২৯ মার্চ ২০২১, সোমবার, ১২:০০

খুলনা-মোংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প

১৭২১ কোটি থেকে ব্যয় বেড়ে ৪৭০৭ কোটি টাকা

কাজই শেষ হচ্ছে না ৫ বার বাড়ল মেয়াদ - এখন পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ

একবার-দুইবার নয়, পাঁচ-পাঁচবার বাড়ল খুলনা-মোংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণকাজের মেয়াদ। তার পরও নির্মাণকাজ এখনো বাকি ২৪ শতাংশ। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। সম্প্রতি নতুন করে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সঙ্গে চাওয়া হয়েছে আরো ৯০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকাও। অথচ ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ। এখন পাঁচ দফায় বেড়ে প্রকল্পটির নতুন ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে প্রায় চার হাজার ৭০৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ায় প্রথমবার ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতেও অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর তৃতীয় দফায় ফের দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় তা বাড়ানো হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়। তাই প্রকল্পটির মেয়াদ পঞ্চম দফায় বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় ৬৪.৭৫ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক ও ৫.১৩ কিলোমিটার রূপসা রেলসেতু নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

খুলনা-মোংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘খালি চোখে দেখলে মনে হয় প্রকল্পের সময় ১০ বছর হয়ে গেছে। মূলত প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে সাড়ে তিন বছর হলো। একটা প্রকল্পের শুরুতে অনেক ধরনের কাজ থাকে। জমির মালিকদের কাগজ ঠিক না থাকায় জমি অধিগ্রহণ করতেই প্রকল্পের একটা লম্বা সময় চলে গেছে। এই অঞ্চল পলিমাটির, ১০ ফুট আগে এক রকম, ১০ ফুট পরে আরেক রকম—তাই অনেক সময় কাজের গতি কমে যায়।’ ব্যয় বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘একেবারে শুরুতে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল তা শুধু প্রাথমিক ধারণা, কাজ শুরু হলেই মূলত ব্যয়টা বোঝা যায়। সেখান থেকে ৯০৫ কোটি টাকার ব্যয় বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে এটা এখনো খসড়া অবস্থাতেই আছে। হয়তো ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়তে পারে।’

এদিকে রেল ভবন সূত্র বলছে, ‘গত চার মাসে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১ শতাংশ, সেখানে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই আরেক দফা সময় বাড়তে পারে।’ ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে সূত্র বলছে, তিনটি প্যাকেজের আওতায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজের (ডাব্লিউডি-১) আওতায় রয়েছে ৬৪.৭৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ, দ্বিতীয় প্যাকেজের (ডাব্লিউডি-২) আওতায় ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসা রেল সেতু নির্মাণ এবং তৃতীয় প্যাকেজের (ডাব্লিউডি-৩) আওতায় আছে সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা স্থাপন।

তিন প্যাকেজের মধ্যে দ্বিতীয়টির আওতায় রূপসা রেল সেতু নির্মাণে নকশা জটিলতা দেখা দেয়। এতে রেল সেতুর পাইল লোড টেস্ট করে দেখা যায়, আগের ডিজাইনে পাইল নির্ধারিত লোড বহনে সক্ষম নয়। ফলে পরামর্শকের সুপারিশে পাইলের গভীরতা বাড়ানো হয়। এতে প্যাকেজটির ব্যয় বেড়েছে। আর প্রথম প্যাকেজটির আওতায় ৩১টি ছোট ও মাঝারি সেতু এবং ১০৭টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো নির্মাণ করতে গিয়ে মাটির গুণাগুণ খারাপ থাকায় পাইলের দৈর্ঘ্য বাড়াতে হয়েছে। এতে প্রথম প্যাকেজের ব্যয়ও বেড়েছে।

এদিকে প্রতিটি স্কিউ (কিছুটা তির্যক) রেল সেতুকে সোজা করে নির্মাণ করায় লাইনার ওয়াটারওয়েকে কাভার করার জন্য সেতুগুলোর স্প্যান বাড়াতে হয়েছে। এ ছাড়া আরডিএসও স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে নির্মাণ সময় কমানোর জন্য কিছু থ্রো টাইপ সেতুকে প্লেট গ্রিডার সেতুতে নির্মাণ করায় সেতুর লেভেল বেড়ে গেছে। ফলে এ উচ্চ লেভেলকে মেলানোর জন্য দুই পাশে ফরমেশন লেভেল/এমব্যাংকমেন্ট প্রোফাইলের উচ্চতা বেড়েছে। এতে বেড়েছে এমব্যাংকমেন্ট ফাইলের পরিমাণও।

এদিকে রেল মন্ত্রণালয়ের বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে সাহায্যের পরিমাণ বেড়েছে ৭৩৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা (৮৬.৮২ মিলিয়ন ডলার)। প্রকল্পের বিপরীতে ৩৮৮.৯২ মিলিয়ন ডলার সাহায্য বরাদ্দ রয়েছে। তবে দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ১০ মিলিয়ন ডলার এ প্রকল্প থেকে বরাদ্দ দেওয়ায় বর্তমানে এই প্রকল্পের বিপরীতে ৩৭৮.৯২ মিলিয়ন ডলার অবশিষ্ট আছে। প্রকল্পের সাহায্যের বিপরীতে এরই মধ্যে ৮০ মিলিয়ন ডলার এলওসি-৩ থেকে অনুমোদিত হয়েছে। অবশিষ্ট ১৬.৮২ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/03/29/1018646