২৪ মার্চ ২০২১, বুধবার, ১০:৫৭

বর্জ্যে ম্লান সৌন্দর্য

খিলগাঁও-মৌচাক ফ্লাইওভার

কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজধানীতে তৈরি করা ফ্লাইওভারগুলো যানজট নিরসনের পাশাপাশি ঢের বেশি ভূমিকা রাখছে সৌন্দর্য্যওে। কিন্তু সব কিছুই যেন ম্লান হচ্ছে নিচে থাকা বর্জ্যরে স্তূপের কারণে।

রাজধানীর খিলগাঁও-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে হেঁটে বা রিকশায় যাওয়া খুবই কষ্টকর। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ময়লা রাখার কারণে দুর্গন্ধে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় ওই দু’টি রাস্তায় চলাচলের সময়। একাধিকবার সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ আশপাশের বাসিন্দা এবং দোকানদারদের।

এছাড়া সরেজমিন খিলগাঁও-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্থানীয় কার্যালয়, ময়লা রাখার স্থান, ছিন্নমূলের অস্থায়ী নিবাস, অস্থায়ী ভ্যানস্ট্যান্ড, অস্থায়ী দোকান ও লেগুনাস্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য চলাচল বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে এ অঞ্চলের পরিবেশ যেমন অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ছে, তেমনি সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। সিটি করপোরেশন ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখলমুক্তের ঘোষণা দিয়েও এখনও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি। পথচারী থেকে স্থানীয় লোকজন সবাই এমন পরিস্থিতিতে বিরক্তি প্রকাশ করছেন।

গত সোমবার ফ্লাইওভারের নিচে সরেজমিনে দেখা যায়, মৌচাক এবং মালিবাগ রেলগেটের মাঝের একটি বড় অংশজুড়ে রাখা হয়েছে আবর্জনার কন্টেইনার। আশপাশের এলাকার বাসা-বাড়ির বর্জ্য এখানে এনে জমা করা হচ্ছে। আশপাশের দোকানিরা বলছেন এখানকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ছে।
গত সোমবার দুপুর ১টায় ৮০ মালিবাগ ডিআইটি রোডস্থ নিউ দাউদ টায়ার ও ব্যাটারীর মালিক টিটু দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে বলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। মালিবাগ ও মৌচাকসহ আশপাশ এলাকার সব ময়না এখানে এনে ফেলা হয়। দুর্গন্ধ এত বেশি যে গাড়ি নিয়ে লোকজন আসলেও গন্ধের কারণে দ্রæত চলে যায়। এমনকি রাতে বাসায় ফেরার পর জামা-কাপড়ও দুর্গন্ধ করে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে পথচারী নুরুল হক বলেন, সুন্দর একটি সড়কে ময়লার ভাগাড় বানানো হয়েছে। এ পথে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল চেপে যেতে হয়। ফ্লাইওভারের নিচে যেখানে সৌন্দর্যবর্ধন করার কথা, সেখানে গৃহস্থালির বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দুর্গন্ধে এখানে টেকা যায় না। আবর্জনার কন্টেইনারের পাশেই দেখা গেল পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য করা হয়েছে একটি অস্থায়ী কার্যালয়, থাকার অস্থায়ী একটি ঘরও রয়েছে সেখানে। তার ঠিক পাশেই ভ্যানস্ট্যান্ড, ছিন্নমুলরা অস্থায়ীভাবে থাকার জন্য জিনিসপত্র রেখে বেশ কয়েকটি স্থান দখলে রেখেছেন।
আরেকটু এগিয়ে খিলগাঁও অংশে ফ্লাইওভারের নিচে আরও একটি বর্জ্য রাখার স্থান দেখা গেল। পাশেই বেশ কিছু জায়গাজুড়ে মোটরসাইকেল পার্কিং করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, একেবারে বাণিজ্যিকভাবে একটি লেগুনাস্ট্যান্ডও পরিচালিত হচ্ছে এখানে।

স্থানীয় একটি মার্কেটের দোকানি ইদ্রিস আলী বলেন, ফ্লাইওভারের নিচের পরিবেশ খুবই খারাপ। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে টেকা যায় না এখানে। প্রায় পুরো জায়গাটাই দখলে রয়েছে। রাতে মাদকসেবীদের আড্ডা হয় এখানে। সিটি করপোরেশনের চোখের সামনেই এমন হচ্ছে। তবুও তারা কেন নিশ্চুপ, বুঝতে পারি না।
সোমবার দুপুর ১২টায় খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচের ফার্নিচার কর্মচারী রিমন (১৮) দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা সকাল ৯টার মধ্যে দোকান শুরু করি এবং রাত ৮টায় বন্ধ করি। এই ১০ ঘণ্টা মারাত্মক দুগন্ধের মধ্যে কাজ করতে হয়। অনেক সময় কাস্টমার এসে দুর্গন্ধের জন্য চলে যায়।
একই সময়ে তিলপাপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান (৪৭) দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা যারা এই এলাকায় ব্যবসা করি আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই। চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে হয়। কাউকে বলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এক কথায় আমরা অসহায়ের মতো এখানে ব্যবসা করছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচের অংশ পরিদর্শনে আসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। মেয়র মগবাজার চৌরাস্তা ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং নানা দিকনির্দেশনা দেন।

সেসময় মেয়র তাপস বলেন, ফ্লাইওভারের নিচের জায়গাগুলো ব্যাপকভাবে দখল অবস্থায় আছে। অব্যবস্থাপনা আছে, ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। আমরা সেগুলো পর্যায়ক্রমে দখলমুক্ত করব। যাতে করে যান চলাচল করতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা করব। পাশাপাশি খোলামেলা পরিবেশও যাতে থাকে, সে ব্যবস্থাও আমরা করব।
ফ্লাইওভারের নিচের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়র নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা শিগগির ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখলমুক্ত করব এবং সেসব স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করব। এ বিষয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, এরপরই আমরা মাঠে নামব। এ ব্যাপারে একাধিকবার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহাবুবের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

https://www.dailyinqilab.com/article/367806