২৯ মার্চ ২০২১, সোমবার, ১১:৪৬

৫ সহস্রাধিক যান-যন্ত্রপাতি কিনতে চায় ডিএসসিসি

পণ্যভিত্তিক দর উল্লেখ ও তৃতীয় পক্ষ দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সড়ক সংস্কারের জন্য পাঁচ হাজার ১৩৫টি বিভিন্ন ধরনের যান ও যন্ত্রপাতি কিনবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। দেড় বছরে এই যান-যন্ত্রপাতি কেনার জন্য তিন শ’ ৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে তারা। সংস্থার অভ্যন্তরীণ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা দিয়েই এই বিরাট পরিমাণ যান-যন্ত্রপাতি কেনা হবে। তবে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে তৃতীয় কোনো পক্ষের মাধ্যমে এই সমীক্ষা করার জন্য বলা হয়েছে। আর এসব কেনার ক্ষেত্রে পণ্যভিত্তিক দর ও উল্লিখিত ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করার জন্য বলেছে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ক্লিন ঢাকা মাস্টারপ্ল্যান ২০০৫ সালের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা শহরে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে বর্জ্যরে পরিমাণও। ২০০৪ সালে ঢাকা শহরে উৎপাদিত বর্জ্যের পরিমাণ ছিল প্রতিদিন ৩ হাজার ২ শ’ টন। ২০১০ সালে এই বর্জ্যরে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩ হাজার ৯০৯ টন। আর ২০১৫ সালে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬২৪ টনে। গৃহস্থালির বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ জনপ্রতি শূন্য দশমিক ৩৪ কেজি ছিল দৈনিক। আর রাস্তার বর্জ্য, বাণিজ্যিক বর্জ্য সব মিলিয়ে দৈনিক উৎপাদিত বর্জ্যরে পরিমাণ জনপ্রতি শূন্য দশমিক ৫৬ কেজি। বর্তমানে জনপ্রতি উৎপাদিত বর্জ্যরে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে শূন্য দশমিক ৭৮ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। সে অনুযায়ী শুধুমাত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমানে দৈনিক উৎপাদিত বর্জ্যরে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৪ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। সিটি করপোরেশনের অন্যতম প্রধান কাজ হলো বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা কাজ। এখন নতুন করে আরো ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত এইসব কাজের জন্য বর্জ্যবাহী গাড়ি, বৈদ্যুতিক সেবা ও সরঞ্জামাদির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ডিএসসিসির অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা, সড়ক মেরামতে ব্যবহৃত আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং মেকানাইজড পার্কিং স্থাপনের মাধ্যমে যানজট নিরসরণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। যাতে খরচ ধরা হয়েছে ৩৩৪ কোটি ৭২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে।

প্রকল্পের জন্য যা কেনা হবে : ৩০টি হাইড্রোলিক ল্যাডার, জইন ডোজার ৫টি, বেকহো লোডার ৫টি, পে লোডার ৫টি, মাইক্রোবাস ৫টি, ডক কালেকশন ভেইকেল ২টি, ২টি পোর্টেবল এয়ার কস্প্রেসার, রোড সুইপার ১০টি, ৮ টনের দুই চাকার রোড রোলার, টায়ার ডোজার ৩টি, ট্রেইলর একটি, পানির গাড়ি ১০টি, সাকার মেশিন ২টি, হ্যান্ড ট্রলি ৫ হাজারটি। দুই চাকার রোড রোলার ৫টি, পেভার ফিনিশার একটি, মোবাইল টয়লেট ৫টি ভিআইপি, ৫টি সাধারণ, জিপ ৩টি, ৫টি পিকআপ, ৫টি ট্রাক ইত্যাদি।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্পের ব্যাপারে বলছে, ইতোমধ্যে ২৯টি জিপ, ২৫টি পিকআপ এবং ৮টি মাইক্রোবাস ডিএসসিসিতে বিদ্যমান আছে। চলমান দুটি প্রকল্পের আওতায় ৩টি জিপ ও ৩টি পিকআপ কেনার সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে এই প্রকল্পে গাড়ির সংখ্যা যৌক্তিকভাবে কমাতে হবে। একইভাবে ওই দুই প্রকল্পে ৫টি রোড রোলার, ৪টি পে লোডার ও ১ হাজার ৮ শ’টি হ্যান্ড ট্রলি কেনার সুপারিশ করা হয়েছে। এখানে এগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা দরকার। ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ১৩৫টি বিভিন্ন ধরনের যান ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২৮৮ কোটি ৮৮ লাখ ৯ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি হিসাবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত দর ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রত্যয়ন ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রকল্পের নামে অফিসে ৫ লাখ টাকার ফার্নিচার কেনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কী ফার্নিচার কেনা হবে তার তালিকা দেয়া হয়নি। অন্য দিকে, প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। এ খাতের ব্যয় আলোচনাসাপেক্ষে পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্মপ্রধান মো: সেলিম স্বাক্ষরিত কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/572319