ছবি: জীবন আহমেদ
৩১ মার্চ ২০২১, বুধবার, ৬:৪৯

উল্টোপথে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ক’দিন আগেও বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো ছিল। কিন্তু আচমকা করোনা গ্রাফে বাংলাদেশের উল্টোযাত্রা শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরো পাঁচ হাজার ৪২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে টানা দুইদিন দৈনিক পাঁচ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হলো। সোমবার একদিনে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ১৮১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। রেকর্ড বলছে, গত বছরের ২রা জুলাই একদিনে চার হাজার ১৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল। দেশে টানা আটদিন ধরে দৈনিক সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৩শে মার্চ তিন হাজার ৫৫৪ জনের, ২৪শে মার্চ তিন হাজার ৫৬৭ জনের, ২৫শে মার্চ তিন হাজার ৫৮৭ জনের, ২৬শে মার্চ তিন হাজার ৭৩৭ জনের, ২৭শে মার্চ তিন হাজার ৬৭৪ জনের, ২৮শে মার্চ তিন হাজার ৯০৮ জনের ও ২৯শে মার্চ পাঁচ হাজার ১৮১ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখ পাঁচ হাজার ৯৩৭ জন। গত দু’দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৪৫-এর কোটায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনায় বাংলাদেশে মারা গেছেন আট হাজার ৯৯৪ জন। বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী সব সংস্থার রিপোর্টেই বাংলাদেশ পরিস্থিতির অবনতির চিত্র ফুটে উঠছে। তবে রিপোর্টগুলোতে বাংলাদেশের উল্টোযাত্রা রোধে সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপগুলোও স্থান পাচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ড্যাশ বোর্ডের তথ্য মতে, এশিয়া, ইউরোপসহ দুনিয়ার বহু দেশ করোনা পরিস্থিতির উন্নতি করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন সাড়ে ৫ শতাধিক। আক্রান্তের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ল্যাটিন আমেরিকান দেশ ব্রাজিলের অবস্থান। তবে মৃত্যুতে ব্রাজিল এখন সবার উপরে। গত ৩ দিন ধরে গড়ে দেশটিতে করোনায় দেড় হাজার করে মানুষ মারা যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরেই বৈশ্বিক করোনা আক্রান্তের গ্রাফে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ। আর মারা গেছেন ২শ’ ৭১ জন। করোনা গ্রাফে ভারতের পরপরই এশিয়ার যে ৪টি দেশ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে সেগুলো হলো- ইরান, ইন্দোনেশিয়া, ইসরাইল এবং ইরাক। এশিয়ার ৫ দেশের তুলনায় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখনো ভালো থাকলেও সংক্রমণের লাগাম টানা সম্ভব না হলে তা জ্যামিতিক হারে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রেকর্ড বলছে, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে করোনায় সবচেয়ে পর্যদস্তু হয়েছিল ইতালি এবং স্পেন। কিন্তু এখন মোট আক্রান্তের বিবেচনায় দেশ দুটিকে টপকে সেই স্থান দখল করেছে রাশিয়া, বৃটেন এবং ফ্রান্স। করোনায় মোট মৃত্যু বিবেচনায় এশিয়াতে ভারত, ইরান, ইন্দোনেশিয়া এবং ইরাকের পরেই স্থান করে নিয়েছে পাকিস্তান। যদিও আক্রান্তের দিক থেকে এশিয়ার প্রথম ৫-এ পাকিস্তান নেই। উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। আর করোনায় প্রথম মৃত্যু রেকর্ড হয়েছিল সেই বছরের ১৮ই মার্চে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ পর্যালোচনায় সাউথ ইস্ট এশিয়ান রিজিয়নের দেশগুলোর করোনা পরিস্থিতির তুলনামূলক চিত্র ফুটে ওঠেছে। তাতে ভারতের পরেই ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান দেখানো হয়েছে। সেই গ্রাফে তৃতীয় অবস্থানে রাখা হয়েছে বাংলাদেশকে। চতুর্থ নেপাল, পঞ্চম মিয়ানমার এবং ৬ষ্ঠ শ্রীলঙ্কা। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য মতে, মোট আক্রান্ত এবং মৃত্যুর বিচারে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই এখন ব্রাজিলের স্থান। ২ মিলিয়নের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এমন দেশগুলোর একটি তালিকা করেছে ইউনিভার্সিটি। তাতে স্থান পেয়েছে ভারত, ফ্রান্স, রাশিয়া, বৃটেন, ইতালি, স্পেন, তুরস্ক, জার্মানি, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো এবং পোল্যান্ড। তবে সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে আক্রান্তের তালিকায় মেক্সিকোর অবস্থান বেশ নিচে থাকলেও করোনায় সবচেয়ে বেশি মারা যাওয়া রাষ্ট্রগুলোর তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। এ পর্যন্ত মেক্সিকোতে ২ লাখের বেশি লোক মারা গেছেন। এই ইউনিভার্সিটির তথ্য মতে ৫০ হাজারের বেশি মারা গেছেন এমন রাষ্ট্রের তালিকায় যথাক্রমে ভারত, বৃটেন, ইতালি, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি স্পেন, কলম্বিয়া, ইরান, আর্জেন্টিনা, সাউথ আফ্রিকা, পোল্যান্ড এবং পেরুর নাম স্থান পেয়েছে।

মৃত্যু ৯০০০ ছুঁই ছুঁই, ৪৫ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৫০৪২:
দেশে করোনার সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ভয়ঙ্কর রূপে হাঁটছে করোনা। একদিনে শনাক্তের হার প্রায় ১৯ শতাংশ পৌঁছেছে। মৃত্যুও বাড়ছে হু হু করে। দেশে মৃত্যু ৯ হাজার ছুঁই ছুঁই ঘরে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো ৪৫ জন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ হাজার ৯৯৪ জনে। দেশে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ৫ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। নতুন রোগী ৫ হাজার ৪২ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ জনে। বাংলাদেশে গত বছর ৮ই মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর গত সোমবার প্রথমবারের মতো একদিনে ৫ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের খবর আসে। এর আগে গত বছরের ২রা জুলাই মোট ৪ হাজার ১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত সোমবারের আগে সেটাই ছিল একদিনে শনাক্ত রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা।

গত বছরের ৩০শে নভেম্বরের পর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে সংক্রমণের হার ধারাবাহিকভাবে কম ছিল। যেখানে ২৮শে ফেব্রুয়ারি শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে দৈনিক শনাক্ত রোগী, মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ হতে যেখানে ৭৭ দিন সময় লেগেছিল, তা ৬ লাখে পৌঁছাতে সময় নিয়েছে মাত্র ২২ দিন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=268303&cat=2