২৮ মার্চ ২০২১, রবিবার, ১১:২২

রোগী ধারণের ঠাঁই নাই রাজধানীর হাসপাতালে

দেশে একদিনে প্রাণ গেল ৩৯ জনের

ইবরাহীম খলিল : করোনার সংক্রমণ আবার দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। কয়েকদিন ধরেই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। এমতাবস্থায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ব্যাপকহারে রোগীর ভিড় বাড়ছে। ফলে নতুন করে ভর্তি হওয়া রোগীদের সিট দিতে পারছে না। নিতে পারছে না ভর্তি। হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ঠাঁই নেই অবস্থা।

গত কয়েকদিন ধরেই দৈনিক করোনা শনাক্ত তিন হাজারের বেশি। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সংকটে পড়েছেন করোনা আক্রান্ত রোগী। তবে এ চিত্র রাজধানী ঢাকায় ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। রাজধানীতে রোগীদের ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীত মৌসুমে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হলেও শীতের সময়ে সংক্রমণের হার কমে আসে, কমে আসে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৯২ শতাংশ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল দুই দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে শীতের শেষে আবার বাড়তে শুরু করে করোনা রোগী। বিশেষ করে চলতি মাসের শুরু থেকেই দৈনিক শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে। ১ মার্চ থেকে শনাক্তের হার চারের ওপরে চলে যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে সেটা তিন থেকে চারের ভেতরে ছিল। ৭ মার্চের পর থেকে বাড়তে থাকে এবং সেটা বেড়েই চলেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, গত বছরে যেটা মে-জুন-জুলাইয়ের দিকে হয়েছিল সেটা এবছরে হয়ে যাচ্ছে মার্চের দিকে। প্রথমেই সবগুলো সরকারি আইসিইউ বেড পূর্ণ হয়ে গেলো। সাধারণ বেডও প্রায় পূর্ণ। অথচ কারো মাঝে একটু সতর্কতাও চোখে পড়ে না। করোনার এই ঊর্ধ্বগতির সংক্রমণ কতোটা ভয়ঙ্কর হতে যাচ্ছে সেটা বোঝা যায় সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালের বেড সংকট দেখলেও। তবে এই সংকট রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী ঢাকায় করোনা সংক্রমণ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। যার কারণে এখানে তালিকাভুক্ত হাসপাতালের সাধারণ বেড ও আইসিইউ সংকট চলছে। এমনকী তালিকাভুক্ত হাসপাতালের বাইরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও বেড সংকট। বেডের অভাবে রোগীদের ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

গতকাল শনিবার দেশে করোনায় একদিনে আরও ৩৯ জনের মৃত্যু হয়; যা গত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এর চেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছিল গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর। সেদিন ৪০ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩ হাজার ৬৭৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গত এক দিনে মারা যাওয়া ৩৯ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট ৮ হাজার ৮৬৯ জনের মৃত্যু হল। আর ৩ হাজার ৬৭৪ জন নতুন রোগী নিয়ে এ পর্যন্ত দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৯১ হাজার ৮০৬ জনে।

এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যুহার বেড়েছে। গত সপ্তাহের (১৪ মার্চ থেকে ২০ মার্চ) তুলনায় চলতি সপ্তাহ (২১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ) পর্যন্ত করোনার দৈনিক নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত, সুস্থতা এবং মৃত্যুহার বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৬টি, আর চলতি সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৩টি। নমুনা পরীক্ষার হার বেড়েছে ২৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

গত সপ্তাহে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৪৭০ জন, আর চলতি সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ১০০ জন। শনাক্তের হার বেড়েছে ৮৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত সপ্তাহে সুস্থ হয়েছিলেন ১০ হাজার ৪০৮ জন, আর চলতি সপ্তাহে সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ২০৪ জন। সুস্থতার হার বেড়েছে ২৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত সপ্তাহে মারা গেছেন ১৪১ জন, আর চলতি সপ্তাহে মারা গেছেন ২০১ জন। মৃত্যুহার বেড়েছে ৪২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

গত পাঁচ দিন ধরে দেশে দৈনিক শনাক্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি আরও নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।

এদিকে দেশে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে জ্যামিতিক হারে সংক্রমণ বাড়ছে। নানা অব্যবস্থাপনায় করোনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছেই।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘গত কয়েকদিন যাবৎ যেভাবে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে, এভাবে আগামী ১৫ দিন চললে রাজধানীর হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করাই দুরূহ হয়ে পড়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত এক দিনে দেশে আরও ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এর চেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছিল গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর। সেদিন ৪০ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল সরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩ হাজার ৬৭৪ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গত এক দিনে মারা যাওয়া ৩৯ জনকে নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মোট ৮ হাজার ৮৬৯ জনের মৃত্যু হল। আর ৩ হাজার ৬৭৪ জন নতুন রোগী নিয়ে এ পর্যন্ত দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৯১ হাজার ৮০৬ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৯৭১ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৯২২ জন হয়েছে।

বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১২ কোটি ৬১ লাখ পেরিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৪ তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৪০তম অবস্থানে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট ২২৪টি ল্যাবে ২৪ হাজার ৬৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৪টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ২২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭৬টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৮১৮টি। গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ আর নারী ১৫ জন। তাদের প্রত্যেকেই হাসপাতালে মারা গেছেন।

তাদের মধ্যে ২৫ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরে মধ্যে, ১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং ৩ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। মৃতদের মধ্যে ২৮ জন ঢাকা বিভাগের, ৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ২ জন করে মোট ৪ জন রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের, এবং ১ জন করে মোট ২ জন সিলেট ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৮ হাজার ৮৬৯ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৬৯৫ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ১৭৪ জন নারী।

তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৯৫৭ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ২ হাজার ২০৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৯৯৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪৩৪ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৭৪ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৬৭ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৭ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম। মৃতদের মধ্যে ৫ হাজার ২৮ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৬২০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪৯২ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৭৩ জন খুলনা বিভাগের, ২৬৭ জন বরিশাল বিভাগের, ৩১৭ জন সিলেট বিভাগের, ৩৭২ জন রংপুর বিভাগের এবং ২০০ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।  

https://dailysangram.com/post/447884