২৫ মার্চ ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:২০

গ্যাস সংকট নগরজুড়ে দুর্ভোগ

শীত মৌসুমে রাজধানীতে গ্যাস সংকট স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এবার শীত শুরুর মাস খানেক আগেই তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানীজুড়ে। পুরো মৌসুমজুড়ে রাজধানীবাসীর ভোগান্তির অন্ত ছিল না। শীত চলে গেলেও সেই সংকট কাটেনি। এখনো কিছু এলাকায় গ্যাসের চাপ একেবারেই কম। এর মধ্যেই হঠাৎ করে আবারো তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে, মূলত এলএনজি সরবরাহের ঘাটতির কারণে ঢাকার প্রায় সব এলাকাতেই গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের চাপ একেবারেই নেই, আবার কোথাও চাপ এতটা কম যে, তা দিয়ে রান্নার উপায় নেই।

গত সোমবার রাতে আমিনবাজারে রাস্তা মেরামতের কাজ করতে গিয়ে তিতাসের সিটি গেটের গ্যাসের পাইপলাইন ফুটো করে ফেলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রাতে লাইন মেরামতের কাজ শুরু করলে মঙ্গলবার রাত থেকে অল্প অল্প করে গ্যাস আসতে শুরু করে। তবে গতকাল বুধবার সকাল থেকে আবারো গ্যাসের চাপ চলে যায়।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশে এমনিতেই গ্যাসের সংকট রয়েছে। মূলত এলএনজি সরবরাহের ঘাটতির কারণেই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে আমিন বাজারের লাইন মেরামতের কাজও শেষ করা যায়নি। এ কারণে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল নুরুল্লাহ জানান, মেরামতের কাজ মোটামুটি শেষ করায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছিল। তবে এরমধ্যে আবার এলএনজি সংকটে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। এলএনজি সরবরাহে ঘাটতি হলে কিছু করার থাকে না। তাছাড়া গরমের কারণে গ্যাসের চাহিদাও বেড়ে গেছে। তাই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা গড়ে প্রায় ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার তুলনায় আগে থেকে সরবরাহ করা হয় গড়ে ২৯০০ মিলিয়নের মতো। আগের ঘাটতিই ৬০০ মিলিয়নের মতো। অন্যদিকে মঙ্গলবার এলএনজির সরবরাহ ছিল ৬৪০, আর বুধবার তা কমে গিয়ে হয়েছে ৫৭০ মিলিয়ন ঘনফুটে। ফলে ৬০০ মিলিয়ন ঘাটতির সঙ্গে আরো প্রায় ৭০ মিলিয়ন যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তবে আগামী পরশু থেকে সরবরাহ বাড়বে বলে জানায় তিতাস।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায় রাজধানীর ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, বসিলা, রায়েরবাজার, মিরপুর, রামপুরাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সংকটের ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রান্না করতে না পারায় হোটেল ও রেস্তরাঁয় গিয়ে খেতে হচ্ছে। এতে এসব এলাকার বাসিন্দাদের একদিকে যেমন জীবন যাত্রায় বাড়তি ব্যয় মেটাতে হচ্ছে, অন্যদিকে বাইরের খাবার খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়েও পড়ছেন।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ফাতিমা জানান, শীতের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে গিয়ে সারাদিন পর রাতে আসতো। আমি এই এলাকায় নতুন আসছি। বাড়িওয়ালা জানালেন শীত চলে গেলে আর সমস্যা হবে না। কিন্তু গরম শুরু হলেও গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হয়নি। এরমধ্যে মঙ্গলবার থেকে আবারো ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক রাতে গ্যাস আসলেও টিমটিম করেই গ্যাস জ্বলছে। রান্না করা যাচ্ছে না। বাইরে থেকেই খাবার এনে খেতে হচ্ছে। ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা শাওন বলেন, গ্যাস না থাকায় কেরোসিনের চুলা ব্যবহার করছি। সবাই বাইরে গিয়ে খাচ্ছেন। কিন্তু আমার বাইরের খাবার খেলে সমস্যা হয়। তিনি বলেন, রাতে অল্প অল্প আসে সেটা দিয়ে রান্না করা যায় না।

মিরপুর থেকে মুঠোফোনে রানা হুমায়ুন কবির জানান, আগে থেকেই গ্যাসের সমস্যা। আর মঙ্গলবার সারাদিন একেবারেই গ্যাস ছিল না। রাতে অল্প অল্প আসতে ছিল কিন্তু আজ (গতকাল) আবারো চলে গেছে। কখন আসবে কেউ বলতে পারছে না। এ ছাড়া রামপুরা, ভাষানটেক, শ্যামলীসহ আরো কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা একই অভিযোগ জানান।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=267602&cat=2