১৯ মার্চ ২০২১, শুক্রবার, ৩:১৫

একশ দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত ২১৮৭

করোনা শনাক্তের হার ১০ শতাংশ ছাড়াল

এক বছরে নিল ৮৬২৪ প্রাণ * লকডাউন নিয়ে সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে -স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ফের দুই হাজার ছাড়িয়েছে। শনাক্তের হার পেরিয়ে গেছে ১০ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২১৮৭ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা গত একশ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর এক বছর হলো ১৮ মার্চ। এক বছর পর দেশে মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬২৪।

সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর এক দিনে ২২০২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। এ নিয়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৯ জন।

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১৫৩৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে।

তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫২৩ হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি ২১৯টি ল্যাবে ২০ হাজার ৯২৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার ১৯৪টি নমুনা।

এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৭২টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ১০ লাখ ২৯ হাজার ৩২২টি। ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

দৈনিক শনাক্তের হার সর্বশেষ এর চেয়ে বেশি ছিল গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর। সেদিন পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এরপর কমতে কমতে তা ৩ শতাংশের নিচেও নেমেছিল।

তবে মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শনাক্তের হারও বাড়ছে। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৮ হাজার ৬২৪ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৫২১ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ১০৩ জন নারী।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এক বছরে কোভিড-১৯ সেবা বাড়লেও সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কাঠামোগত উন্নয়ন খুব একটা হয়নি। এটা ঠিক যে এখন ২০ হাজারের ওপর টেস্ট হচ্ছে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো এখন রোগীর সংখ্যাও কম কিন্তু এটি যদি কোনো কারণে বেড়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয় তাহলে তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর হওয়ার আহ্বান : স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘গত ১৫ দিনে অন্তত ২০ লাখ লোক কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটিতে ঘুরেছে। কেউ মাস্ক পরেনি।

মাস্ক ছাড়া বিয়েশাদিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর হতে হবে।’ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটউশনে বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুটস ওমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস বাংলাদেশ আয়োজিত নার্সদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখনো বেড়ানোর সময় হয়নি। আরেকটু ধৈর্য ধরুন। বেঁচে থাকলে সবাই বেড়াতে পারবেন। করোনায় দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১২টি পরামর্শ দিয়েছে।’

এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা চাই দেশের অর্থনীতি ভালো থাকুক। করোনা যাতে বৃদ্ধি না পায়, তা-ও চাই। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে কাজ করতে হবে। টিকা নেবেন। লকডাউন আমরা করতে পারব না। এটা সরকারের সব সংস্থা মিলে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামীতে দেখব কী সিদ্ধান্ত হয়। আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড জোরদার করছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। নইলে ভবিষ্যতে কী দিন অপেক্ষা করছে, তা বলা যাচ্ছে না।

চল্লিশের নিচে ৪ কোটি মানুষকে টিকা দেবে সরকার : স্বাস্থ্যমন্ত্রী অপর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকার ৪০ বছরের নিচেও প্রায় চার কোটি জনগোষ্ঠীকে করোনার টিকা দেওয়ার কথা চিন্তা করছে। এর জন্য আট কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন হবে।

তাই টিকায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে চায় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় করোনা টিকার বাল্ক বা সিড দিয়ে ইনসেপ্টাকে সহায়তা করার চিন্তা করছে সরকার।

সাভারের জিরাবোতে বৃহস্পতিবার দেশে করোনার টিকা তৈরির সক্ষমতা দেখতে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের টিকা প্ল্যান্ট পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আবদুল মুক্তাদির বলেন, করোনা টিকার বাল্ক পেলে দুই সপ্তাহের মধ্যে টিকা তৈরি করতে সক্ষমতা রয়েছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের।

আর তা পাওয়া না গেলেও কাঁচামাল বা সিড পেলেও মাস তিনের মধ্যে দেশেই করোনার টিকা তৈরিতে ইনসেপ্টার সক্ষমতা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/403271/