২২ মার্চ ২০২১, সোমবার, ১০:৫৩

চট্টগ্রামের ছয় লেন প্রকল্পের কাজ শেষ

সড়ক আছে বাতি নেই

ঝুঁকি নিয়ে যান ও জনচলাচল * চিঠি চালাচালিতেই ক্ষান্ত চসিক

চট্টগ্রাম মহানগরীর একমাত্র ছয় লেন (বহদ্দারহাট-শিকলবাহা ৮ কিলোমিটার) মহাসড়কটিতে উদ্বোধনের ১৬ মাস পরও লাগানো হয়নি সড়কবাতি। প্রকল্পে সড়কবাতি স্থাপনের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর তা না লাগিয়েই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করেছে। এ অবস্থায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে নগরীতে প্রবেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সড়কবাতি না থাকায় রাতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভুতুড়ে অবস্থায় থাকায় এই সড়কে জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু (কর্ণফুলী সেতু) পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কে সড়কবাতি লাগানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করেই ক্ষান্ত হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকার শতকোটি টাকা খরচ করে ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণ করলেও সড়কবাতি না থাকার কারণে এর সুফল পাচ্ছে না নগর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের কয়েক লাখ মানুষ। নগরীর প্রবেশপথ হিসেবে চিহ্নিত বহদ্দারহাট থেকে শিকলবাহা পর্যন্ত ছয় লেন সড়কটি ব্যবহার করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আট উপজেলার মানুষ চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। এছাড়া বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার বাসিন্দারা এ মহাসড়ক ব্যবহার করে থাকেন।

সওজ সূত্র জানায়, শাহ আমানত সেতুর উভয় পাশে ৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক তৈরির জন্য ২৭০ কোটি টাকার সংশোধিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ১০৭ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেয় কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট বা কেএফএইডি। অবশিষ্ট ১৬৩ কোটি টাকা জিওবি ফান্ড থেকে অর্থায়ন করা হয়। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় শিকলবাহা ক্রসিং থেকে মইজ্যারটেক পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত চার লেন এবং নগর অংশে নতুন ব্রিজ গোলচত্বর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ৬ লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ শেষ করে গত ৮ জানুয়ারি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়।

সড়ক ও জনপদ চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তারা জানান, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতাধীন সেতুর উভয়পাশে ৮ কিলোমিটার নৈশকালীন নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে যথাযথ আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনের সংস্থান ছিল। পরে প্রকল্প থেকে লাইটিং বা আলোকসজ্জার বিষয়টি প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় সড়কটির লাইটিং (লাইট, তার ও লাইটপোস্ট) স্থাপন করবে সিটি করপোরেশন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কান্তি দাশ তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের কাছে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সড়কবাতি অপসারণ করার কারণে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু সংযোগ সড়কটি (বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত) অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। জনস্বার্থে দ্রুত ওই সড়কে আলোকায়নের জন্য মেয়রকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ প্রেক্ষিতে ওই ছয় লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে অন্যান্য কাজের সঙ্গে সড়কবাতি স্থাপনের মাধ্যমে আলোকায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে কিনা তা কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। এর পর সওজ কর্তৃপক্ষ জানায়, আলোচ্য সড়কে আলোকায়নের সংস্থান রাখা হয়েছিল। ডিপেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড সমাপ্তে স্থাপিত লাইটিং অংশ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বরাবরে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানানো হয়।

চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কান্তি দাশ যুগান্তরকে বলেন, ‘সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হলেও সড়কবাতি লাগানো হয়নি। আমরা এ নিয়ে চিঠি চালাচালি করছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে সড়কটিতে সড়কবাতি লাগানোর কাজ শুরু হবে। সড়কবাতি লাগানো হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/404308