৩১ মার্চ ২০২১, বুধবার, ৬:৫৭

আরো ৬ এমপি করোনা আক্রান্ত

জাতীয় সংসদ মেডিকেল সেন্টারে করোনা টেস্টে বিশৃঙ্খলা

জাতীয় সংসদ মেডিকেল সেন্টারে করোনা টেস্টে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। অব্যবস্থাপনা আর শৃঙ্খলার অভাবে মেডিকেল সেন্টার থেকে অনেকেই করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । করোনা স্যাম্পল নেয়ার দায়িত্বে থাকা সংসদ সচিবালয় মেডিকেল সেন্টারের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে পর্যাপ্ত লোকবল নেই। অনেক মন্ত্রী, এমপি ও ভিআইপি এখানে আসছেন করোনা টেস্ট করাতে। লোকবলের অভাবে ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে। যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। গত তিনদিনে প্রায় ৭শ’ জনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে সংসদ সচিবালয়ের মেডিকেল সেন্টারে। কিন্তু সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র চার থেকে ৫ জন।

এর মধ্যে সংসদ সচিবালয় মেডিকেল সেন্টারের স্টাফ রয়েছেন মাত্র তিন জন। বাকি এক বা দুইজন আসছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার থেকে। ২৮শে মার্চ ওই ল্যাব থেকে ২ জন কর্মচারী এলেও পরদিন আসেন মাত্র একজন। এদিকে গত কয়েক দিনে সংসদ সচিবালয়ে এসে করোনা টেস্ট করিয়েছেন এমন ৬ জন এমপি আক্রান্ত হয়েছেন। আগামী পহেলা এপ্রিল একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে গত রোববার ও সোমবার দুইদিনে প্রায় একশ’ এমপি করোনা টেস্ট করিয়েছেন। এর মধ্যে চার এমপি’র করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আছেন-হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি আব্দুল মজিদ খান, নীলফামারী-৪ আসনের আহসান আদেলুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম, পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির। এছাড়া গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য বঙ্গতাজকন্যা সিমিন হোসেন রিমি ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন আব্দুল মতিন খসরু। গত ১৫ই মার্চ আব্দুল মতিন খসরু সংসদ সচিবালয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ১৬ই মার্চ সকালে তার রিপোর্টে পজিটিভ আসে। ওইদিনই তাকে সিএমএইচ-এ ভর্তি করা হয়। গত রোববার রাত ১২টার দিকে আব্দুল মতিন খসরুকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু গত ১৩ই মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সিমিন হোসেন রিমিকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার নমুনা দেন তিনি। পরদিন শুক্রবার নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে তার করোনা পজিটিভ আসে। সংশ্লিষ্টরা জানান, যাদের টেস্ট পজিটিভ এসেছে তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত কর্মচারীরা ছিলেন। পাশাপাশি অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন। দেখা গেল যিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের কারণে অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। নিয়মানুযায়ী এবারো সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করতে করোনা নেগেটিভ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। তাই জাতীয় সংসদের মেডিকেল সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় ২৮শে মার্চ থেকে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার (করোনা টেস্ট) কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু সেখানে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যসহ নমুনা জমা দিতে আসা অনেকেই। সরজমিন সোমবার সংসদ মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে করোনা টেস্ট শুরু হয়েছে। মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেখানে নমুনা দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সংসদ সদস্যদের জন্য আলাদা দু’টি চেয়ার রাখা হয়েছে। আর অন্যদের জন্য একটি। ফলে করোনা টেস্ট করাতে এসে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে হট্টগোলও চলছে। সকাল সোয়া ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষাকালে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা গিনি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, সংসদ সদস্য এনামুল হক, আক্তারুজ্জামান বাবু ও সৈয়দা রুবিনা আক্তারসহ অনেককেই সেখানে নমুনা দিতে দেখা যায়। তখন ছোট্ট ঘরে অর্ধশতাধিক মানুষের ভিড় ছিল। কর্মচারীদের হট্টগোল ও ঠেলাঠেলির কারণে সংসদ সদস্যদের মধ্যে চরম বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। দীর্ঘ লাইনের পেছনে এমপিদের দু’টি চেয়ার রাখা হলেও মনিটরিং করার সুব্যবস্থা নেই। গণমাধ্যম কর্মীদেরও পড়তে হয় আরেক বিড়ম্বনায়। সংসদ সচিবালয় থেকে তাদের নমুনা পরীক্ষার জন্য ডাকা হলেও তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। নমুনা সংগ্রহকারীরা সাংবাদিকদের টেস্টের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। জাতীয় সংসদের গণসংযোগ শাখা থেকে নামের তালিকা পাঠানোর কথা বললেও মেডিকেল অফিসাররা সেটা শুনতে নারাজ। সাংবাদিকরা গণসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করলে তারা টেস্টের সকল আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান। এ নিয়ে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মেডিকেলের কর্মকর্তাদের কয়েকদফা ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগের পর এমপিদের আয়োজনের সঙ্গে সাংবাদিকদের টেস্ট করানো হবে বলে একজন নমুনা সংগ্রহকারী জানান। কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে জানান যেহেতু তালিকা দেয়া হয়নি, সেহেতু কাল আসতে হবে। প্রায় দু’ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে ফিরে যান সাংবাদিকরা। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সংসদের কর্মকর্তাদের উপর চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ডা. মাহমুদা খানম সিদ্দিকা। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নমুনা নেয়া হচ্ছে। এই নমুনা পরীক্ষার ফলাফল ৪৮ ঘণ্টা কার্যকর থাকবে। আগামী ৮ই এপ্রিল সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা। সে হিসেবে ৬ই এপ্রিল পর্যন্ত করোনা টেস্ট করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=268300&cat=2