৩১ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ৭:২৫

নির্বাচনের টুকিটাকি

‘আল্লাহর কাছে বিচার’ চাইলেন দুই প্রার্থী

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে বিচার না পেয়ে আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছেন দুই প্রার্থী।
বৃহস্পতিবার ভোট চলাকালে চৌয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ও নেউরা এমআই উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারতে দেখা যায়। নৌকার ব্যাজ পরা পাঁচ থেকে সাতজন প্রতিটি বুথে সিল মারতে থাকেন। চৌয়ারা কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাক পুলিশের কাছে এসব বিষয় নিয়ে অভিযোগ জানান। তবে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিলে তারা ‘আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে’ কেন্দ্র থেকে চলে যান।
তবে নেউরা কেন্দ্রে গণসিল মারার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা যাওয়ার পর তাড়াহুড়ো করে ব্যালট সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় কিছু ব্যালট পেপার এদিক-ওদিক পড়ে যায়।
ব্যালট পেপার নিয়ে দৌড়, কান ধরে ওঠবস : কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট চলাকালে শাকতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে দৌড় দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন এক ব্যক্তি। পুলিশ প্রথমে তাকে আটক করে। পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাকে কান ধরে ওঠবস করিয়ে ছেড়ে দেন।
নিজামউদ্দিন আহমেদ নামের ওই ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান, তার বাড়ি পাশের শাকতলা এলাকায়। নিজামউদ্দিনকে পুলিশ আটক করার পর কেন্দ্রে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একেএম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। এটি আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এটি বিচারিক হাকিমের এখতিয়ারে পড়ে।’ বিচারিক হাকিমকে তিনি ঘটনাটি জানানোর পরামর্শ দেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, নিজামউদ্দিনকে কান ধরে ওঠবস করিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষার জন্য তিনি এই কাজ করেছেন।
কেন্দ্রের পাশে ১০ ককটেল : কুমিল্লা নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে রাস্তার পাশে ১০টি ককটেল পাওয়া যায়। পরে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে এসব ককটেল পাওয়া যায়। র্যাবব কর্মকর্তা মামুন আবদুল হান্নান বলেন, কে বা কারা পলিথিনে মুড়িয়ে নয়টি ককটেল ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কে ফেলে রাখে। আরেকটি খোলা পড়েছিল। ককটেল পাওয়ার পর ওই সড়কে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে।
ভোট কেন্দ্র দখল, প্রিসাইডিং অফিসারের কান্না : নির্বাচনে হঠাৎ করেই দখল হয়ে যায় ৭নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। কেন্দ্রটি হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শূন্য হয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে জোর করে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে সিল মারতে থাকে। এ সময় কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার দিদারুল ইসলাম জাল ভোট দেয়া থেকে নেতাকর্মীদের বাধা দিতে ব্যর্থ হয়ে নীরবে কাঁদতে থাকেন।
‘ধানের শীষের এজেন্ট খুঁজে বের করেন’ : ৮৪নং কেন্দ্র জাঙ্গালিয়ার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়। সকাল থেকে সেখানে ভোটারদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায়। সিটি কর্পোরেশনের ২১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এই কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কোনো এজেন্ট ছিলেন না। একটি বুথে গিয়ে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট কোথায় জানতে চাইলে এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট বলেন, ধানের শীষের এজেন্ট আপনারাই খুঁজে বের করেন। এখানে এজেন্টদের কোনো কাজ নেই।
হুইল চেয়ারে চড়ে ভোট : বেলা দেড়টা। কড়া রৌদ্রের মাঝে হুইল চেয়ারে শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরুষ কেন্দ্রে এলেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান শিক্ষক আলী আজগর মাস্টার। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূর থেকে আসা এ ভোটারকে অনেকটা পাঁজাকোলে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যান তারই ছেলে আতিকুজ্জামান। এ সময় দুই আনসার সদস্যও সহায়তা করেন এ প্রবীণ ভোটারকে। নিজ হাতে ভোটও দেন তিনি। পরে আলী আজগর মাস্টার যুগান্তরকে বলেন, ভোট দিতে পেরে আমি খুব খুশি। দুই বছর আগে আমি স্ট্রোক করায় পা পার্যালাইজড হয়ে গেছে। চলাফেরা করতে পারি না। তবু ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে এসেছি।
কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারেননি অনেকে : কুমিল্লার কোটবাড়ীর গন্ধমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তাছলিমা আক্তার (এনআইডি নম্বর ১৯২৩৩..................১৩৬৬)। যাওয়ার আগে মোবাইলে মেসেজ দিয়ে ভোটার নম্বরও সংগ্রহ করেন তিনি। কিন্তু ভোট কেন্দ্রে গিয়ে শোনেন ভোটার তালিকায় তার নাম নেই। এ সময় নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ জানান তিনি। কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় তাকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি।
একই ধরনের ঘটনার শিকার হন গর্ভ. ল্যাবরেটরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুই ভোটার আহম্মদ হোসেন ও আমীর হোসেন। ওই কেন্দ্রে বেলা ১১টার দিকে তারা ভোট দিতে গিয়ে ফিরে আসেন। পরে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। আমরা এ এলাকার ভোটার। অথচ ভোটার তালিকায় নাকি মৃত দেখিয়ে আমাদের নাম কর্তন করা হয়েছে। এ কারণে আমরা ভোট দিতে পারিনি।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/03/31/113513/