২৪ মার্চ ২০২১, বুধবার, ১১:০১

রাস্তা খুঁড়তে গ্যাস লাইনে ফুটো, দিনভর ভোগান্তি

রাজধানীবাসীর জন্য মঙ্গলবারের সকালটা বেশ ভোগান্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল। ঘুম থেকে জেগে নগরবাসী হঠাৎই অবর্ণনীয় সংকটের সম্মুখীন হয়। চুলা জ্বালাতে গিয়ে দেখে লাইনে গ্যাস নেই, থাকলেও এতো কম যে চুলা জ্বলে না। ফলে বাসি খাবার খেয়ে বা না খেয়েই শুরু হয় ঢাকাবাসীর ব্যস্ত জীবন। বাসায় রান্না না হওয়ার চাপ গিয়ে পড়ে মহল্লার রেস্টুরেন্টগুলোতে।

রাস্তা সংস্কার কাজ করতে গিয়ে লাইন ফুটো হওয়ায় দিনভর ঢাকার একটা বড় অংশজুড়ে গ্যাস সংকট ছিল। সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাফিলতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

একজন গণমাধ্যমকর্মী ফেসবুকে লেখেন- 'সকাল থেকে আমাদের বাসায় (পান্থপথ) গ্যাস নেই। হাজারীবাগ থেকে ছোট বোন ফোন করে বলল তার বাসায় গ্যাস নেই। আমার বাসায় আসবে লাঞ্চ করতে। আমার স্ত্রী বললেন, গ্যাস নেই। কমলাপুরে আরেক বোনের বাসায় ফোন করে জানা গেল, তাদের বাসায়ও গ্যাস নেই। আজিমপুরে বড়বোনের বাসায়ও নেই।' সেই স্ট্যাটাসের নিচে কমেন্ট এসেছে খিলগাঁও, গোড়ান, মিরপুর, আদাবর, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, আগারগাঁওয়ে গ্যাস নেই। অর্থাৎ গ্যাসের ভোগান্তি ছিল প্রায় ঢাকাজুড়েই।

ঢাকায় গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ সকালে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ আমিনবাজারে রাস্তার উন্নয়ন কাজ করার সময় তিতাস গ্যাসের উচ্চচাপ গ্যাসলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, মিরপুর, গ্রিনরোড এলাকাসহ ঢাকা শহরের অন্যান্য এলাকায় বিকেল ৬টা পর্যন্ত গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করবে। লিকেজ মেরামত কাজ সম্পন্ন হলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। তবে রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অনেক স্থানেই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসছিল।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল এম নুরুল্লাহ মঙ্গলবার সকালে সমকালকে জানান, সোমবার রাতে রাজধানীর আমিনবাজারে তাদের একটি ফিডার লাইন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাস্তা সংস্কার কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডেমরা লাইন দিয়ে সরবরাহ বাড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার গ্যাসের চাপ বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, আমিনবাজারে সালেহপুর সেতুর পাশে নতুন সেতুর পাইলিংয়ের সময় পাইপলাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিতাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভিভিআইপি চলাচলের জন্য দুপুর পর্যন্ত মেরামত কাজ বন্ধ ছিল। এ জন্য লিকেজ সারাতে বিলম্ব হচ্ছে।

রাজধানীর ধানমন্ডির শঙ্কর এলাকার বাসিন্দা ফাইজা আনাম বলেন, সকাল ৯টায় অফিসের জন্য বের হতে হয়। তাই আগেভাগে উঠে দিনের রান্নার কাজ সেরে ফেলতে হয়। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে উঠেই দেখি চুলা জ্বলছে না। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও গ্যাস না আসায় রাতের খাবার খেয়েই আমরা স্বামী-স্ত্রী অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ি। দুপুরে বাসায় বাচ্চার জন্য হোটেল থেকে খাবার আনতে বলি গৃহকর্মীকে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে কিন্তু তা গ্রাহকদের দ্রুত জানানো উচিত। তাহলে ভোগান্তি কম হয়।

এদিকে বাসাবাড়িতে রান্না না হওয়ার চাপ গিয়ে পড়েছে মহল্লার হোটেলগুলোতে। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেকেই হোটেল থেকে খাবার কিনছেন। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছেন। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতেও বেচাকেনার ধুম পড়ে গেছে। অনলাইনে খাবার সরবরাহের অ্যাপগুলোতেও দিনভর অর্ডারের জ্যাম লেগেছিল।

দুপুরে কাঁঠালবাগান এলাকায় কথা হয় মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, গ্যাস না থাকায় বাসায় রান্না হয়নি। তাই হোটেল থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি কিনেছেন পরিবারের সবার জন্য। ধানমন্ডির স্টার হোটেলে গিয়ে দেখা যায় কোনো টেবিল ফাঁকা নেই। অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন কখন টেবিল ফাঁকা হবে।

লালমাটিয়া থেকে আসা আসলাম জানালেন, বাসায় রান্না না হওয়ায় পরিবার নিয়ে হোটেলে লাঞ্চ করতে এসেছেন। গোপীবাগের আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউসের কর্মী রাসেল জানালেন, সকাল থেকেই তাদের বিক্রি অন্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। দুপুর ১২টার মধ্যেই তিন ডেক (বড় পাতিল) বিরিয়ানি বিক্রি শেষ। অন্য দিন যেখানে এই সময়ে এক ডেক বিক্রি হতো না।

অভিযোগের তীর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দিকে: তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল্লাহ অভিযোগ করেন, রাস্তা খোঁড়ার বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর তাদের অবহিত করেনি। নিয়ম হলো এ ধরনের কাজের আগে তিতাসকে জানাতে হবে। ওই স্থানে পাইপলাইন আছে কিনা সেই ম্যাপ সংগ্রহ করতে হবে। এর কোনোটাই করা হয়নি। রাতে দুর্ঘটনা ঘটার পর একটা এসএমএস দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে।

https://samakal.com/capital/article/210356788