২৯ মার্চ ২০২১, সোমবার, ১১:৫৫

সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই

করোনা শনাক্ত ৩৯০৮ জন : মৃত্যু ৩৫

সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই। রোগীর অভিভাবকেরা ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। এ দিকে প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। গতকাল রোববার সারা দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৯০৮ জন। আজকালের মধ্যেই করোনা শনাক্তের আগের রেকর্ড অতিক্রম করার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। যারা করোনা শনাক্ত হচ্ছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই ষাটোর্ধ ব্যক্তি। এই বয়সী ব্যক্তিদেরই আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল করোনায় চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৫ জন। এর আগে ২৭ মার্চ এক দিনে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৯ জন। বাংলাদেশে গত বছরের ৩০ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬৪ জন।

করোনা টেস্টের মেশিন ও পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ করোনা পরীক্ষা করাতে পারছে। গতকাল সারা দেশের মোট ২২৪টি পরীক্ষাগারে ২২ হাজার ১৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করেছে এবং নমুনা পরীক্ষার সাপেক্ষে গতকাল করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৭.৬৫ শতাংশ। অন্য দিকে করোনা শনাক্ত সাপেক্ষে গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ছিল ১.৪৯ শতাংশ।

এ দিকে বেসরকারি হাসপাতালে কিছু আইসিইউ বেড খালি থাকলেও সেখানে যেতে ভরসা পাচ্ছেন না রোগীরা। রোগীর অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসায় ফাঁকি এবং উচ্চ খরচের কারণে তারা বেসরকারি হাসপাতালে যেতে ভরসা পান না। গতকাল সকালে এমন একজন অভিভাবক হাসিবুর রহমান জানালেন, তারা প্রথমে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন তাদের নানাকে ভর্তি করানোর জন্য। নানার অবস্থা ভালো না, আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে। ফলে তিনি সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে যান এবং সাধারণ বেডেই ভর্তি করান রোগীকে। তিনি জানান, যেভাবেই হোক এখানে একটি আইসিইউ বেড ম্যানেজ করে নেবেন।

কোভিড ঘোষিত সরকারি হাসপাতালে একটি আইসিইউ বেডের জন্য নানা জায়গায় তদবির করেও অনেকে পাচ্ছেন না কোনো আইসিইউ। রাজধানীর কোভিড ঘোষিত ১০ সরকারি হাসপাতালের ১০৫টি আইসিইউ বেডের মধ্যে গতকাল রোববার তিনটি আইসিইউ বেড খালি ছিল। এর মধ্যে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে একটি, মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে একটি এবং গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে একটি আইসিইউ বেড খালি ছিল। তবে আইসিইউ বেড খালি না থাকলেও রাজধানীর কোভিড ঘোষিত ১০ সরকারি হাসপাতালে (একটি স্বায়ত্তশাসিত) করোনা রোগীদের জন্য সাধারণ বেড খালি ছিল ৪২২টি বেড। এ ১০ সরকারি হাসপাতালে মোট দুই হাজার ৪০১টি বেড কোভিড রোগীদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল এসব হাসপাতালে ভর্তি ছিল এক হাজার ৯৭৯টি। অপর দিকে রাজধানীর ৯টি বেসরকারি হাসপাতালে ৯২৮ সাধারণ বেড রয়েছে এবং গতকাল রোববার খালি ছিল ৩৬৫টি সাধারণ বেড। এই ৯ হাসপাতালের আইসিইউ বেড খালি ছিল ৪৩টি। অন্য দিকে চট্টগ্রামের কোভিড ঘোষিত ৪ সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি ছিল ১৫টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ৯টি, ফৌজদারহাটের বিআইটিআইটিতে পাঁচটি এবং ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ছিল একটি। চট্টগ্রামের এই তিন সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেডই রয়েছে মাত্র ২৫টি। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, সারা দেশে মোট ১৩ হাজার ৪৬২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে ৯৮০টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে ৮২৯টি।
গত বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত করোনার সংক্রমণের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে রোগীর অভিভাবকেরা রোগী নিয়ে দৈনিক বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিন্তু ‘ভর্তি করাতে পারছেন না’ এই চিত্র ছিল নৈমিত্তিক। এবার ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণে কোভিড চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত বড় সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখনো সাধারণ বেড রয়েছে। হাহাকার লেগেছে আইসিইউ বেড নিয়ে।

চট্টগ্রামে এক দিনে ১১০ রোগী শনাক্ত
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গত এক দিনে ১১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এক হাজার ৫৫২টি নমুনা পরীক্ষা করে তা শনাক্ত হয়। গত রোববার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজসহ চট্টগ্রামে পাঁচটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়। এতে শনাক্তের হার ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে নগরে ৯৮ জন এবং উপজেলায় ১২ জন। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৩৯ হাজার ২১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৮৪ জনের।

রাজশাহীতে চিকিৎসকসহ ২ জনের মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে দুইজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন চিকিৎসক। অন্যজন গৃহিণী। শনিবার রাতে তারা মারা যান। রামেক হাসপাতালের আইসিইউর ইনচার্জ ডা: আবু হেনা মোস্তফা কামাল তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মারা যাওয়া চিকিৎসকের নাম আবদুল হান্নান (৪৬)। তিনি রামেকের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। ডা: হান্নান রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাত থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

অন্য দিকে শনিবার রাত ১টা ৪৫ মিনিটে হাসপাতালের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহিদা বেগম (৪৫) নামে আরেক নারীর মৃত্যু হয়। তার বাড়ি নওগাঁ সদরের চক এনায়েতপুর গ্রামে। গত ৪ মার্চ থেকে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

রামেকের অধ্যক্ষ ডা: নওশাদ আলী জানান, গত মঙ্গলবার হঠাৎ ডা: আবদুল হান্নানের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই দিন রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার সারা দিনই তিনি রোগী দেখেছেন। কোনো সমস্যা ছিল না। হঠাৎ অসুস্থ হয়েই অবস্থা খারাপ পর্যায়ে চলে যায়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পর দিন নমুনা পরীক্ষা করে তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।

ডা: নওশাদ আলী আরো বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ডা: হান্নানকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অবস্থা জটিল হওয়ায় তাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ডা: হান্নানকে গুরুতর অবস্থায় আইসিইউতেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/572301