২৮ মার্চ ২০২১, রবিবার, ১১:২৮

চাহিদার অর্ধেক চিনিও মজুদ নেই সরকারের

দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৮ লাখ টন। এর তিন লাখ টনই লাগে রমজান মাসে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিবছর রমজান সামনে রেখে নানা অজুহাতে চিনির দাম বাড়িয়ে দেন। চিনির বাজার এসব অসাধু ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে রোজার চাহিদা বিবেচনায় রেখে প্রতিবছর এক লাখ টন থেকে এক লাখ ২০ হাজার টনের মতো চিনি সরকার মজুদ রাখে। কিন্তু এবার সরকারি ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর উৎপাদনও সন্তোষজনক নয়। ফলে এবার রোজা সামনে রেখে সরকারি পর্যায়ে চিনির মজুদ নেমে এসেছে ৫০ হাজার টনে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, রমজানে চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারি পর্যায়ে এই মজুদ পর্যাপ্ত নয়। যদিও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রমজানের চাহিদা মোকাবেলায় এই মজুদকেই যথেষ্ট বলে দাবি করছেন।

বিএসএফআইসির পরিচালক (বাণিজ্যিক) আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, করপোরেশনের কাছে এবার রোজার জন্য ৫০ হাজার টনের মতো চিনি আছে। রোজা সামনে রেখে তা থেকে এরই মধ্যে বাজারে বিক্রিও শুরু হয়েছে। বেসরকারি খাতের কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রির চেষ্টা করলে সরকারি চিনি বেশি পরিমাণে ছাড়া হবে। এতে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পণ্য না থাকলে বেসরকারি খাতের ওপর

নির্ভর করতে হয়। সরকারি চিনিকলে পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য কঠিন হবে।

সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুরে সোসাইটি মার্কেট ঘুরে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে চিনির দাম গড়ে ১০ টাকা বেড়েছে। বেসরকারি চিনিকলে উৎপাদিত ফ্রেশ ও তীর ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি চিনি ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত চিনির চাহিদা থাকলেও ওই মার্কেটের বেশির ভাগ দোকানে তা নেই। কয়েক দোকান ঘুরে নওশাদ স্টোরে গিয়ে দেশে উৎপাদিত চিনি পাওয়া গেলেও দাম বেশি, ৮২ টাকা কেজি।

ব্যবসায়ীদের অনেকে চিনির দাম বাড়ার জন্য বাড়তি শুল্ক ও করোনা সংকটের অজুহাত দেন। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারি কারখানায় উৎপাদিত চিনি এবার বাজারে নেই বললেই চলে। ফলে বেসরকারি চিনিকলের উৎপাদন ও আমদানির ওপর বাজার নির্ভরশীল। বিদ্যমান শুল্ক ও ভ্যাট না থাকলে চিনি কিছুটা কম দামে পাওয়া যেত। এ ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অন্যান্য ব্যয়ও বেড়েছে। এর ফলে চিনির দাম বেড়েছে।

বর্তমানে প্রতি টন চিনি আমদানিতে শুল্ক তিন হাজার টাকা, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ এবং অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ। এর সঙ্গে বিক্রি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ট্রেড ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। চিনির বড় চালানগুলো আসে চীন থেকে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর আগের সময়ের তুলনায় কনটেইনারভাড়া বেড়েছে। ২০ ফুটের একটি কনটেইনারের ভাড়া আগে ছিল ৮০০ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৭৮০ টাকা।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/03/28/1018333