২০ মার্চ ২০২১, শনিবার, ১০:২৪

দেশে করোনা সংক্রমণ

গত বছরের তুলনায় বেড়েছে সাড়ে ৬শ গুণ

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। ওই সময় গড়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ জন রোগী শনাক্ত হতো। চলতি বছরের জানুয়ারিতে করোনা প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও এ মাসে নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বর্তমানে রোগী শনাক্তের হার সাড়ে ৬শ’ গুণ বেশি। সংক্রমণের এই উচ্চ হারকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, ১৯ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসে। একপর্যায়ে তা ৩ শতাংশেরও নিচে নামে। এর মধ্যে সারা দেশে করোনার টিকাদানও শুরু হয়। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকে। ৯ মার্চ শনাক্তের হার আবারও ৫ শতাংশ। সর্বশেষ শুক্রবার দৈনিক শনাক্ত বেড়ে ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এদিন মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৯৯ জন। আর গত বছর ১৯ মার্চ রোগী শনাক্ত হয়েছিল মাত্র ৩ জন। অর্থাৎ গত বছরের এই সময়ের তুলনায় সংক্রমণের হার বেড়েছে ৬৩৩ গুণ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতির অন্যতম কারণ কয়েক প্রকারের করোনাভাইরাসের ভেরিয়েন্ট। প্রথম করোনাভাইরাসের যে ভেরিয়েন্ট সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিল সেটি কোভিড-১৯। এরপর দ্বিতীয় ভেরিয়েন্টের নাম ইউকে ই-১১৭, তৃতীয় ইউকে ই-১৫২৫, চতুর্থ সাউথ আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট ই-১৩৫, পঞ্চম ভেরিয়েন্ট ব্রাজিলিয়ান পি-১। পৃথিবীর সব দেশে সব ভেরিয়েন্ট এখনো বিস্তার লাভ করেনি। যে টিকাগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলো বেশিরভাগ ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করে। কিন্তু কোনো কোনো ভেরিয়েন্টের ব্যাপারে কাজ করে না বা কাজ করে কিনা তা এখনো প্রমাণিত হয়নি।

কোভিড সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সদস্য এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান যুগান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যে দেশে ৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের শরীরে ভাইরাসটির নতুন স্টেইন পাওয়া গেছে। ভাইরাসের এই স্টেইনটি অতিমাত্রায় সংক্রমণশীল। তাই এটাকে ধরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। নতুন শনাক্তদের কন্টাক ট্রেসিং নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি এখন সময় এসেছে পুথিগত কোরেন্টিন পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করা। মনে রাখতে হবে, দেশে করোনা যখন প্রথম সংক্রমণ ঘটায় তখন আমাদের নানা সীমাবদ্ধাত ছিল। প্রথমবারের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়েই নতুন এই ঢেউ মোকাবিলা করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত এক দিনে আরও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৮৯৯ জন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট ৮ হাজার ৬৪২ জনের মৃত্যু হলো। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৮৩৮ জন। বৃহস্পতিবার দেশে ২ হাজার ১৮৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সেই হিসাবে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও পরীক্ষা কমায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার আগের দিনের মতোই ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের সব বিভাগীয় হাসপাতাল এবং রাজধানীর সব হাসপাতাল পরিচালকদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন করে করোনা মেকাবালিায় তাদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তারা যেসব সমস্যার কথা জানিয়েছেন, সেগুলো সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওইসব হাসপাতালে যতগুলো আইসিইউ (ইনটেনিসিভ কেয়ার ইউনিট) শয্যা রয়েছে সেগুলো প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম বলেন, কোভিড পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। মাসদুয়েক একটু শ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। মৃত্যুহার অনেক কম ছিল। এ সপ্তাহের মাঝে পরিস্থিতি পালটে গেছে। আক্ষরিকভাবে রোগীদের বাঁচিয়ে রাখতে আমরা এখন যুদ্ধ করছি এবং হেরে যাচ্ছি। এই পরিবর্তন আমরা আমাদের চোখের সামনে ঘটতে দেখছি। হয়তো আমরা আরেকটি ওয়েভের শুরুর পথে। এই সময়ে রোগীরা দ্রুত খারাপ হচ্ছেন। যেহেতু এখনো কোভিডের কোনো চিকিৎসা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। তাই প্রতিরোধই একমাত্র পথ।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন নতুন ভেরিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর সংক্রমণের হার অনেক বেশি। তবে এটি যে নতুন ভেরিয়েন্টের কারণে হচ্ছে তার সপক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ অধিদপ্তরের হাতে নেই। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। অহেতুক জনসমাবেশে যোগদান থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলো মেনে চলতে পারলে ধীরে ধীরে আবারও করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/403623