২১ মার্চ ২০২১, রবিবার, ১০:৩২

আতঙ্ক ও মিথ্যা প্রচারণা ছড়িয়ে ক্ষমতাসীনরা দেশকে সম্পূর্ণভাবে বিরাজনীতিকরণ করেছে

আতঙ্ক ও মিথ্যা প্রচারণা ছড়িয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া পুরোপুরি শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এই সরকার নি:সন্দেহে একটা জায়গায় সাকসেসফুল হয়েছে যে, ভীতি-ভয় ছড়িয়ে দিয়ে, মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়াতে পুরোপুরি নিয়ে গেছে। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য মন্ত্রী সুনামগঞ্জে যে সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে সেই সম্পর্কে অবলীলায় মিথ্যাচার করে চলেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা বিএনপিকে দেখে, বিএনপিকে ভয় পায়, বিএনপিকে নিয়ে তারা দুঃস্বপ্ন দেখে। এখানেও(সুনামগঞ্জে) তারা চেষ্টা করেছে বিএনপিকে কিভাবে চালানো যায়।

গতকাল দুপুরে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে কেএম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৮৮ সালে কেএম ওবায়দুর রহমান বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। ২০০৭ সালের ২১ মার্চ কেএম ওবায়দুর রহমান মারা যান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া সম্রাটের পরিচালনায় আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আমীরুল ইসলাম আলিম, সাইফুল আলম নিরব, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফখরুল ইসলাম রবিন, শফিকুল ইসলাম মিল্টন এবং প্রয়াত নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান কন্যা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সুনামগঞ্জের ঘটনায় গণমাধ্যমের ভুমিকার প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ দিতে চাই তারা এর প্রকৃত চিত্রটা তুলে ধরেছেন। যেটার শুরুটা করেছে নওগাঁওর সালনায় যুবলীগের যে নেতা তার সঙ্গে ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের কারো হাওড়ের বিষয় নিয়ে সমস্যা ছিলো এবং তারই কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ বলছে যে, এটার সাথে বিএনপি জড়িত আছে এবং অন্যদের কথা বলছে। এটা তাদের মজ্জাগত। যখন তারা ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসনে, যখন তারা ব্যর্থ হচ্ছে জনগণকে নিরাপত্তা দিতে, যখন তারা ব্যর্থ হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ঠিক রাখতে, তখনই তারা এই সমস্ত ঘটনা ঘটায় এবং বিএনপিকে দায়ী করার চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন যে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সব সময় বিনষ্ট হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। আমি এই কথাটা জোর দিয়ে বলতে চাই যে, একটা সার্ভে করুন যে, কতজন হিন্দু সম্প্রদায়ের তাদের সম্পত্তি, তাদের বাড়ি-ঘর দখল করে আছে কারা? সেখানে বিএনপির লোককে কী তারা খুঁজে পাবে? না। বেশিরভাগই দেখবেন আওয়ামী লীগের লোকেরা দখল করে আছে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। অথচ অবলীলায় তারা এই মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।

দলের নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের জন্য আরো সংগঠিত হওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কখনো নিরাশ হয়নি, আমরা হতাশ হয়নি। আমরা নিজেরা সংগঠিত হচ্ছি, আমরা ১০/১৪ বছর ধরে এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা সবচেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছি। আমরা এই মূল্য আরো দেবো। আপনারা জানেন, আমরা এখন যে, সংগঠিত হওয়া শুরু করেছি, এই সংগঠিত যদি আমরা ঠিকমতো হতে পারি তাহলে নিসন্দেহে এই সরকারকে আমরা পরাজিত করতে সক্ষম হবো এবং তাদেরকে সরে যেতে বাধ্য করতে সক্ষম হবো। একটা কথা মনে রাখবেন হতাশাই শেষ কথা নয়, হতাশার পরেই নতুন সূর্যোদয় হবে। আমাদের অবশ্যই সেই সময় আসবে যখন আমরা এদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সমাজ ও জনগণের মালিকানাকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করি।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্যে অনুপ্রেরণার মানুষ। এই সংকটময় সময় কেএম ওবায়দুর রহমান সাহেব নিশ্চয়ই আমাদের সামনে একটা বাতিঘর হয়ে দাঁড়াতে পারেন। তার সময়ে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের গর্বের বিষয় স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করছি। স্বাধীনতা এদেশের সকল মানুষের। মুক্তিযুদ্ধ এই দেশের গুটিকয়ে নয়, সকলেই করেছে। আজকে জনগণ এই স্বাধীনতার ৫০ বছরের উৎসব যদি করতে পারে তাহলে কী দাঁড়ায়? শুধুমাত্র বিদেশীদের এনে আজকে সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে সরকার। দেশের মানুষকে সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে দিচ্ছেন না। এটা সূবর্ণ জয়ন্তী পালন হয় না। জনগণ যদি সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে না পারে সেই সূবর্ণ জয়ন্তী পালন হয় না। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী-এটা জনগণের অনুষ্ঠান। সেই জনগণকে আজকে ঘরে বন্দি রেখে কিছু বিদেশীদের এনে সার্টিফিকেট দিয়েছে। ঠিক যেভাবে এই সরকার গায়ের জোরে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে, ঠিক তেমনি ভাবে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী কায়দায় তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আজকে দেশের অঘোষিত বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা মরহুম শ্রদ্বেয় নেতার স্মরণসভায় শপথ নিতে চাই যে, কেএম ওবায়দুর রহমান বেঁচে থাকলে যে বজ্রকন্ঠে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরকে পরামর্শ দিতেন সেই লক্ষ্যকে ধারণ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষ সকল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে হবে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের অবস্থা তো গোল্লায় যাচ্ছে। মোটা চালের দাম ৫২ টাকা। আর বিদেশ থেকে প্রতিদিন একেকটা ধরে নিয়ে আসছে। আর প্রথম কথা তারা বলছে, বাংলাদেশ যে অগ্রগতির পথে দৌড়াচ্ছে দেখবার মতো। নিজেদের দেশে কথা বলবার মতো মানুষ নাই। বিরোধী দল যদি কথা বলে সেই কথার পাল্টা পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করতে পারবে, পুলিশ দিয়ে পিটাতে পারবে কিন্তু জবাব দিতে পারবে না একটারও। তিনি বলেন, কেবল জিডিপি মানে দেশের অর্থনীতির উন্নতি না। করোনার আগে দরিদ্র লোকের সংখ্যা শতকরা ২১ ভাগ, এখন ৪২ ভাগ। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর মালিকদের সব মিলে প্রথম দিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। দুই বছরের মধ্যে শোধ করে দেবার কথা ছিলো। তারা বলেছে পারবো না। পরে আরো ১০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু শ্রমিক ছাঁটাই প্রতিদিনের ঘটনা। আর কি রকম অত্যাচার চলছে সেটা তো জানেন। এরকম অবস্থা থেকে উত্তরণে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক।

https://dailysangram.com/post/447236