২৫ মার্চ ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:২৪

রাজধানীর হাসপাতাল

৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ শয্যাতেই করোনা রোগী

করোনার সংক্রমণ নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। পরপর দু'দিন সাড়ে তিন হাজারের ওপরে শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউর শয্যার পর এবার সাধারণ শয্যা নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে। রাজধানীর মাত্র কয়েকটি হাসপাতালে সীমিতসংখ্যক সাধারণ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। দেশে গত জুন-জুলাইয়ে করোনার প্রথম ধাপের সর্বোচ্চ সংক্রমণের মধ্যেও সাধারণ শয্যার ওপর এত চাপ পড়েনি। তবে দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণের শুরুতেই কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর অধিকাংশ সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ঢাকার বাইরের চিত্র ভালো, অধিকাংশ শয্যা এখনও ফাঁকা। এ অবস্থায় রাজধানীকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও শয্যা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, এর আগে হাসপাতালে পিপিই, মাস্কের সংকটের পাশাপাশি চিকিৎসাসামগ্রীরও যথেষ্ট সংকট ছিল। সুতরাং এবার তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিতে হবে।

করোনা ঊর্ধ্বমুখীতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও। রাজধানীর পাঁচ সরকারি হাসপাতালকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে তারা। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে করোনা ডেডিকেটেড আরও তিন হাজার শয্যা বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, শয্যা বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংশ্নিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। দ্রুত কীভাবে এই শয্যাসংখ্যা বাড়ানো যায়, সে সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি হাসপাতালের ৭৪ দশমিক ২৫ শতাংশ সাধারণ শয্যায় এবং আইসিইউর ৯৩ দশমিক ২০ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে। আর বেসরকারি হাসপাতালে ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং আইসিইউতে ৭৬ দশমিক ৮২ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে। অর্থাৎ, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ সাধারণ শয্যায় এবং আইসিইউর ৮৩ দশমিক ১২ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি আছে। আর চট্টগ্রামে কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের ৩৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ সাধারণ শয্যায় এবং আইসিইউর ৪৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি আছে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে দেশের অন্য জেলাগুলোর চিত্র এখনও ভালো। এসব জেলার কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর মাত্র ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ সাধারণ শয্যায় এবং আইসিইউর ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি আছে। আর বাকিগুলো ফাঁকা।

এদিকে, করোনায় গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত ও মৃত্যু বেড়েছে। এ সময়ে শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৫৬৭ জন এবং মারা গেছে ২৫ জন। আগের দিন শনাক্ত হয়েছিল তিন হাজার ৫৫৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ১৮ জনের।
সরকারি হাসপাতালের চিত্র :হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে থাকা রোগী ভর্তির তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭৫ শয্যার মধ্যে ১২৩টি, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ১৬৯ শয্যার মধ্যে ৮২টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ৬০ শয্যার মধ্যে ১৯টি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ৯০ শয্যার মধ্যে ৪৬টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিটে ৮৮৩ শয্যার মধ্যে ৫৭৭টি, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৩১০ শয্যার মধ্যে ২৪৫টি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১০০ শয্যার মধ্যে ৭০টি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২৫০ শয্যার মধ্যে ১৯০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩৪ শয্যার মধ্যে ১৪১টিতে রোগী ভর্তি আছে। তবে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ১০টি শয্যাই খালি পড়ে রয়েছে। অর্থাৎ রাজধানীর কভিড-১৯ ডেডিকেটেড ১০ হাসপাতালে ২ হাজার ৩৮১ সাধারণ শয্যার মধ্যে ১ হাজার ৭৬৮টিতে রোগী ভর্তি আছে। খালি আছে ৬১৩টি শয্যা। আইসিইউর ১০৩ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৯৬টিতে।

বেসরকারি হাসপাতালের চিত্র :কভিড-১৯ ডেডিকেটেড ৯ বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১৭০ শয্যার মধ্যে ৫৩টি, আসগর আলী হাসপাতালে ১৬৮ শয্যার মধ্যে ৪০টি, স্কয়ার হাসপাতালে ৬৫ শয্যার মধ্যে ৫৮টি, ইবনে সিনা হাসপাতালে ৪৪ শয্যার মধ্যে ৪২টি, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৮০ শয্যার মধ্যে ৬৮টি, এভার কেয়ার হাসপাতালে ২৮ শয্যার মধ্যে ২৭টি, ইম্পালস হাসপাতালে ২৫০ শয্যার মধ্যে ৯৫টি, এ এম জেড হাসপাতালে ৯১ শয্যার মধ্যে ৭৫টি এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৪৪ শয্যার মধ্যে ৪২টিতে রোগী ভর্তি আছে। অর্থাৎ ৯৪০ সাধারণ শয্যার মধ্যে ৫০০টিতে রোগী ভর্তি আছে। খালি আছে ৪৪০ শয্যা। আইসিইউর ১৬৪ শয্যার মধ্যে ১২৬টিতে রোগী ভর্তি আছে।

চট্টগ্রামের চিত্র :চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি কভিড-১৯ ডেডিকেটেড ৭ হাসপাতালে ৬৮৭ সাধারণ শয্যার মধ্যে ২৬০টিতে রোগী ভর্তি আছে। আইসিইউ ৪৫ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ২২টিতে।

অন্যান্য জেলার অবস্থা :ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে দেশের অন্যান্য জেলায় ৬ হাজার ৪৯২ সাধারণ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৪৬৪টিতে। আইসিইউর ২৩৭ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৭৯টিতে। সব মিলিয়ে সারাদেশে কভিড-১৯ ডেডিকেটেড ১০ হাজার ৫০০ সাধারণ শয্যার বিপরীতে ২ হাজার ৯৯২টিতে রোগী ভর্তি আছে। খালি আছে ৭ হাজার ৫০৮টি। সারাদেশে আইসিইউ ৫৪৯ শয্যার মধ্যে ৩২৩টিতে রোগী ভর্তি আছে।

সারাদেশে গত চব্বিশ ঘণ্টার চিত্র :গত চব্বিশ ঘণ্টার শনাক্ত নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০৮ জনে পৌঁছাল। একই সঙ্গে গত চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে মোট ৮ হাজার ৭৬৩ জনের মৃত্যু হলো। এর বিপরীতে গত চব্বিশ ঘণ্টায় সংক্রমিত আরও ১ হাজার ৯১৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মোট ৫ লাখ ২৭ হাজার ৯০৯ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

দ্রুত জোরালো প্রস্তুতির তাগিদ বিশেষজ্ঞদের :বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের যে বিপর্যস্ত চিত্র প্রকাশ্যে এসেছিল আশা করি এবার তা হবে না। ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে মনে করতে হবে কর্তৃপক্ষ আগের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়নি। দ্রুত শয্যা প্রস্তুত করাসহ আইসিইউ শয্যা বাড়ানো এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুদ রাখা প্রয়োজন। অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। কারণ, নতুন সংক্রমণ বেশি মারাত্মক মনে হচ্ছে। শনাক্ত ব্যক্তিকে দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ছে।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ সমকালকে বলেন, গত জুন-জুলাইয়ে সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময় মাত্র ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফার সংক্রমণের শুরুতেই ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত শয্যায় রোগী ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ পরিস্থিতি মারাত্মক। সুতরাং দ্রুততম সময়ে শয্যা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

https://samakal.com/bangladesh/article/210356886