২৬ মার্চ ২০২১, শুক্রবার, ১১:৫৭

করোনা সংক্রমণ আগের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁই ছুঁই

শনাক্ত ৩৫৮৭ মৃত্যু ৩৪

করোনা সংক্রমণে আগের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁই ছুঁই অবস্থা বাংলাদেশের। ২০২০ সালের ২ জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের। সে দিন এক দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছিল চার হাজার ১৯ জন। এর আগে ১৭ জুন এক দিনে করোনা সংক্রমণ ছিল চার হাজার আটজন। গত তিন দিন থেকে আবারো করোনা সংক্রমণ বেড়েছে অবাক করার মতো। গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৫৮৭ জন। এক দিন আগে ২৪ মার্চ পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হন তিন হাজার ৫৬৭ জন। ২৩ মার্চ শনাক্ত হন তিন হাজার ৫৫৪ জন। ১ মার্চের পর থেকে প্রতি ১০ দিন পরপর সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ বা কাছাকাছি ছিল। ১ মার্চ এক দিনে করোনা শনাক্ত হন ৫৮৫ জন, ১০ মার্চ এক দিনে সংক্রমণ ছিল এক দিনে এক হাজার ১৮ জন, ২০ মার্চ এক দিনে সংক্রমণ ছিল এক হাজার ৮৬৮ জন। কিন্তু ২৩, ২৪ ও ২৫ মার্চ সংক্রমণের সংখ্যা ২০ মার্চের তুলনায় বেড়েছে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। এভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চার হাজারের ঘর অতিক্রম করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা সংক্রমণ এর চেয়ে যেন না বাড়ে সে জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং একই সাথে জনগণকে বেশি করে টিকার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণ কমাতে হলে আরো জোরেশোরে সচেতনতা কর্মসূচি পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কোন পর্যায়ে যেতে পারে বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা (স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান) করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। একই সাথে করোনা সংক্রমণ যেন বৃদ্ধি না পায় সে জন্য জনগণকে সচেতন করে তাদেরকে এর সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলতে হবে।’ তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘যারা করোনার টিকা নিচ্ছেন তাদেরকে ট্রেকিং করতে হবে যেন দেশব্যাপী সমান হারে হার্ড ইমিউনিটি (জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা) অর্জন সম্ভব হয়। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও পরামর্শ।’

এ দিকে করোনার টিকা প্রাপ্তি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষও বেশ উদ্বিগ্ন। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেয়নি। টিকার প্রথম চালানটি ঠিক মতো দিলেও দ্বিতীয় চালানে টিকা পাঠিয়েছে মাত্র ২০ লাখ ডোজ। মার্চের তৃতীয় চালানের ৫০ লাখ ডোজ এখনো আসেনি। এর মধ্যেই ভারত সরকার করোনার টিকা রফতানিতে আবারো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে কেনা ৭০ লাখ এবং ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেয়া ২০ লাখ যোগ করলে বাংলাদেশ ৯০ লাখ টিকা পেয়েছে । আজ ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে উপহার হিসেবে ভারত সরকার আরো ১২ লাখ টিকা দেবে বলে জানা গেছে। সেটি হলে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আসা টিকার পরিমাণ হবে এক কোটি দুই লাখ ডোজ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫৬ জনকে টিকা দিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সরকারের হাতে রয়েছে (উপহারের ১২ লাখ ডোজ বাদ দিয়ে) ৩৯ লাখের কিছু বেশি। যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন আগামী ৭ এপ্রিল থেকে তাদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার সময় হবে।

করোনার টিকার ওপর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদশের মানুষ বেশ উদ্বিগ্ন। কারণ টিকা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকার অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করেছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা: রোবেদ আমিন বলেন, ‘একটা টিকা উপহার হিসেবে আসছে দেখলাম ১২ লাখ। কিন্তু আমাদের যে অরিজিনাল কেনা টিকা যেগুলো ফেব্রুয়ারি মাসেরটা, মার্চ মাসেরটা এগুলো এখন পর্যন্ত আসেনি। যেগুলো আসছে সেগুলো গিফট হিসেবে দেয়া হচ্ছে। শুনেছি শুক্রবার (আজ) সকাল ৮টায় আসবে।’ রোবেদ আমিন কেনা টিকা প্রাপ্তি বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাননি। তবে টিকা রফতানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় স্বাভাবিক পথে টিকা আসবে বলে মনে করেন না ওয়াকিবহাল মহল, যদি বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক পথে বিশেষ উদ্যোগ না নেয়।

এ দিকে করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশে এক দিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জন গত বছরের ৩০ জুন। গতকাল মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জন। যেভাবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে মৃত্যুও বাড়ছে। এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ৫৪ জন ২৬ জুলাই ও ২৬ আগস্ট। করোনা সংক্রমণে এক দিনে দেশে সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচজন। চলতি মার্চের ৩ তারিখ পাঁচজন ছিল সর্বনিম্ন মৃত্যু। এর পর থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর সংখ্যা কেবলই বেড়ে চলেছে। এ পর্যন্ত আট হাজার ৭৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। গতকাল যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এদের ২৫ জন পুরুষ এবং অবশিষ্টরা নারী। মৃতদের ৩৩ জনেরই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রামে মৃত্যু ১, শনাক্ত ২০৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২০৮ জনের। এদের মধ্যে ১৭৪ জন নগরীর ও ৩৪ জন বিভিন্ন উপজেলার। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দঁাঁড়াল ৩৮ হাজার ৫০০ জনে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গত বুধবার কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাব ও চট্টগ্রামের ছয়টি ল্যাবে এক হাজার ৮৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়। এদের মধ্যে ২০৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় মারা গেছেন মোট ৩৮৪ জন। এর মধ্যে ২৮১ জন নগরীর ও ১০৩ জন বিভিন্ন উপজেলার।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/571647