২২ মার্চ ২০২১, সোমবার, ১০:৪৯

পরিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই পাউবোর প্রকল্প

পরিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই সাতক্ষীরায় পোল্ডার পুনর্বাসন প্রকল্প প্রস্তাব করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিধি অনুযায়ী ৫০ কোটি টাকার বেশি প্রাক্কলিত ব্যয় সম্পন্ন বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগেই সম্ভাব্যতা যাচাই আবশ্যিক। কিন্তু এক হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়া সত্ত্বেও ওই প্রকল্পের সমীক্ষা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে খোদ পরিকল্পনা কমিশন। কারণ সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতির আইন প্রতিপালন করা হয়নি। পাশাপাশি প্রকল্পের বিভিন্ন খাতের খরচের আকার নিয়েও পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ সহমত পোষণ করতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ খ্যাত গাবুরা ইউনিয়নের ১৫ নম্বর পোল্ডারটি সংস্কার ও উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানকার তিন হাজার ৪৪১ হেক্টর এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে উদ্ভূত ক্ষতির প্রভাব কমিয়ে আনা এবং প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন বাড়তি ফসল উৎপাদনে এক হাজার ২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যানিয়ন্ত্রণের টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খাল পুনঃখনন করা। নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হলো- ৮১ দশমিক ১২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, ১ দশমিক ৬০ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসন, ২১ দশমিক ৮১ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ৭ দশমিক ৮১৯ কিলোমিটার নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ, পাঁচটি রেগুলেটর পুনর্বাসন, ১১টি আরসিসি বক্স ইনলেট এবং ২২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন করা।

এ দিকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার বিষয়ে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, মোট ৫০ কোটি বা অধিক ব্যয়ের প্রকল্পের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করা প্রয়োজন। কিন্তু এই প্রকল্পটি গ্রহণে পরিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই বা সমীক্ষা সম্পাদন করা হয়নি। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার জন্য পানিসম্পদ সেক্টরের অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে বা সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থার দ্বারা হালনাগাদ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা প্রয়োজন।

প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৭ দশমিক ৮২ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসনসহ নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাবদ মোট ৫০৮ কোটি ৬৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে ৬৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। এই কাজে যৌক্তিক ব্যয় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এখানে এই কাজের যৌক্তিকতা এবং ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, এ ক্ষেত্রে হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল স্টাডি এবং ব্যাথেমেট্রিক সার্ভের মাধ্যমে বিস্তারিত ডিজাইনের ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা দরকার।

প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ২২ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন করতে প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রতি মিটারে খরচ হবে সাত হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। ভৌত অবকাঠামো এই খরচ প্রতি মিটারে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করতে বলছে। ১ দশমিক ৬০ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসনে পাঁচ কোটি ৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এখানে প্রতি মিটারে খরচ হবে ৩১ হাজার ৭১৮ টাকা। এই ব্যয়ের পরিমাণ নিয়েও প্রশ্ন কমিশনের। ১১টি আরসিসি বক্স ইনলেট নির্মাণ বাবদ ধরা হয়েছে ২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রতিটির খরচ দুই কোটি ৪৪ লাখ টাকা হবে। আর পাঁচটি রেগুলেটর পুনর্বাসনে ২৭ কোটি ২২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে প্রতিটিতে খরচ হবে পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এই খরচগুলোকে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের জন্য ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।

প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির এক কার্যপত্রে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের উপ-প্রধান এ কে এম আবুল কালাম আজাদ বলছেন, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থ বিভাগ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকূলে প্রাপ্ত মোট সিলিং ছয় হাজার ২৬৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মোট চাহিদা ২০ হাজার ৯২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ফলে চাহিদা ও সিলিংয়ের মধ্যে ব্যবধান হলো ১৪ হাজার ৬৫৯ কোটি এক লাখ টাকা। এই ব্যবধান পূরণ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কিভাবে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির অর্থায়ন নিশ্চিত করবে? এমনই প্রশ্ন তুলে মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।

 

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/570782