২৬ মার্চ ২০২১, শুক্রবার, ১১:৫৯

টিকা রপ্তানি স্থগিত করেছে ভারত

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকার সব রকম বড় রপ্তানি সাময়িক স্থগিত করেছে ভারত। করোনাভাইরাসের নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, গতকাল থেকে কোনো টিকা রপ্তানি করেনি ভারত। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই এ খবর দিয়েছে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে টিকাদান কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটবে। একই সঙ্গে জিএভিআই/ডব্লিউএইচও সমর্থিত বিশ্বব্যাপী কোভ্যাক্স কার্যক্রমেও এই টিকার সরবরাহ আটকে যাবে। কোভ্যাক্স কার্যক্রমের মাধ্যমে কম আয়ের ৬৪টি দেশকে টিকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

কিন্তু দেশের ভিতর চাহিদা বৃদ্ধির ফলে আগামী কয়েক মাস এই টিকার সরবরাহ বাইরের কোনো দেশ বা সংস্থাকে দিতে পারবে না ভারত। ফলে কোভ্যাক্স কার্যক্রমের অধীনে টিকা কেনা এবং বিতরণে অংশীদার ইউনিসেফ বলেছে, ভারতের এমন সিদ্ধান্তের জন্য তাদের কার্যক্রমে বেশ বড় ব্যাঘাত ঘটবে। এক ইমেইল বার্তায় ইউনিসেফ বলেছে, আমরা জানতে পেরেছি যে, কোভিড-১৯ টিকা নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে সরবরাহে বেশ বিলম্ব হবে। এর ফলে মার্চ এপ্রিলে টিকার যে শিপমেন্ট রপ্তানি লাইসেন্সের অধীনে সরবরাহ দেয়ার কথা ছিল সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই), তা এখন পিছিয়ে গেল। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই টিকার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে কোভ্যাক্স। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা এসআইআই কোনো মন্তব্য করেনি। এখন পর্যন্ত এসআইআই থেকে এস্ট্রাজেনেকার এক কোটি ৭৭ লাখ টিকা পেয়েছে কোভ্যাক্স। আর সব মিলিয়ে ভারত মোট ৬ কোটি ৫ লাখ ডোজ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছে। এসআইআইয়ের সরবরাহ দেয়া টিকার ওপর নির্ভরশীল অনেক দেশ। এই নির্ভরতার ওপর ভিত্তি করে বহু দেশ তাদের নাগরিকদের রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় আনার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে জানেন এমন একটি সূত্র বলেছেন, আসলে কিছু সময়ের জন্য সবকিছুতে পিছুটান দেয়া হয়েছে। রয়টার্সকে এ বিষয়ে যে দুটি সূত্র তথ্য দিয়েছেন তারা নাম প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তার একজন বলেছেন, ভারতে পরিস্থিতি যতক্ষণ স্থিতিশীল না হবে, ততক্ষণ কোনো টিকা রপ্তানি হবে না। ভারতের ভিতরে যখন অসংখ্য মানুষকে এই মুহূর্তে টিকা দিতে হবে তখন সরকার রপ্তানি করার মতো সুযোগ হাতে নেবে না।

এরই মধ্যে ব্রাজিল, বৃটেন, মরক্কো, সৌদি আরবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার শিপমেন্ট বিলম্বিত করেছে এসআইআই। অন্যদিকে সেরামের তৈরি করা ৫০ লাখ ডোজের দ্বিতীয় ব্যাচের টিকা পাওয়ার জন্য নয়া দিল্লির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বৃটেন। অন্যদিকে এই টিকা এবং নোভাভ্যাক্সের ১১০ কোটি ডোজ কেনার জন্য চুক্তি করেছে কোভ্যাক্স কার্যক্রম। এই টিকা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে দেয়ার কথা। ওদিকে ভিয়েতনাম থেকে ইউনিসেফ গত বুধবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, টিকা উৎপাদন ইস্যুতে বলা হয়েছে সব দেশের জন্য টিকা সরবরাহ দেয়া বিলম্বিত হবে। এ বিষয়ে এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে এরই মধ্যে অবহিত করেছে কোভ্যাক্স। তাতে বলা হয়েছে, তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকা/অক্সফোর্ডের টিকা মার্চে প্রত্যাশিত পরিমাণের থেকে কম সরবরাহ পাবেন। বর্তমানে বৈশ্বিক সরবরাহ পরিস্থিতিতে কোম্পানি একটি চ্যালেঞ্জে পড়েছে। ইউনিসেফ বলেছে, কোভ্যাক্সকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, তারা এপ্রিল মে মাসের রপ্তানি বিলম্বিত করবে।

উল্লেখ্য, ভারতে ব্যাপক আকারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভা এ সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- ১লা এপ্রিল থেকে ৪৫ বছরের ওপরে বয়স এমন সবাইকে টিকা দিতে হবে। এ পর্যন্ত সেখানে এক কোটি ১৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে সংক্রমণের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরে স্থান ভারতের। এখন পর্যন্ত ভারতে টিকা দেয়া হয়েছে কমপক্ষে ৫ কোটি ২০ লাখ ডোজ। এর মধ্যে ৪ কোটি ৭০ লাখ ডোজই স্থানীয়ভাবে এসআইআই-এর উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। বাকি কোভ্যাক্সিন টিকা তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক। এখন পর্যন্ত এসআইআই’কে প্রায় ১৪ কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ভারত থেকে যেসব টিকা রপ্তানি হয় তার প্রায় সবটাই সরবরাহ দেয় সেরাম। এখন পর্যন্ত এ বছর একদিনে ভারতে সর্বোচ্চ ৪৭ হাজার ২৬২ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য মিলেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বুধবার একথা বলেছে। তারা আরো বলেছে, দিল্লি, মহারাষ্ট্র এবং অন্যান্য স্থানে করোনার ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে গত বুধবার মহারাষ্ট্রে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৮৫৫ জন। গত বছর করোনা মহামারি শুরুর পর এটাই একদিনে এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা। স্বাস্থ্যবিভাগের মতে, দিল্লিতে তিন মাসের মধ্যে গত বুধবার একদিনে সর্বোচ্চ ১২৫৪ জন মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=267725&cat=2