২৯ মার্চ ২০২১, সোমবার, ১১:৫৫

বাড়ছে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি

গত কয়েকদিন হাসপাতালগুলোতে নতুন করে রোগী ভর্তির সুযোগ নেই। একারণে রাজধানীর হাসপাতাল থেকে অনেক রোগী ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। আর দিন যতই যাচ্ছে পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। গতকাল রোববারও দেশে প্রায় চার হাজার রোগী শনাক্ত হয়। এদের অনেকেই এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে সিট না পেয়ে বাসা ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে যেভাবে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়; বাসা থেকে কোনভাবেই তা সম্ভব না। এছাড়া সেবা দেয়ারও বিষয় রয়েছে। এভাবে আক্রান্ত হওয়া রোগী পরিবারের অন্যদের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঝুঁকিতে ফেলছে।

রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীরা বেড পাচ্ছেন না অনেক চেষ্টা তদবির করেও। শেষমেষ বাসায় ফেরাই ভরসা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয়-এমন একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বেডের অভাবে প্রতিদিন রোগীদের ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আর সেসব রোগীদের কারণে হু হু করে বাড়ছে পারিবারিক সংক্রমণ।

বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মনে করেন, ঢাকায় এমনিতেই অনেক মানুষের আইসোলেশনে থাকার জন্য আলাদা রুমসহ অন্যান্য সুবিধা নেই। বলা যায় সরকারি সুবিধার অভাবই তাকে বাধ্য করলো ভাইরাস ট্রান্সমিশন করার জন্য। রোগী কিন্তু এসেছিল আমাদের সাহায্যের জন্য। আমরাই করতে পারিনি।

তিনি বলেন, একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির যদি সঠিক আইসোলেশন ব্যবস্থা না হয়, তবে তার পুরো পরিবার আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্যই প্রতিদিন আক্রান্তের হার বাড়ছে। আর এসব রোগী গণপরিবহনে যাতায়াত করলেও আক্রান্তের সংখ্যাও গণহারে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখন প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলশন বাড়াতে হবে। প্রতিটি স্কুল-কলেজ-কমিউনিটি সেন্টারে, যেখানে কমিউনিটি আইলোশন সেন্টার হতে পারে এবং হাই-ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া যেতে পারে সেখানেই এমনটা করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর শনিবার করোনা-বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রাজধানী ঢাকার ডেডিকেটেড কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ১৬ বেড, কুর্মিটোলা জেনারেল হাপসাতালের ১০ বেড, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০ বেড, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ১৯ বেড ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আইসিইউ বেডের একটিও ফাঁকা নেই।

শুধু শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টি বেডের দুটি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ছয়টির মধ্যে একটি ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ১৫টির মধ্যে দুটি বেড ফাঁকা রয়েছে। অর্থাৎ, করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোর ১০৮টি বেডের মধ্যে রোগী আছে ১০৩ জন। বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র পাঁচটি। অপরদিকে, অধিদফতরের তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১৮৮টি বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি ১৪৩ জন, বেড ফাঁকা ৪৫টি। পুরো ঢাকায় অধিদফতরের তালিকাভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট আইসিইউ বেড ২৯৬টি। এর মধ্যে রোগী ভর্তি ২৪৬ জন। বেড ফাঁকা ৫০টি।

গত ছয়দিন ধরে দেশে দৈনিক শনাক্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতর ২৭ মার্চ জানিয়েছে, গত সপ্তাহের (১৪ মার্চ থেকে ২০ মার্চ) তুলনায় চলতি সপ্তাহ (২১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ) পর্যন্ত করোনার দৈনিক নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত, সুস্থতা এবং মৃত্যুহার বেড়েছে।

গত ২৫ মার্চ করোনা আক্রান্ত ৬৫ বছরের হারেস আলী নামের এক রোগী ‘স্কয়ার, ইমপালস, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ইবনে সিনা, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী, কাকরাইলের ইসলামি ব্যাংক ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ঘুরে ভর্তি করাতে পারেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পেশায় ফিজিও থেরাপিস্ট এই ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ‘শুনছিলাম পরিস্থিতি খারাপ, কিন্তু এতোটা খারাপ তা নিজের বেলায় না ঘটলে বুঝতাম না। পরিস্থিতি ভয়ানক, খুব ভয়ানক!’ তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছি। ভেবেছিলাম একটা বেড অন্তত ম্যানেজ করতে পারবো। পারলাম না। অন্যদের কী ভোগান্তি হচ্ছে সেটা ভাবতেও পারছি না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে রোগীরা ভর্তি হতে না পেরে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসব রোগীর পরিপূর্ণ আইসোলেশন বাসায় করা সম্ভব নয়। তাতে তাদের কারণে সংক্রমণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি মানে নিশ্চিত করে বলা যায় তার মাধ্যমে আরও অনেকে সংক্রমিত হচ্ছেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (সার্জারি) ডা. রাজীব দে সরকার জানালেন, ‘সরকারি-বেসরকারি কোভিড হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। চাইলেও রোগী ভর্তি করানো যাচ্ছে না। আমি করোনাতে আক্রান্ত হলেও ভর্তি হতে পারবো না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি আয়ত্বের বাইরে যাবার আগে লাগাম টানার ব্যবস্থা করা দরকার। নয়তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সবাইকে এখন যেভাবে হোক বাধ্য করা দরকার। নয়তো হাসপাতাল বাড়িয়েও বেড দেয়া যাবে না।

https://dailysangram.com/post/447964