২৪ মার্চ ২০২১, বুধবার, ১০:২৫

করোনাকালীন জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা

ইবনে নূরুল হুদা : কোভিড-১৯ শুধু আমাদের দেশ নয় বরং গোটা বিশ্বকেই বিপর্যস্ত করেছে। এ পর্যন্ত সারা বিশে^ প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ২৭ লাখ। আমাদের দেশেও এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণহানিও প্রায় ৯ হাজারের মত। সম্প্রতি আবারও সারা বিশে^ সংক্রমণ হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।

আমাদের দেশে প্রথম করোনা চিহ্নিত হয়েছিলো গত বছরের ৮ মার্চ। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিলো। মূলত, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি হয় এবং ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কথা ঘোষণা করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪ জানুয়ারি থেকেই দেশের বিমানবন্দরসহ সব স্থল ও নৌবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করে দেয়।

আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান এমনিতে সন্তোষজনক নয়। আর করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানোর আবশ্যকতা দেখা দিলেও এক্ষেত্রে আমরা অতীত বৃত্তেই রয়ে গেছি। এজন্য আমাদের দেশের লাগামহীন দুর্নীতিকেই দায়ী বলে মনে করা হয়। কারণ, দুর্যোগকালেও এই খাতকে লুটপাট ও দুর্নীতিমুক্ত করা যায়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি, ওষুধ সরবরাহসহ ১১টি খাতে দুর্নীতি এখন ওপেনসিক্রেট। সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলা হলেও বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি। সঙ্গত কারণেই দেশের স্বাস্থ্যখাতকে স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈরাজ্যমুক্ত হয়নি।

মূলত, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে রাষ্ট্রের সকল সেক্টরেই পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। মধ্যখাতে করোনা সংক্রমণ কিছুটা হ্রাস পেলেও এখন তা আবার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বিষয়টিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলেই মনে করা হচ্ছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে মানুষ যখন নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কায় তখন এক শ্রেণির মানুষ নিজেদের আখের গোছানোর মোক্ষম সুযোগ হিসেবে এই সময়কে বেছে নিয়েছে। এসব সুবিধাবাদীরা নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্বাস্থ্যখাতের হোমরা-চোমরাদের বিরুদ্ধে অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে ব্যাপকভাবে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকেই সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি ঘটেছে। সময়মত সঠিক ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও সীমিত পর্যায়ে রাখা সম্ভব ছিল বলে মনে করেন স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা। পরীক্ষার হারও মোটেই সন্তোষজনক ছিল না বা এখনও নয়। বিশেষ উদ্দেশ্যে সংখ্যা কম দেখানোর কারণে সঠিক চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে শুরু থেকেই। অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত হওয়ায় মৃত্যুর হারও ছিল অনেক বেশি। বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ ও ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ শয্যার সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। ঢাকার বাইরেও মহানগর, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড এখনও সন্তোষজনক নয়। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর থেকে ১ বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার হাসপাতলগুলোতে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে সামগ্রিকভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল খুবই ভঙ্গুর। সংশ্লিষ্টদের চরম ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, উদাসীনতা, দুর্নীতি এবং জনজীবনকে গুরুত্ব না দেয়ায় এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে অভিজ্ঞমহল। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্টবিভাগগুলো কথামালার ফুলঝুড়ির মাধ্যমে নিজেদের দায় শেষ করার চেষ্টা করেছেন।

দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর এক বছর হয়ে এসেছে। ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে নাজুক চিত্র বেরিয়ে এসেছিলো তার কতটা পরিবর্তন হয়েছে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। করোনা চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনায় কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও যথাযথ উপকরণের অভাব, স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ, হাসপাতালে সেবার অভাব, জরুরি সেবা নিশ্চিতে ব্যাপক দুর্বলতার পাশাপাশি একের পর এক দুর্নীতির খবরও গত এক বছরে মূলত সরকারি স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশার প্রতিই অঙ্গলি নির্দেশ করে। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেশের স্বাস্থ্যখাতের এমন নেতিবাচক দিকই উঠে এসেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমতও গ্রহণ করা হয়েছে।

