২১ মার্চ ২০২১, রবিবার, ১০:৩৪

জনমত না থাকায় আন্দোলন থামাতে ঠুনকো অজুহাতেও মামলা দিচ্ছে আ’লীগ সরকার!

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে বিএনপি। দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামে অনেকগুলো মামলা। রায় হয়েছে, সাজা হয়েছে। কারাগারে ছিলেন, জামিনে মুক্ত হয়ে এখন গৃহ অন্তরীণ। শারীরিকভাবেও অসুস্থ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে। মহাসচিব, স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সারদেশের ৩৫ লক্ষ নেতকার্মীর বিরুদ্ধে রয়েছে লক্ষাধিক মামলা। প্রায় প্রতিটি নেতাকর্মীর দিনের একটি অংশ কাটে আদালত প্রাঙ্গণে। এছাড়া কর্মসূচি পালনেও নানা শর্ত ও বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দলটিকে।

সূত্র মতে, এমনিতেই নেতাকর্মীদের নামে মামলার পাহাড়, তার উপর যোগ হচ্ছে আরও নতুন নতুন মামলা। স্বাভাবিক মামলার পাশাপাশি দায়ের করা হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও। সম্প্রতি বিএনপির চার নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গ্রহণ করলেন আদালত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুসসহ দলের চারজনের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গ্রহণ করেছেন আদালত। রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ (আমলী আদালত বোয়ালিয়া) এ মামলাটি দায়ের করা হয়। সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ছাড়া মামলার অন্য আসামীরা হলেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোসাব্বিরুল ইসলাম মামলার বাদী। তার আইনজীবী হিসেবে মামলাটি আদালতে দাখিল করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সরকার আসলাম। আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন। আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম মামলার বাদীর জবানবন্দীও গ্রহণ করেছেন। তবে আদালত তাৎক্ষণিকভাবে কোন আদেশ দেননি। নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদেশ দেওয়া হবে। মামলা দায়ের করার সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ দলীয় নেতাকর্মীরা আদালতে যান।

উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশ করে বিএনপি। সমাবেশে আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু। এর প্রতিবাদ করে মহানগর আওয়ামী লীগ মিনুকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে বলে। ক্ষমা না চাইলে মামলা করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। আর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মিনুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকেই ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়। আল্টিমেটামের সময় শেষ হওয়ার পর মিনু গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে ক্ষমা না চাওয়ায় গত ৯ মার্চ মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনটি জমা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক সেটি প্রাথমিক তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে পাঠান। তদন্ত শেষে পুলিশ জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন দেয়। এরপর জেলা প্রশাসক মামলার আবেদনটি অনুমতির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয় মামলার অনুমতি দিয়ে আবেদনটি আবার জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্রসহ আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলায় বলা হয়, গত ২ মার্চ রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের সঞ্চালনায় বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএনপির এই চার নেতা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের অসৎ উদ্দেশ্যে নেতাকর্মী, সাংবাদিক, আইনশৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতিতে মিজানুর রহমান মিনু প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘হাসিনা রেডি হও, আজ সন্ধ্যার সময়, কালকে সকাল তোমার নাও হতে পারে, মনে নাই পঁচাত্তর সাল? পচাত্তর সাল মনে নাই?’ এতে আরও বলা হয়, মিনুর এই ঘোষণার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উগ্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। দলটির কিছু নেতাকর্মী সমাবেশের এই বক্তব্য ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করেন। সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ অন্যরাও একইভাবে বক্তব্য দিয়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করেন এবং বে আইনিভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকার উৎখাতের হুমকি দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাসহ নির্বাচিত সরকার উত্থাতের প্রকাশ্য ঘোষণা ও হুমকি দিয়ে তারা রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ করেছেন। যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি বিপদজনক ও হুমকিস্বরূপ। তাই এই মামলা করা হলো।

সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতাই মামলার জালে বন্দি। প্রতিনিয়তই তাদের নামে মামলা হচ্ছে। দলটির চেয়ারপার্সন দুইবছর আগে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে যেদিন কারাগারে যান সেদিনও দলটির নেতাকর্মীর নামে নতুন মামলা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কর্মসূচি পালন নিয়ে পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডাসহ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায়ও নতুন নতুন মামলা হচ্ছে। একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে দায়েরকৃত এসব মামলা নিয়ে দলের হাইকমান্ড দুশ্চিন্তায় থাকলেও এগুলোকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই তারা দেখছেন।

