২৫ মার্চ ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:৩৫

করোনার ভয়ঙ্কর হানা

ধরন-ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা

দেশে হঠাৎ দ্রুতই করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগী। আইসিইউতে সিট খালি নেই। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন করোনার নতুন কোনো ধরন এই সংক্রমণ বাড়ার পেছনে কারণ হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য প্রকাশ হয়নি। এ ছাড়া নতুন আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হারও বেড়েছে কিনা এমন কোনো গবেষণাও নেই। এসব কারণে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সর্বত্র।

বৃটেন থেকে নতুন স্ট্রেইন দেশে আমদানির কথা বলেছে আইইডিসিআর।
খবর আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের নতুন ধরনের করোনা প্রবেশের। দেশের গবেষকরাও করোনাভাইরাসের ৩৪টি নতুন ধরনের বার্তা দিয়েছেন। সবমিলে করোনার এসব নতুন ধরন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সংক্রমণের এই উল্কাবেগে দুশ্চিন্তায় মানুষ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এই নিয়ে দেশে বেশি বেশি গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।

দেশে হঠাৎ করে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার পেছনে কী কারণ দেখছেন- জানতে জাইলে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, দেশে দ্রুত সংক্রমণ ফের বেড়ে যাচ্ছে। এতে সন্দেহ হচ্ছে বৃটেনের নতুন স্ট্রেইন আমাদের এখানে ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ বৃটেনে নতুন স্ট্রেইনে তরুণরা বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এই নতুন স্ট্রেইনটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই ভাইরোলজিস্ট পরামর্শ দিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। স্কুল-কলেজ এই মুহূর্তে খোলা যাবে না। তিনি মনে করেন, কোন স্ট্রেইনে আক্রান্ত বাড়ছে তা জানার জন্য দেশে বেশি বেশি গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।

এদিকে, গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া ৩ হাজার ৫৬৭ জনসহ দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মোট শনাক্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ৮ হাজার ৭৬৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯১৫ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ২৭ হাজার ৯০৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ২৭ হাজার ৬৮৩টি এবং নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৭ হাজার ৫০২টি। এ পর্যন্ত দেশে করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬৮৬টি। গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫১ শতাংশ। দেশে বর্তমানে ২২১টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এরমধ্যে আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ১১৮টি পরীক্ষাগারে, জিন-এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ৩০টি পরীক্ষাগারে। আর র‌্যাপিড অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ৭৩টি পরীক্ষাগারে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৫ জনের মধ্যে পুরুষ ১৮ জন এবং নারী ৭ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় পুরুষ মারা গেছেন ৬ হাজার ৬২৫ জন এবং নারী ২ হাজার ১৩৮ জন। শতকরা হিসাবে যা পুরুষ ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং নারী ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মৃত ২৫ জনের মধ্যে বয়স বিবেচনায় দেখা যায়, ৬০ বছরের উপরে ১৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে আছেন ২ জন। বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৫ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে আছেন ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ জন, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগের আছেন ১ জন করে। এরা সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন।

নিবন্ধন সাড়ে ৬৪ লাখ, টিকাগ্রহীতা ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে: সারা দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরুর ৩৮তম দিনে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৭৮ হাজার ৮১৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় নিয়েছেন ৯ হাজার ৪৬২ জন। এ পর্যন্ত দেশে মোট টিকা নিয়েছেন ৫০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯৪ জন এবং নারী ১৯ লাখ ৫৫ জন। টিকা নেয়ার পর সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৯২৩ জনের। অন্যদিকে গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকা নিতে অনলাইনে মোট নিবন্ধন করেছেন ৬৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮৯ জন। গত ২৭শে জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে গণটিকাদান শুরু হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=267605&cat=2