বিবিসিকে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই এক বছরে কোভিড-১৯ সেবা বাড়লেও সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কাঠামোগত উন্নয়ন খুব একটা হয়নি বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবনতিই ঘটেছে। এটা ঠিক যে এখন ২০ হাজারের ওপর টেস্ট হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখন রোগীর সংখ্যাও কম কিন্তু এটি যদি কোনো কারণে বেড়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয় তাহলে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সরকারের কোন আগাম প্রস্তুতি নেই বলে অভিযোগ করা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বক্তব্য হলো, করোনা ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মীদের অভিজ্ঞতা বেড়েছে কিন্তু করোনাকে শিক্ষা হিসেবে নিয়ে সার্বিক স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এমনকি করোনার ক্ষেত্রেও জেলা উপজেলায় বরাদ্দ, স্বেচ্ছাসেবীদের অর্থ দেয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঙ্কট তীব্রতর হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যবিভাগের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। আর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারের ক্ষেত্রে অবস্থার উন্নতি হয়নি বরং অবনতিই হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছরের মার্চ মাসে সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার আনুপাতিক হারে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশ দেয়া হয় এবং ৪ মার্চ সমন্বিত করোনা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়। এর সাত দিন পর ৮ মার্চ দেশের প্রথম করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের পর তা দ্রুত নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুরের শিবচর ও ঢাকার মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্য অনুযায়ী শুরুতে আইইডিসিআর ছাড়া দেশে করোনা পরীক্ষার জন্য আর কোথাও আরটি পিসিআর ল্যাবরেটরি ছিলো না। ১৮ই মার্চ মাত্র দশটি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিলো আর তাতে পজিটিভ হয়েছিলেন চারজন। পরদিন ১৯ মার্চ স্বাস্থ্যবিভাগ নিয়মিত ব্রিফিং-এ প্রথম কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানায়। ওই দিনই জানানো হয়েছিলো যে নতুন করে ১৬টি আরটি পিসিআর মেশিন ক্রয় করার প্রক্রিয়া চলছে যার মধ্যে সাতটি দ্রুত পাওয়া যাবে।

এছাড়া চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৬ হাজার সেট পিপিই মজুত আছে এবং এর আগে আরো প্রায় সাত হাজার পিপিই হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছিলো বলে জানানো হয়েছিলো। ওদিকে গত বছর মার্চে সরকারি হাসপাতালে ৫০৮টি আইসিইউ শয্যা ও বেসরকারি হাসপাতালে ৭৩৭টি আইসিইউ শয্যা ছিলো এবং ভেন্টিলেটর ছিলো ১৬৪টি। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই সময় দেশে সরকারি হাসপাতালে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ছিলো ৫১ হাজার ৩১৬টি। আর বেসরকারি হাসপাতাল ছিলো ৫ হাজার ৫৫টি। যেখানে মোট শয্যার সংখ্যা ছিলো ৯০ হাজার ৫৮৭টি।

সে সময় ঢাকায় আইসোলেশন শয্যা ছিলো ১ হাজার ৫০টি। ঢাকা মহানগরীর বাইরে ঢাকার অন্যান্য জেলায় আইসোলেশন বিছানার সংখ্যা ২২৭, চট্টগ্রামে ৪৪১, রাজশাহীতে ৫৫৮, বরিশালে ৪২৯, রংপুরে ৫২৫, সিলেটে ৬৬৪, ময়মনসিংহ ৯০, খুলনায় ৫৩১। তখন সরকারি স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ছিলো ২৫ হাজার ৬১৫ জন। আর চিকিৎসক, সেবিকা ও নানা পর্যায়ের হাসপাতাল কর্মী মিলে মোট জনবল কর্মরত রয়েছেন ৭৮ হাজার ৩০০ জন। মূলত এরপর থেকে ক্রমাগত নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা বাড়ানোর চেষ্টা চালাতে থাকে স্বাস্থ্যবিভাগ। কিন্তু তা কখনোই পর্যাপ্ত ছিল না বলে অভিযোগ রয়েছে।

