২০ মার্চ ২০২১, শনিবার, ১০:২৩

রমজানকে সামনে রেখে আরো বাড়ার আশঙ্কা

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে দিশেহারা মানুষ

এক মাস আগে সয়াবিন তেল কিনেছেন ১১০ টাকায়। সেই তেল এখন দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে লিটারে তেলের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। বাড়ছে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যও। মাছ-গোশত আগে থেকেই বেড়ে আছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব পণ্য। সাধারণ ক্রেতাদের আশঙ্কা সামনে রমজান। এই রমজানকে ঘিরে হয়তো আবার বাড়বে নিত্যপণ্যের দাম। রাজধানীর শ্যামপুরের বাসিন্দা মনির হোসেন জানালেন, নিত্যপণ্যের দাম আবার বাড়তে পারে, একথা মনে উঠতেই আঁতকে উঠতে হয়।

সাব্বির হোসেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ১০ বছর ধরে। জানালেন, করোনার মধ্যে বেতন কমেছে শতকরা ৪০ ভাগ। কোনোভাবে ঢাকায় অবস্থান করে আসছিলেন। ইতোমধ্যে স্বল্প ভাড়ার বাসায় শিফট হয়েছেন। সন্তানদের টিউশনি বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু নিত্যপণ্যের সাথে কোনোভাবেই পেরে উঠছেন না। যেভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম তাতে এখন দিশেহারা। বাড়তি উপার্জনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ইতোমধ্যে সবকিছুরই দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সিদ্দিকুর রহমান নামের ঢাকার গোপীবাগের এক বাসিন্দা জানালেন, দিশেহারা হয়ে উঠছেন। প্রতিদিন যেভাবে পণ্যের দাম বাড়ছে তাতে না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে।

বাজারে পেঁয়াজের দাম সেই ৪৫-৫৫ টাকাই রয়েছে। অথচ পেঁয়াজের এখন ভরা মৌসুম। ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ উঠছে। পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন কেজি ৩৭-৩৮ টাকা। কৃষক পর্যায়ে দাম আরো কম। প্রতি কেজি পেঁয়াজে কম হলেও ৬-৭ টাকা লাভ করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।

টঙ্গির পাইকারি আড়তদার জাহাঙ্গির হোসেন জানান, পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে দামের ব্যবধান অনেক। এতটা তারতম্য হওয়ার কথা না। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে বর্তমানে আলুর কেজি সাড়ে ১২ টাকা থেকে ১৩ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০ টাকা।

বাজারে সবজির দাম এখন বেশ চড়া। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শিম ৫০-৬০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, সজনে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, গাজর ২০-৩০ টাকা, বেগুন ৪০-৪৫ টাকা, টমেটো ২০-২৫ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকায়, বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ২০ টাকা, মিষ্টি কুমার কেজি ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, খিরাই ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, মটরশুঁটি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।

ইন্ডিয়ান ও চায়না রসুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, দেশি রসুন ৭০-৮০ টাকা, দেশি আদা ৬৫-৭০ টাকা এবং চায়না আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় কেজি পাওয়া যাচ্ছে।

চালের বাজার আগের মতোই আছে। সেই যে বেড়েছে দাম আর কমেনি। প্রতি কেজি বিআর-২৮ চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়, মিনিকেট ৬৫ টাকায়, নাজির ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়, স্বর্ণা চাল ৪৮ টাকায়, পোলাওয়ের খোলা চাল ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে একমাত্র ডিমের দামেই স্বস্তিতে আছেন ক্রেতারা। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। কোন কোন ডিম ১৪টি মিলছে ১০০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ১৫০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। মুরগির দামও বেড়েছে। কেজিতে ৫০ টাকা দাম বেড়ে সোনালি মুরগির কেজি এখন ৩৪০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার মুরগির কেজি ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুর গোশত। আর খাসি মিলছে ৮৫০ টাকায়। বকরির গোশত পাওয়া যায় ৭০০-৭৫০ টাকায়।

মাছের দাম বাজার ভেদে এবং মাছের মান ভেদে কমবেশিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে গড়ে মাছের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একাধিক ক্রেতা জানান। নুরে আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, এখন ছোট সাইজের নদীর চিংড়ি কিনতে হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকায় কেজি। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশী মাছের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে গড়ে ৫০ টাকা বেড়েছে। শুধু চাষের মাছই এখন নিম্ন আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা বলে নুরে আলম বলেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/570436