যান চলাচল করেছে। আবার কিছু গাড়ি সরকারি নির্দেশনা মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করায় যাত্রীরা যানবাহন সঙ্কটে পড়েন। বিশেষ করে সকালে কর্মস্থলগামী যাত্রীরা গণপরিবহন সঙ্কটে পড়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। ফার্মগেট এলাকায় দেখা গেছে যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা অনেক কম। একটি বাস এলে যাত্রীরা হুড়াহুড়ি করে উঠার চেষ্টা করছেন। সেখানে নারী যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো: কামরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও গাড়ি পাচ্ছিলাম না। কিছুক্ষণ আগে গাড়ি পেলেও ভাড়া দ্বিগুণ। আসলে সরকার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনে নির্দেশ দিলেও যানবাহন তো দ্বিগুণ হয়নি, ফলে গাড়ির সঙ্কট বেড়েছে। এভাবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যানবাহন চলাচলের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সিটে যাত্রী পরিবহন করা যায়। কারণ সাধারণ সময়ই আমরা দাঁড়িয়ে বা ঝুলে চলাচল করি, সেখানে অর্ধেক যাত্রী নিলে গাড়ি সঙ্কট হওয়া স্বাভাবিক। তিনি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মার্কেট, বাজারে তো স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই; সব স্বাস্থ্যবিধি গণপরিবহন আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালন হলেই তো করোনা চলে যাবে না।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/572824/