১৮ মার্চ ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৪:৪৭

ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগে ‘অনিয়ম’

গবেষণা জালিয়াতির দায়ে তিন শিক্ষকের পদাবনতির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আবেদনকারীদের দাবি মেধার ভিত্তিতে না করে পছন্দের ভিত্তিতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পাঁয়তারা চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিয়োগ প্রত্যাশী বলেন, ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিঅ্যান্ডডি কমিটির সভায় কমপক্ষে তিনজনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি; ছয় সদস্যের মধ্যে চার সদস্যের অনুপস্থিতিতে প্রায় ৪০টি আবেদনপত্র বাছাই করা হয়। ফলে প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো এক কর্তাব্যক্তির ইশারায় এসব হচ্ছে। তারা পরিচালকের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগদানের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে দুটি প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। সিন্ডিকেট সভার সুপারিশ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিস গত ২২শে জানুয়ারি জাতীয় দৈনিকে দুটি প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। জমাদানের শেষ তারিখ ছিল ১১ই ফেব্রুয়ারি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মোতাবেক ইনস্টিটিউটের সিঅ্যান্ডডি কমিটির সভার সুপারিশ মোতাবেক পরিচালক শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকেন।
সেইসঙ্গে নির্ধারিত নির্বাচন বোর্ডের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করে বিজ্ঞাপিত পদে নিয়োগ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা আখতার বিজ্ঞাপন-পূর্ব শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত এজেন্ডা দিয়ে গত এক বছরের মধ্যে সিঅ্যান্ডডি কমিটির কোনো সভা আহ্বান করেননি। কমিটির সদস্যদের মতামত নেয়ার কোনো প্রয়োজনবোধ করেননি। প্রভাষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউটে প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ না করে তিনি সিন্ডিকেটের সহায়তায় বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করেন।

নিয়োগপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করেন, সিঅ্যান্ডডি কমিটির সভা ১৪ই ফেব্রুয়ারি আহ্বান করা হলেও ১৫ই ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টায় পত্র মারফত ও ই-মেইলে কমিটির সকলকে জানানো হয়। ১৫ই ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় একাডেমিক কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখনো সিঅ্যান্ডডি কমিটির সদস্যদের পত্র প্রেরণ করা হয়নি বলে জানান কমিটির সদস্যরা। ১৮ই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সিঅ্যান্ডডি কমিটির সভায় ছয় সদস্যের মধ্যে চারজনই অনুপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, ২০১৫ সালে একটি প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া রহমান শিক্ষক নিয়োগে নির্বাচন বোর্ড বসানোর বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তিনবার নিয়োগ সংশ্লিষ্ট নির্বাচন বোর্ড বসার তারিখ দেয়া সত্ত্বেও পরিশেষে তৎকালীন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) প্রভাষকের পদে নিয়োগটি ২০১৭ সালে স্থগিত করেন। সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রশাসনে আসীন বিশেষ কর্তাব্যক্তির হস্তক্ষেপ ছিল বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক তাহমিনা আখতার বলেন, আমাকে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। আমার কথা এখানে তো কোরাম বলে কিছু নেই। কারণ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী এক তৃতীয়াংশ সদস্য নিয়ে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এরপরও যদি কোরামের কথা বলা হয় আমার ছয় সদস্যের মধ্যে দুইজন তো ছিলই। আর সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত হলে এডভারটাইজমেন্ট করা যায়। সেখানে সিঅ্যান্ডডির প্রয়োজন নেই। তাই আমি বলবো আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেয় করা হচ্ছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=266679&cat=3