১৫ মার্চ ২০২১, সোমবার, ১০:৫৫

রাজউকে অচলাবস্থা

ফাইলে সই করা বন্ধ : ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরে সিদ্ধান্তকারী কোনো ফাইলে সই করা হচ্ছে না। ফলে রাজউকের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ফাইল চালাচালি বন্ধ গেছে। এর ফলে রাজউকে তৈরি হয়েছে একধরনের অচলাবস্থা।
জানা গেছে, রাজউকে নতুন চেয়ারম্যান ড. হাসান সাঈদ শিকদার যোগদান করার পরপরই সংস্থাটি প্রায় অচল হয়ে আছে। তিনি রাজউকের কর্মকাণ্ড না বোঝার আগে কোনো ধরনের ফাইলে সই করবেন না বলে সবাইকে মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে নিচের দিকে কোনো ফাইলে সই হয়ে উপরে যাচ্ছে না।

রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন যোগদান করা চেয়ারম্যান সব কিছু বুঝবেন এবং ফাইলে সই করা শুরু করবেনÑ এমনটিই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ দিকে ফাইল নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বেকায়দায় পড়েছেন বেসরকারি ডেভেলপার কোম্পানিগুলো এবং ব্যক্তিগতভাবে যারা নির্মাণকাজের অনুমোদনের জন্য ফাইল জমা দিয়েছেন তারা। রাজউকে এসে অনেকের চোখ থেকে পানি পড়ছে। হতাশায় মুষড়ে পড়ছেন। কারণ নির্মাণকাজের অনুমোদনের সাথে ব্যাংকঋণের ব্যাপারটি জড়িয়ে আছে। ব্যাংক লোন অ্যাকাউন্টে চলে আসার পরপরই সুদ হিসাব শুরু হয়ে যায়। এমন অনেকেই আছেন যারা ব্যাংক লোন পেয়ে গেছেন কিন্তু নির্মাণকাজের জন্য রাজউকের অনুমোদন পাচ্ছেন না। রাজউকের অনুমোদন নেয়ার পর বাড়ি নির্মাণের জন্য আরো বেশ কিছু সংস্থার অনুমোদন নিতে হয়। সেসব অনুমোদনের পর সর্বশেষ রাজউকের অনুমোদন পেলেই শুরু করতে পারে নির্মাণকাজ। কিন্তু রাজউকে নকশা অনুমোদন না পাওয়ায় হতাশায় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই। নকশা অনুমোদনের সাথে বেসরকারি ডেভেলপার কোম্পানিগুলোও ঝামেলায় পড়ে গেছে।

ফাইল অনুমোদন বন্ধ করে দেয়ায় শুধু যে সেবা গ্রহীতারা বেকায়দায় পড়েছেন তা নয়, রাজউকের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও বাড়ছে অসন্তোষ। কারণ ফাইল চালাচালির সাথে তাদের প্রাপ্তিযোগের ব্যাপারটিও জড়িত। একটা নকশা অনুমোদন করিয়ে দিতে পারলে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে কিছু অর্থ আসে। ফাইলে সই করা বন্ধ করে দেয়ায় এসব কর্মচারীও বেকায়দায় পড়েছেন। তারা সেবা গ্রহীতাদের পক্ষ থেকে চাপে পড়েছেন আবার নিজের পকেটে অর্থ না আসায় নানা ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নও করতে পারছেন না। ফলে এদের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে।

এ দিকে রাজউক থেকে জানা গেছে, রাজউকের নতুন চেয়ারম্যান ড. সাঈদ হাসান শিকদার রাজউকে অল্প কিছু দিন আগে যোগদান করতে না করতেই তিনি গত ১৪ মার্চ থেকে তিন সপ্তাহের ছুটিতে চলে গেছেন। এ সময়ের মধ্যে কিভাবে দৈনন্দিন কাজ চলবে সে নির্দেশনাও তিনি দিয়ে যাননি। সাধারণত চেয়ারম্যান ছুটিতে গেলে কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়ে যান। কিন্তু তিনি গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে রাজউকের কর্মকর্তারা বলতে পারেননি।

তবে গতকাল রাতের রাজউকের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, শেষ মূহূর্তে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে। কিন্তু রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো অফিস আদেশ দেখতে পাননি। তবে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হেয়ায়েত উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কিন্তু তিনিও প্রজ্ঞাপনের কথা বলতে পারেননি। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজউক অফিস থেকে বিমর্ষ বদনে নিচে নামছিলেন বয়স্ক এক সেবাগ্রহীতা। তার সাথে কয়েকজন পরিচিত নিচে নেমে যাচ্ছিলেন। বিমর্ষ বদনে নেমে আসা লোকটিকে এরা সবাই বোঝাচ্ছিলেন। এদের সবাইকেই দালাল শ্রেণীর লোক বলে মনে হলো। এরা সবাই লোকটিকে বলছিলেন, অল্প কয়েকটি দিন অপেক্ষা করুন চাচা। আপনার ফাইল ঠিক হয়ে যাবে। চেয়ারম্যান স্যার নতুন তো। তিনি ফাইল ঠিকমতো বুঝে ফেললে সই করে দেবেন।

লোকগুলোকে বয়স্ক লোকটি বললেন, তুমি বুঝতে পারছ আমার কী অবস্থা হবে। আমার লোন পাস হয়ে গেছে। আমি সময়মতো কাজ শুরু করতে না পারলে আমার লোনের অবস্থা কী হবে আমি বুঝতে পারি। সর্বত্রই টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। লোনও পাস করিয়েছি টাকার বিনিময়ে। ওই টাকাখোর লোকগুলো আমাকে আরো পেয়ে বসবে সময়মতো কাজ শুরু করতে না পারলে।

বয়স্ক লোকটি তার সাথের লোকগুলোকে বলছিলেন, ধানাই-পানাই বাদ দিয়ে আমার কাজ করে দাও। টাকা যেমন তোমাদের দিয়েছি তেমনি আরো অন্য জায়গায়ও দিয়েছি। কী ঘটনা ঘটেছে তা বলার জন্য লোকটিকে অনুরোধ করার পরও সাংবাদিক পরিচয় জেনে এ প্রতিবেদকের সাথে কোনো কথা বলতে রাজি হননি বয়স্ক ওই ভদ্রলোক। তিনি একটি রিকশা ডেকে তার গন্তব্যে চলে যান।

এ দিকে রাজউকের চেয়ারম্যান ড. সাঈদ হাসান শিকদারের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলে তার অফিসিয়াল ফোনটি বারবার ব্যস্ত পাওয়া গেছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/569418/