মামলা বিএনপি নেতাকর্মীদের গলার মালা বলে মন্তব্য করেছেন দলটির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, মামলা হচ্ছে আমাদের গলার মালা। বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তারেক রহমানের নামে এই মামলা আমরা ফুলের মালা হিসেবে বরণ করে নিয়েছি। যতদিন বেঁচে থাকব এই মামলা গলার মালা হিসেবে রাখব। যতক্ষণ পর্যন্ত না আওয়ামী লীগের গলায় ফেরত দিতে পারব, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

সূত্র মতে, বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের একটি। বিএনপির নেতৃত্ব সবসময়ই শক্তিশালী ছিল। এখন একটা সংকট নিঃসন্দেহে আছে। দলের প্রধান খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গৃহ অন্তরীণ। তার কারাবাস প্রায় দুই বছরের বেশী হয়ে গেল। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দলের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি বিদেশে আছেন, সেভাবেই দলকে পরিচালনা করছেন। তবে নানা সংকট ও ষড়যন্ত্র মোকবেলা করেও দলটির নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে। সরকারের সমস্ত অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করে চলেছে। বিএনপির প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে লক্ষাধিক মামলা।

এক লাখের উপরে মামলায় ৩৫ লাখ আসামী? এটা কি রাজনৈতিক অভিযোগ না সত্যিই এতো মামলা? এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে রাজনীতি করি না। আমাদের কাছে নথি আছে। কল্পিত বা রাজনৈতিক অভিযোগ নয়। আমাদের কাছে সব তথ্য প্রমাণ আছে। এফআইআরের কপি আছে। এটা ধারণারও বাইরে, একটি মামলায় আছে পাঁচ হাজার আসামী। ঘটনাই ঘটেনি, মামলা করা হয়েছে। পাঁচ হাজার আসামীর মধ্যে নাম দিয়েছে এক থেকে দেড়শ জনের। সবগুলোই গৎ বাঁধা একই ছকে। বাকি সব অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে, সেখানে ধরে ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটু অনুসন্ধান করলেই এগুলো সব আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। যদি দেখতে চান, আমাদের অফিসে এলে সমস্ত এফআইআরের কপি দেখাতে পারব। গণমাধ্যমকর্মীরা আমাদের অফিসে এসে যাচাই করে দেখতে পারেন, সত্য না মিথ্যা বলছি। নিজের মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার নামে ৮৬টি মামলা আছে। তারমধ্যে ৩৫টি মামলা হাইকোর্ট থেকে স্টে করেছে। সেগুলো আবার চালু করতে সরকার চেষ্টা করছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু মামলা স্টে করা আছে। আমাদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে মনগড়া গায়েবি মামলা। সেখানে কোথাও নাশকতা করতে গেছি, কোথাও বোমা মেরেছি, কোথাও মিউনিসিপ্যালিটির ময়লা ফেলার ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বাস পুড়িয়েছি, সচিবালয়ে বোমা মেরেছি এই ধরনের অসংখ্য মামলা আছে। ম্যাডাম যখন গুলশানের কার্যালয়ে বন্দি, তখন তিনি একসঙ্গে পাঁচ জেলায় পেট্টোল বোমা মেরেছেন, এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, অপরাধ বিএনপি নেতারা করেনি। তারা হয়তো মিছিল করেছে। মিছিল করা রাজনীতিতে অপরাধ নয়। তারপর আওয়ামী লীগ ক্যাডার দিয়ে বা এজেন্সি দিয়ে আগুন দিয়ে মামলা দিয়েছে। মামলায় তো আর হুকুমের আসামী বলা হয় না। বলা হয় এক নম্বর আসামী। ম্যাডামের একটা মামলা চলার সময় হাইকোর্টের সামনে মুক্তিযোদ্ধা দলের একটা মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। সেখানে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি, তারা মিছিল ভেঙ্গে দিয়েছে। ওই দিনই সন্ধ্যার সময় হাইকোর্টের সামনে দুটো পুরনো মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়ে মামলা করা হলো, তার এক নম্বর আসামী আমি। এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু জানি, এগুলো সাধারণত এজেন্সির লোকজন পুড়িয়ে দেয়। তারাই পোড়ায়, তারাই মামলা করে আমাদের বিরুদ্ধে। মামলায় আমি এক নম্বর আসামী এবং পরের দিন আমাকে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিতে হয়েছে। যেসময় পোড়ানো হয় সেই সময় আমাদের কোনো নেতাকর্মী সেখানে ছিলেন না। যখন পোড়ানো হয়েছে আমি আমার বাসায় ছিলাম। তারপরও আমি মামলার এক নম্বর আসামী? আমি একা নই, আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির নয় জন আসামী।

সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চার হাজার ৫৫১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অন্তত দুই লাখ ২৩ হাজার জনকে আসামী করা হয়। এছাড়া ২০১৫ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে চলা আন্দোলনেও নেতাদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দেয়া হয়। সর্বশেষ খালেদা জিয়ার রায়ের দিনও সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন মামলা দেয়া হয়। বিগত ওয়ান-ইলেভেন থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগের তিন আমলে সবমিলে সারা দেশে লক্ষাধিক মামলা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। এসব মামলায় নামে ও বেনামে প্রায় ৩৫ লাখের মতো আসামী রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এসব মামলার উদ্দেশ্য এখন স্পষ্ট। বিএনপি যাতে নির্বাচনসহ সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে সেজন্য একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে আমাদের চেয়ারপার্সনকে দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মামলা দেয়া হচ্ছে। হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছেন। সরকার পুরো দেশটাকে একটা কারাগারে পরিণত করেছে।

সূত্র জানায়, মামলার কারণে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। বাধ্য হয়ে তাদের আদালতে সময় দিতে হচ্ছে। পুলিশের ভয়ে এলাকায় থাকতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের পরও বিরোধী রাজনীতিক দলের অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছেন। এটা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ইতিবাচক বা অনুকূল নয়।

জানা গেছে, দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তিন ডজন মামলা রয়েছে। ইতিমধ্যে এক মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আরও একটি মামলার বিচার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও দুই মামলায় দণ্ড দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সারা দেশে শতাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। শতাধিক মামলা নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে ঘুরছেন এমন নেতাকর্মীর সংখ্যাও হবে শতাধিক। যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তারাও ভয়ে আছেন। কারণ বেশির ভাগ মামলায় বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাতনামা আসামী রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদের এসব অজ্ঞাতনামার অজুহাতে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

সূত্র মতে, আন্দোলন হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মারমুখী ভূমিকায় থাকতে বলা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ চলা সমাবেশসহ বিএনপির কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মারমুখী ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। এই কর্মসূচির জন্য ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দুপুরে জমায়েত শুরুর আগেই পুলিশ লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুন খানসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী এতে আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। এঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে শাহবাগ থানার পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজহারে বলা হয়েছে, আসামীরা বেআইনি জনতাবদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোটা, ইটপাটকেলসহ পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান করত হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। মিছিলকারীরা মশাল দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। অবশ্য বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে আন্দোলনকারীদেরকেই লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে পুলিশকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্দোলনে বাধা দেয়ার বিষয়টি হঠাৎ করে নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিরোধী আন্দোলন বা প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনকেই পুলিশের বাধায় পড়তে হয়েছে। কেন সব আন্দোলনেই বাঁধা দিচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী? জানতে চাইলে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলেন, সর্বশেষ দু’টি নির্বাচনে তো জনমতের প্রতিফলন হয়নি, তাই সরকার হয়ত ভয় পাচ্ছে। মনে হয় এর দু'টি কারণ। প্রথমত, সরকার মনে করছে, এই ছোট আন্দোলনগুলো যে কোন সময় বড় আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। তাই বিচ্ছিন্ন এই আন্দোলনগুলোও চলতে দিচ্ছে না। জনমত না থাকায় তাদের তো একটা ভয় আছে। আর দ্বিতীয়ত, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগেই সব করছে সরকারকে খুশি করতে। তারা মনে করছে, এগুলো করে সরকারকে খুশি করতে পারলে তাদের উন্নতি হবে। ব্যক্তিগত উন্নতির আশায় তারা এটা করছে।

https://dailysangram.com/post/447237