বুধবারের ছবি
১৯ মার্চ ২০২১, শুক্রবার, ৩:১৯

ঢামেকে অগ্নিকাণ্ড: আরো এক রোগীর মৃত্যু

‘আমি নিজেই বেরিয়ে এসেছি’

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তের পর তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউ। অন্যান্য বিভাগের আইসিইউতে জায়গা না থাকায় তৈরি হয়েছে নতুন সংকট। ইতিমধ্যে করোনা ইউনিটের আইসিইউতে থাকা এক রোগীকে তাদের পরিবারের সদস্যরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে পৃষ্ঠা ২ কলাম ১

ভর্তি করেছেন। নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় আইসিইউতে আগুনের ঘটনায় ১০ রোগীকে পুরাতন বার্ন ইউনিটের আইসিইউ, নতুন ভবনের সিসিইউ সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ১৪ রোগীর মধ্যে প্রথমে তিনজন এবং পরবর্তীতে একজন মারা যান। সর্বশেষ মোমেনা বেগম (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে থাকা রোগীদের স্বজনের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। যাদের অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এক রোগীর স্বজন বলেন, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আমাদের রোগীর অবস্থা খারাপ হলে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তার করোনা নেগেটিভ ছিল। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রোগীর স্ত্রী বলেন, ওইদিন সকালে আমার দেবর নাস্তা করে তার ভাইয়ের জন্য স্যুপ নিয়ে আসেন। আইসিইউ’র ভেতরে খাওয়ার নিয়ম নেই। খাবার নিয়ে আমরা বাইরে বেরিয়ে আসি। এ সময় এক ব্যক্তি এসে জানায় আইসিইউতে আগুন লেগেছে। তখন খাবার রেখে রোগীর কাছে চলে যাই। যেহেতু তার জ্ঞান নেই তাই অক্সিজেন না থাকলে তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এ সময় মোট ১৪ জন রোগী সেখানে ছিল। তখন আমি আমার স্বামীকে সবার আগে বের করে নিয়ে আসি। রোগীকে আমরা দুজনে মিলে টেনে বাইরে বের করে আনি। সেখান থেকে আমাদের রোগীকে হৃদরোগ বিভাগের একটি কক্ষে নিয়ে অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা করি।

সরজমিন দেখা গেছে, ঢাকা মেডিকেলের পুরাতন বার্ন ইউনিটের আইসিইউ কক্ষে মোট চারজন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মোহাম্মদ সেলিম (৫২), মনিরুল ইসলাম (৫০), সাহিদা বেগম (৫০), শহিদুল ইসলাম (৫৬) ভর্তি রয়েছেন এখানে। হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডগুলোতে চিকিৎসাধীন আছেন রেখা আক্তার (৩৫), এনামুল হক (৬৫), খন্দকার আব্দুর রশিদ (৬০), শাহিন আলম (৩২), সাহিদা বেগম (৫০), নজরুল ইসলাম (৬০)। করোনা আক্রান্ত মনিরুল ইসলাম বলেন, আগুন লাগার পরে আমি নিজে নিজেই বাইরে বেরিয়ে এসেছি। তখন আমার কাছে কেউ ছিল না। আরেক রোগীর স্বজন বলেন, এখানে সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালোই চলছে। কিন্তু নতুন ভবনের আইসিইউতে থাকাকালীন হাসপাতালের পক্ষ থেকে যে সব ওষুধ দেয়া হতো সেটা এখন ওভাবে আমাদের রোগীরা পাচ্ছে না। নিজেদের কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই এখানে। এদিকে ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির আইসিইউতে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক জানান, ভর্তি ১০ জনের মধ্যে মোমেনা ও খন্দকার আব্দুর রশিদ গত বুধবার থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তাদের মধ্যে মোমেনা বেগম মারা গেছেন। আরেকজনের অবস্থাও বেশি খারাপ। একজন রয়েছেন পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে। বাকিরা এখন স্থিতিশীল রয়েছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক মানবজমিনকে বলেন, ইতিমধ্যে আমরা বিকল্প আইসিইউ ব্যবস্থা চালু করেছি এবং রোগীদেরকে সেখানে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। এখন আমাদের হাসপাতালে যে সকল রোগী ভর্তি রয়েছেন অর্থাৎ নিজস্ব রোগীদের যাদের দরকার তাদেরকে আইসিইউতে স্থানান্তর করছি। ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবন-২ এবং বার্ন ইউনিটের পুরাতন ভবনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছি আমরা। ঢামেকের পুরাতন বার্ন ইউনিটে এখনো মোট ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। যেখানে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের অবস্থা খারাপ তাদেরকে রাখা হতো। এ ছাড়া আগুন লাগার পরপরই ওইদিন আমরা পুরাতন বার্ন ইউনিটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে নতুন করে আরো ১০টি আইসিইউ চালু করেছি। সব রোগীর যেহেতু আইসিইউ প্রয়োজন হয় না। তাই আইসিইউ সমমানের চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ এইচডিইউ ব্যবস্থা চালু করেছি।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=266794&cat=3