১ এপ্রিল ব্রিটিং এ জানানো হয়েছিলো যে, ছয়টি প্রতিষ্ঠানে কোভিড পরীক্ষায় মোট ১৫৭ জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষা হয়েছে। ওই দিন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫০টি পিপিই এবং ২১ হাজার পিসিআর কিটস বিতরণের তথ্য দেয়া হয়। একই সাথে করোনা চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ওই দিন ২০ হাজার ২৪৭ চিকিৎসক নিবন্ধিত হয়েছিল। ১ এপ্রিল ছয়টি প্রতিষ্ঠানে পিসিআর পরীক্ষা হয়েছে আর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিলো আরো ছয়টি প্রতিষ্ঠান। আর প্রথম মৃত্যুর দু’মাস পর ১৮ মে স্বাস্থ্যবিভাগ ৪২টি প্রতিষ্ঠানে ৯ হাজার ৭৮৮টি নমুনা পরীক্ষার খবর দেয়। ওই দিন জানানো হয় যে, প্রায় বিশ লাখ পিপিই বিতরণ করা হয়েছে এবং মজুদ আছে আরো প্রায় চার লাখ। এর দু’মাস পর ১৮ জুলাই মোট ৮০টি পরীক্ষাগারে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় মোট ১০ হাজার ৯২৩টি নমুনা পরীক্ষার কথা জানিয়েছিলো স্বাস্থ্যবিভাগ।

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব মতে, এখন ১৬৩টি কেন্দ্রে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে যার মধ্যে আরটি পিসিআর ল্যাবরেটরি আছে ১১৮টি। তবে এর মধ্যে সরকারি ল্যাব আছে মাত্র ৫১টি। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে সারাদেশে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ৩০৫টি সাধারণ শয্যা ও ৫৫৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। পাশাপাশি এখন দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ১২ হাজার ৭৭৩টি। আর হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে ৭১৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ৬৬০টি। তবে কোভিড ও নন-কোভিড মিলিয়ে এ মুহূর্তে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২৪ হাজার ৭১১টি, আইসিইউ ৬৮৮ এবং ভেন্টিলেটর আছে ৬২০টি।

আর ১১৮টি প্রতিষ্ঠানে আরটি পিসিআর টেস্ট করার তথ্য দেয়া হয়েছে ১৭ মার্চ পর্যন্ত যাতে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৪ হাজার ২৭৫টি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ সময়েরর মধ্যে নতুন করে ২ হাজার চিকিৎসক ও ৪ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এছাড়া সারা দেশে ৫ হাজার ১০০ ডাক্তার ও ১ হাজার ৭০০ নার্সকে করোনা ভাইরাস ব্যবস্থাপনা ও ইনফেকশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮৫৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ১০ লাখ ২৩ হাজার ৪১২টি। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে এ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলে পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই। আবার করোনার বাইরে দেশে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ নানা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে যেতে হয়। এসব হাসপাতালে জরুরি সেবা থেকে শুরু করে সার্বিক অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে নতুন কোন পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা বেড়েছে আবার উপকরণও সহজলভ্য হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত ও সন্তোষজনক ছিল না। মূলত, এই এক বছরে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হয়নি।

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে চলতি মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও সরকার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছে। এমতাবস্থায় চলমান সংক্রমণ যদি ২/৩ গুণ বেড়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মত স্বাস্থ্য অবকাঠামো আমাদের দেশে নেই। এজন্য রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সুবিধা আরো অনেক বাড়ানোর তাগিদ এসেছে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যখাতের পাঁচটি বিভাগে প্রতিরোধমূলক, অবকাঠামো উন্নয়নমূলক, চিকিৎসা, পুনর্বাসন, উপশমমূলক এর সবগুলোতেই উন্নতির দরকার। কিন্তু এখানে রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি গত এক বছরে। দেশের সব হাসপাতালে আইসোলেশন বা যথাযথ জরুরি সেবা সুবিধাই নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি এখনো। জনস্বাস্থ্যে সক্ষমতা বাড়েনি বরং স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দেয়া, মাঠ পর্যায়ে অর্থ বরাদ্দের সঙ্কটে স্বাস্থ্য বিভাগেই রীতিমত হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সরকার পক্ষ দাবি করছে, স্বাস্থ্য খাতে দেশে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার সাথে তার তেমন মিল পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।

সার্বিক দিক বিবেচনায় গত এক বছরে করোনা চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনায় কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও যথাযথ উপকরণের অভাব, স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ, হাসপাতালে সেবার অভাব ও নিম্নমান, জরুরি সেবা নিশ্চিতে ব্যাপক দুর্বলতার পাশাপাশি একের পর এক দুর্নীতির খবরও রয়েছে। ফলে করোনাকালে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান যে মোটেই সন্তোষজনক ছিল না তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এমতাবস্থায় দেশের স্বাস্থ্যখাতকে দুর্নীতি ও অনিয়মমুক্ত করে ঢেলে সাজানোর আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে।

https://dailysangram.com/post/447529