১ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:০৬

আসছে বিভিন্ন টাইপের লকডাউন

করোনা ভাইরাস মহামারির নতুন ধাক্কা সামাল দিতে সরকার চলাফেরা ও লোক সমাগমের ক্ষেত্রে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন শর্তারোপ করবে সরকার। যা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিভিন্ন টাইপের লকডাউন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি- এলাকায় যাওয়া-আসা বন্ধ করা, বিয়ে শাদী অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, পিকনিক এগুলোও বন্ধ করার কথা হয়েছে। নির্দেশনা পালনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক জানিয়েছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কিছু প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এতে লকডাউনসহ অনেকগুলো প্রস্তাব ছিল। সেগুলো দেখে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা জারি করবেন। তার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের লকডাউন থাকছে।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ আবার বাড়তে থাকায় ১১ এপ্রিলের পরের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হচ্ছে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মোট আসন সংখ্যার ৫০ শতাংশ অগ্রিম টিকেট অনলাইন, মোবাইল অ্যাপ ও কাউন্টার থেকে একইসঙ্গে বিক্রি করা হবে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে। বৃহস্পতিবার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল আলম বলেন, “রেলওয়ে সরকারের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে। সরকার যদি এভাবে চালাতে বলে, তাহলে চলতে থাকবে। আবার যদি বন্ধ করতে বলে, সেজন্যই ১১ এপ্রিলের পরের টিকেট বিক্রি আপাতত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কারণ যদি আগেই ১১ তারিখের পরের টিকেট বিক্রি করা হয়, তাহলে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) প্রশাসন। ঘোষণা অনুয়ায়ী গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ে কোনও বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।

এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে বেশি সংক্রমিত এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধসহ ১৮টি নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। একই সঙ্গে রাত ১০টার পর প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতেও বলা হয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে কার্যত আংশিক লকডাউনে যাবে দেশ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়। এ নির্দেশনা আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিপালন করতে হবে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দফতর/সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

প্রসঙ্গত নতুন বছরে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হার কমে এসেছিল; কিন্তু মার্চের শুরু থেকে তা আবার দ্রুত বাড়ছে। ১৬ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১২টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সে বৈঠকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সম্ভব হলে পুরোপুরি লকডাউনে যাওয়া, পুরোপুরি লকডাউন সম্ভব না হলে ‘ইকোনমিক ব্যাল্যান্স’ রেখে যে কোনও জনসমাগম বন্ধ করার সুপারিশ আসে।
কাঁচাবাজার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শপিং মল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, পবিত্র রমজানের ইফতার পার্টি ইত্যাদি সংকুচিত বা সীমিত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেগুলো বন্ধ আছে সেগুলো বন্ধ রাখা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কার্যক্রম সীমিত রাখাসহ ১২টি সুপারিশ এসেছিল বৈঠক থেকে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, সকল ধরনের জনসমাগম সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিয়ে/জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে;মসজিদসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে; পর্যটন/বিনোদনকেন্দ্র সিনেমা হল/থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে।

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না; সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে; বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা/উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে;স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে; শপিংমলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে; সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে; অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; করোনায় আক্রান্ত/করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস! প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানাসমূহ ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা/অসুস্থ/বয়স পঞ্চান্নোর্ধ্ব কর্মকর্তা/কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৬. সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যে কোন ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে; হোটেল-রেস্তোরাঁসমূহে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক মানুষের প্রবেশ বারিত করতে হবে; কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

https://dailysangram.com/post/448224