২৮ মার্চ ২০২১, রবিবার, ১১:৩১

মুরগির বাজারে অসহায় ক্রেতা

এক মাসে কেজিতে ব্রয়লার ৫০ ও সোনালি ১০০ টাকা বেড়েছে

দু'মাস আগেও বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১০০ টাকা ছিল। গত মাসে ছিল ১২০ টাকা কেজি। এখন তা বেড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় উঠেছে। সব ধরনের মুরগির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো খাদ্যে পুষ্টিমান বজায় রাখার সমস্যায় পড়ছে।

পোলট্রি খাতের সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে মুরগির বাজারে ব্রয়লারের অংশ ৬০ শতাংশ। সোনালি ৩০ এবং লেয়ার, দেশিসহ অন্যান্য জাতের মুরগি বিক্রি হয় ১০ শতাংশ। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্রয়লার ও সোনালি প্রায় সমান বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে প্রতি কেজিতে ব্রয়লার ৫০ ও সোনালি মুরগির দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। শবেবরাত ও রমজানের আগে মুরগির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

বর্তমানে বাজারে চাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম চড়া। এ অবস্থায় মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই এখন বাজার তালিকা থেকে মুরগি বাদ দিচ্ছেন- এমনটা জানালেন মহাখালী বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. মোহন। তিনি বলেন, আগে যেসব ক্রেতা নিয়মিত মুরগি কিনতেন তাদের অনেককে মুরগি কেনার জন্য ডাকলেও আসছেন না। তারা পরে কেনার কথা বলছেন।

করোনার অভিঘাত :মহামারি করোনা সংক্রমণের শুরুতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর গত এপ্রিলে মুরগি বিক্রি করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এতে খাবারের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তখন খামারের মালিকরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছেন। ওই সময় বাজারে দাম ৮০ টাকা কেজিতে নেমেছিল। হ্যাচারির মালিকরা এক দিনের বাচ্চা বিক্রি করতে না পেরে মেরে ফেলেছিলেন। সারাদেশের খামারিরা বাচ্চা না তুলে খামার বন্ধ রাখেন।

এরপর করোনায় অর্থ সংকটে পড়ে অনেকে মূলধন হারিয়েছেন। এখনও ৩০ শতাংশ খামার চালু হয়নি। তাছাড়া শীতের সময়ে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে এই ভয়ে অনেকে খামারে মুরগির বাচ্চা তোলেননি। এতে বাজারে চাহিদার তুলনায় মুরগির উৎপাদন ঘাটতি দেখা দেওয়ায় এখন দাম বাড়ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। খামারে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারে তা ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। গত মাসের শুরুতে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা ছিল। প্রায় একই হারে বেড়ে এখন দেশি মুরগি ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকা কেজি। বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ ঘাটতি ও ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার একসঙ্গে সব ধরনের মুরগির দাম বাড়ল।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সোনালি মুরগির ৪৪ শতাংশ ও ব্রয়লার মুরগির ২২ শতাংশ দাম বেড়েছে।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মসিউর রহমান সমকালকে বলেন, গত বছর করোনা মহামারির কারণে এক মাস সব খামার বন্ধ ছিল। এরপর ধীরে ধীরে চালু হলেও এখনও ৩০ শতাংশ খামার বন্ধ আছে। আর এই জানুয়ারিতে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় নানা অনুষ্ঠান আয়োজন বেড়েছে। এতে মুরগির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া রমজান ও ঈদ বাজারের ভালো দামের আশায় অনেকে দেরিতে খামারে মুরগি তুলেছেন। এতে বাজারে সরবরাহ কমেছে। তিনি আরও বলেন, এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচ ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। এতদিন ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করে খামারিরা লোকসান দিয়েছেন। এখন খামারে ব্রয়লার ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাতে খামারিদের কিছুটা লোকসান কাটছে। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বাজারে দাম বেশি বেড়েছে।

গরু ও মুরগির মাংসের দাম সমান: বাজারে আগের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। প্রতি কেজি ৫৬০ থেকে ৫৮০ টাকা। গরু মাংসের এই দামের প্রায় সমান দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগির মাংস। এক কেজি সোনালি মুরগি ৩৫০ টাকায় কিনলে প্রকৃত মাংস হয় ৬০০ গ্রাম। এ হিসাবে মাংসের কেজি পড়ে ৫৮৩ টাকা। আর ব্রয়লার মাংসের কেজি ২৮৩ টাকা।

অনলাইনে কক বা সোনালি মুরগির মাংস প্রতি কেজি ৬৩০ থেকে ৬৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দর গরুর মাংসের দাম হার মানায়। দেশি মুরগির মাংসের কেজি প্রায় ৮০০ টাকা, যা খাসির মাংসের দাম ছুঁই ছুঁই। জনপ্রিয় একটি অনলাইন শপের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, আধাকেজি ওজনের একটি সোনালি মুরগির দাম ছিল ৩১৯ টাকা। এতে কেজি পড়ে ৬৩৮ টাকা। যদিও একই শপে গরুর মাংসের দাম ছিল ৫৬৯ টাকা। দেশি মুরগির মাংস ৫৫০ গ্রাম ওজনের দাম ৪৩৯ টাকা। এতে কেজি পড়ে ৭৯৮ টাকা।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিঅ্যাব) সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান সমকালকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পোলট্রি ফিডের কাঁচামালের দাম ও জাহাজভাড়া মিলে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। দেশের বাজারে ফিডের দাম মাত্র পাঁচ শতাংশ বেড়েছে। তিনি বলেন, আমদানি করা ফিডের কাঁচামাল নিয়ে চট্টগ্রামে তিন সপ্তাহ আগে জাহাজ এসেছে। কিন্তু চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিআরটিসি ল্যাবের কিট না থাকায় পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে কাঁচামাল খালাস হচ্ছে না। ফলে বাড়তি জাহাজভাড়া গুনতে হবে। ফিঅ্যাব সভাপতি বলেন, এখন বিকল্প ল্যাবের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা করে পোলট্রি ফিডের কাঁচামাল দ্রুত খালাস করা প্রয়োজন। খালাসে দেরি হলে ফিডের সংকট তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা চান তিনি।

https://samakal.com/economics/article/210357176