২৮ মার্চ ২০২১, রবিবার, ১১:২৬

করোনা : আবারো ভয়াবহ হয়ে উঠছে হাসপাতালের পরিস্থিতি

হাফিজ এম উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক ওয়ালে একজন ডাক্তারের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন করোনার ভয়াবহ চিত্রের কথা। ডা: সাইয়েদা নাজিয়া নামের ওই ডাক্তারকে উদ্ধৃত করে হাফিজ উল্লাহ লেখেন, ‘গতকাল ২৪ মার্চের নাইট ডিউটি ছিল মুগদা হাসপাতালে আমার কোভিড ডিউটির ভয়ঙ্করতম রাত। ফজর পর্যন্ত আমি এবং আমার তিন কলিগ সাত তলা থেকে ১২ তলা পর্যন্ত অবিরাম ছুটে বেড়িয়েছি। ওয়ার্ডে পা দিয়েই একটা ডেড বডি।’

ডাক্তারের উদ্ধৃতি দিয়ে হাফিজ উল্লাহ লেখেন, ‘অবিরাম রোগী আসছে শ্বাসকষ্ট নিয়ে। বেশির ভাগ রোগীর ফুসফুস ৩০-৬০ % আক্রান্ত। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৭০ থেকে ৮০ পার্সেন্ট। আইসিইউতে অবিরাম কল যাচ্ছে; কিন্তু ১৪ বেডের আইসিইউ খালি হচ্ছে না। পঁচিশটা আইসিইউ কল পেন্ডিং। রোগীর এটেনডেন্টের অসহায় আর্তনাদে রাতের বাতাস ভারী। তাদের কাকুতি-মিনতি, যত টাকা লাগে ডক্টর একটা আইসিইউ দিন। তাদের কাছে উল্টো ক্ষমা চাই; বোঝাতে পারি না ওয়ার্ডে ১৫ লিটারের বেশি অক্সিজেন দেয়া যায় না, যেখানে পেশেন্টের দরকার ৬০-৭০ লিটার পার মিনিট অক্সিজেন। আমাদের অক্ষমতা আমাদের অশ্রু কেউ দেখে না। চোখের সামনে স্যাচুরেশন পঞ্চাশে নেমে আসে, এতটা অসহায় আর কখনো লাগেনি নিজেকে। এমনকি ২০১৯-এ ডেঙ্গু মহামারীতে একা ২০০ পেশেন্ট ম্যানেজ করার সময়ও না!

রাত তিনটার মধ্যে বাইশটা পেশেন্ট ভর্তি! অষ্টম-নবম তলা থেকে খবর আসে আমরা ফুললি অকুপাইড, কোনো বেড খালি নেই। ভোরের দিকে আবার মৃত্যু। ইমার্জেন্সির সামনে অ্যাম্বুলেন্সের ভিড়। সীমিত জনবল আর লজিস্টিকস নিয়ে আমরা এই করোনা ঝড়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি! অসম এই লড়াইয়ে আমরা হারতে চাই না। তাই দুইবার করোনা আক্রান্ত হয়েও ডিউটিতে ফিরেছি। অনেক সহকর্মী হারিয়েছে তার আপনজন। ১১ মাসের টানা লড়াইয়ে আমরা বিপর্যস্ত। তাই ডাক্তারকে গালি দেয়া বন্ধ করে নিজেরা একটু দায়িত্বশীল হোন। আইসিউ বেড বা অক্সিজেন আমরা তৈরি করি না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, অকারণে ঘরের বাইরে যাবেন না!
ঐবষঢ় ঁং ঃড় ভরমযঃ ঃযব ঢ়ধহফবসরপ!

ঢাকার হাসপাতালগুলোর কিন্তু এই একই অবস্থা। গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো বেড খালি নেই। হাসপাতালে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি আছেন ৬০০-এর মতো। এরমধ্যে গতকালই ভর্তি হয়েছেন ২২ জন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালের সাধারণ বেডে রোগী আছেন ৫৩০ জন। বেড আছে ৫৩২টি। দু’টো বেড খালি রাখা থাকে নতুন রোগীদের জন্য, যাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সিসিইউতে রয়েছে ১২ জন, এইচডিইউতে রয়েছে ২২ জন, কেবিনে রয়েছে ২১ জন এবং বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে রয়েছে ১০ জন রোগী। করোনা ইউনিটের আইসিইউতে আগুন লাগার পর তা এখনো সচল হয়নি বলে বার্ন ইউনিটের আইসিইউ ব্যবহৃত হচ্ছে করোনা রোগীদের জন্য।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর কোনো সিট খালি নেই। তারপরেও রোগী আসছেন। তাদেরকে অন্যান্য হাসপাতালে পাঠনো হচ্ছে। গতকাল ২২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণে আছেন আরো কয়েকজন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/572063