১৮ মার্চ ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৪:৪৩

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু

লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ

দ্রুত চূড়ায় ওঠার শঙ্কা

দেশে করোনা সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। ভাইরাসবিদ এবং রোগতত্ত্ববিদরা এটাকে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, বিগত ঢেউয়ের তুলনায় এবারে সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক।

সংক্রমণ রেখা সোজা উপরে উঠতে থাকলে আক্রান্তের সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা ধারণা করাও কঠিন।

চলতি মার্চ থেকে ১৭ দিনে দেশে করোনা সংক্রমণের তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণে ভয়াবহ চিত্র ফুটেছে। দেখা গেছে ২ মার্চ শনাক্ত রোগী ছিল ৫১৫ জন। ওই দিন মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ মার্চ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০১৮ জন, অর্থাৎ দ্বিগুণ। একইভাবে পরের এক সপ্তাহে সংক্রমণের হার আরও বেড়ে তারও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৮৬৫ জনে উন্নীত হয়।

এর আগে ১৫ ও ১৬ মার্চ নতুন আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৭৭৩ এবং ১৭১৯ জন। এ দুদিনেই মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জন করে। ১৪ মার্চ শনাক্ত হন ১১৫৯ জন এবং মৃত্যু হয় ১২ জনের।

এছাড়া ১০, ১১, ১২, ১৩ মার্চ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১০১৮, ১০৫১, ১০৬৬ এবং ১০১৪ জন। বাংলা জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে গত এক দিনে আরও ১৮৬৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। দৈনিক শনাক্ত রোগীর এ সংখ্যা গত ৩ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

এর আগে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়। ওইদিন ১৮৭৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

বুধবার সকাল পর্যন্ত আরও ১৮৬৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৬২৭৫২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬০৮ জন।

এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও রোগতত্ত্ববিদ ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এবারের করোনা সংক্রমণ আগেরবারের চেয়ে বা প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে কিছুটা আলাদা।

দেশে করোনার প্রথম যে ঢেউ শুরু হয়েছিল তা চূড়ায় উঠতে অনেক সময় লেগেছিল। খুব ধীরে ধীরে সংক্রমণের হার উপরে উঠেছিল। অন্যদিকে এবার উঠছে খুব দ্রুত।

২ মার্চ রোগী শানাক্ত হয়েছিল ৫১৫ জন, ১০ মার্চ ১০১৮ এবং ১৭ মার্চ ১৮৬৫ জন। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন মানতে হবে। পাশাপাশি কন্টাক্ট ট্রেসিং নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে বিমানবন্দর ছাড়া কোথাও কোয়ারেন্টিন হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি জনসাধারণের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে। এসব সঠিকভাবে প্রতিপালন না হলে করোনার এবারের ঢেউয়ে সংক্রমণ কতটা চূড়ায় উঠবে সেটা বলা কঠিন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কার্যত বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।

কারণ এর আগে সংক্রমণ একটি পিকে উঠে একেবারে নিচে নেমে এসেছিল। তারপর আবার নতুন করে সংক্রমণের হার উপরে উঠতে শুরু করেছে। তবে এবারের ঢেউয়ের চূড়া কতটা উপরে উঠবে সেটি আরও ২ সপ্তাহ না দেখে বলা যাবে না।

কিন্তু এবার যে সংক্রমণের হার দ্রুত উপরে উঠছে সেটি দৃশ্যমান। তিনি বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট কতগুলো এসেছে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নতুন যেটি এসেছে সেটি অধিক শক্তিশালী।

কারণ ভাইরাসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই এমন যে, টিকা বা যে কোনো উপায়ে এটিকে যত প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হবে এটি ততই শক্তিশালী হিসাবে ফিরে আসার চেষ্টা করবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শনাক্তের হার গত দুদিন ধরে কিছুটা কমছে। আগের দুদিন শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ এবং ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশের পর গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে।

এখন কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই তরুণ, আক্রান্তদের অনেককেই আইসিইউতে ভর্তি করতে হচ্ছে।

গত ২ মাসে আমার কাছে কখনোই আইসিইউ শয্যার জন্য কোনো অনুরোধ আসেনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফোন পাচ্ছি আইসিইউ শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না।

সবাইকে সতর্ক করে মহাপরিচালক বলেন, গেল দুই মাস আমরা স্বস্তিতে ছিলাম, তাই এখন আমরা কোনো কিছু মানছি না। সামনের দিকে আমরা আরও বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছি যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি না মানি।

মহাপরিচালক জানান, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে দেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের সিভিল সার্জন অফিসগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সারা দেশে আইসিইউগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি জোরদার করতে এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/402958